পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা দিতে চান? হা-পিত্যেশ করে বসে থাকুন কম্পিউটারের সামনে। পুজোয় দার্জিলিং মেলের টিকিট পাওয়ার মতো! কপালে থাকলে তবেই মিলবে সুযোগ।
পুজোয় দার্জিলিং মেলে চাপতে গেলে টিকিটের লাইনে দাঁড়াতে হয় ঠিক ৯০ দিন আগে। সকাল আটটায় কাউন্টার খোলার সময়ে প্রথম দু’তিন জনের মধ্যে যদি দাঁড়ানো না যায়, তা হলে পলকের মধ্যেই টিকিট শেষ! ভাগ্যে জুটবে ওয়েটিং লিস্টের টিকিট। ঠিক তেমনই পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে গিয়েও দেখা যাচ্ছে, পাঁচ-দশ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে দিনের পুরো কোটা।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ইন্টারনেটে আবেদনপত্র পূরণ করে পাঠাতে হবে ‘অনলাইন’-এ। আবেদনপত্র পেলে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে সাক্ষাতের সময় কবে গিয়ে দেখা করতে হবে অফিসারদের সঙ্গে। এ ছাড়া অন্য কোনও ভাবে কলকাতাবাসীর আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে না। সোম থেকে শুক্র, প্রতি দিন সন্ধ্যা ছ’টায় শুরু হচ্ছে অনলাইন আবেদন নেওয়া। কিন্তু, আবেদনপত্র পূরণ করে কম্পিউটারের মাউসে ক্লিক করতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন অনেকেই। কিছুতেই পাঠানো যাচ্ছে না সেই আবেদনপত্র।
বাগুইআটির বাসিন্দা অতনু নস্কর ২৪ ডিসেম্বর আবেদনপত্র পূরণ করে অনলাইনে ঢুকতে গিয়ে পারেননি। তিনি বলেন, “কয়েক বার চেষ্টা করতেই কম্পিউটার ‘হ্যাং’ করে যাচ্ছে। আধ ঘণ্টা পরে চেষ্টা করলে লাল কালিতে কম্পিউটারে ফুটে উঠছে, ‘কাল সন্ধ্যা ছ’টায় আবার চেষ্টা করুন।’ আমি সাত দিন পরে সাক্ষাতের সময় পেয়েছি।” পাসপোর্ট অফিস সূত্রের খবর, দশ মিনিটের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে জমা নেওয়ার দৈনিক কোটা।
কেন এমন হচ্ছে? পাসপোর্ট দফতর সূত্রের খবর, দিনে পাঁচশোর বেশি আবেদন জমা নেওয়া যাচ্ছে না। অথচ, দফতরের হিসেব অনুযায়ী, প্রতি দিন গড়ে ৭৫০টি আবেদন জমা পড়ার কথা। টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাসপোর্ট তৈরির কাজে নেমেছে বিদেশ মন্ত্রক। ওই কাজে টাটা-র পর্যাপ্ত কর্মী থাকলেও বিদেশ মন্ত্রকের অফিসারের সংখ্যা কম। প্রাথমিক ভাবে আবেদন মঞ্জুর করেন গেজেটেড পদের এই অফিসারেরাই। দশ জন অফিসারের জায়গায় এখন আছেন মাত্র চার জন।
রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার আর শিবকুমারের কথায়, “অবিলম্বে অফিসার পাঠানোর জন্য মন্ত্রককে চিঠি লিখেছি। রাঁচি, ভুবনেশ্বর থেকে গেজেটেড অফিসারদের কলকাতায় পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ওই সব শহরে পাসপোর্টের এত চাহিদা নেই।” শিবকুমারও জানেন, চাইলেই এখন অফিসার পাচ্ছেন না তিনি। সম্প্রতি কলকাতার তিন অফিসারের গেজেটেড পদে উত্তীর্ণ হওয়ার কথা। তখন আরও আড়াইশো আবেদনপত্র জমা নেওয়া যাবে বলে তাঁর আশা।
গত ৩ ডিসেম্বর থেকে নতুন ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। অফিসারদের অভাবে তখন থেকেই প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০টি আবেদন বকেয়া থেকে যাচ্ছে। এক মাসেই সংখ্যাটি চার হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে এর মধ্যেই প্রচুর অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। অনলাইন আবেদন শুধু কলকাতার বাসিন্দাদের জন্যই বাধ্যতামূলক। জেলার বাসিন্দারা কম্পিউটার থেকে আবেদনপত্র নিয়ে জেলাশাসকের দফতরে জমা দিতে পারেন। আর শিবকুমার বলেন, “শহর লাগোয়া হাওড়া এবং দুই ২৪ পরগনা এলাকার বাসিন্দারা যদি সে ভাবে আবেদনপত্র জমা দেন, তাতে আপাতত চাপ কমবে দফতরের।” |