রায়গঞ্জ কলেজে অধ্যক্ষ এবং শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় শুক্রবার প্রতিবাদের ঝড় উঠল উত্তরবঙ্গে। অবরোধ, বিক্ষোভ, ধিক্কার মিছিল এবং স্মারকলিপি প্রদান কিছুই বাদ গেল না। আর ফের অবরোধ রাজনীতির জেরে দুর্ভোগে পড়লেন সেই সাধারণ মানুষই। এমনকি, রায়গঞ্জের ঘটনার প্রতিবাদ, পাল্টা প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমে মারমারিতেও জড়িয়ে পড়ল সিপিএম এবং তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনও। সকলেই ঘটনার দোষীদের সকলের গ্রেফতারের পাশাপাশি অভিযুক্ত তৃণমূল নেতানেত্রীদের গ্রেফতারের দাবি তুলছেন। এ দিন সকালে শিলিগুড়িতে ছাত্র পরিষদ হিলকার্ট রোডের হাসমি চকে পথ অবরোধ করে। ১৫ জন অবরোধকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও মিনিট ১৫ অবরোধে যানজট দেখা দেয়। একই ভাবে এসএফআই তিনবাতি মোড়ে পথ অবরোধ করায় ৩১-ডি জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়। দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। সূর্যসেন কলেজে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে এসএফআই এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জেলা সিপিএম নেতা জীবেশ সরকারের নেতৃত্বে এএসপিকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। জীবেশবাবু বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলছে। শিলিগুড়িতেই ছাত্ররা আক্রান্ত হচ্ছেন। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” ওয়েবকুটার তরফে কর্মবিরতি পালন করে শিলিগুড়ি শহরে মিছিল করা হয়। |
একই ভাবে দোষীদের বিরুদ্ধে শান্তির দাবিতে শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি পাঠিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষিক সমিতির জেলা কমিটি। প্রতিবাদে সামিল হয়েছে সিপিআই (এমএল-লিবারেশন)ও। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষিকা, গবেষকেরা প্রতিবাদ দিবস পালন করেন। রায়গঞ্জের ঘটনায় সরব জলপাইগুড়িও। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও প্রতিবাদে সামিল হন। শহরের আইনজীবী অমিতাভ আইচ বলেন, “কলেজের অধ্যক্ষকে এমন হেনস্থা, ভাবা যায় না। এটা শিক্ষাজগতের কালো দিন।” জলপাইগুড়ির প্রসন্নদেব মহিলা কলেজের শিক্ষক তথা কংগ্রেস নেতা আবদুর রেজ্জাক বলেন, “অধ্যক্ষকে এই ভাবে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনা রাজনীতিকেই নগ্ন করে দিয়েছে। সরকারের অবিলম্বে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” জলপাইগুড়ি শহর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “রায়গঞ্জের ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। বিগত ৩৪ বছরে ধরে আমরা যে বিষয়গুলির প্রতিবাদ করেছি, সেগুলি ফিরে আসতে দেখছি।” বিক্ষোভ, প্রতিবাদে মুখর দক্ষিণ দিনাজপুরও। এদিন ছাত্র পরিষদের পথ অবরোধ, বাম ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভ এবং কলেজ শিক্ষকদের ধিক্কার মিছিলে বালুরঘাট সরগরম হয়ে ওঠে। শহরের শতাধিক শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মিরা শহরে ধিক্কার মিছিল করেন। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে তাঁরা জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। বালুরঘাট কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ বটকৃষ্ণ পাল বলেন, “রায়গঞ্জ কলেজের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত।” এ দিন শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্রপরিষদ কর্মীরা। অবরোধে নাকাল হন সাধারণ বাসিন্দারা। বিকেলে আরএসপির ছাত্র সংগঠন ধিক্কার মিছিল করেন কলেজ মোড় অবরোধ করেন। এসএফআই-র পক্ষ থেকে বালুরঘাট এবং গঙ্গারামপুরে বিক্ষোভ দেখানো হয়। জয়গাঁ ননী ভট্টাচার্য স্মারক মহাবিদ্যালয়, আলিপুদুয়ার কলেজ, বিবেকানন্দ কলেজে কর্মবিরতি পালন করা হয়। আলিপুরদুয়ার কলেজের অধ্যক্ষ সুব্রত পঞ্চানন জানান, কলেজে শিক্ষক শিক্ষিকা ও কর্মীরা কালো ব্যাজ পরেন। ক্লাস বন্ধ থাকলেও কলেজে জরুরি কাজ হয়েছে ঘটনার প্রতিবাদে মালদহের চাঁচলে এক ঘন্টা ধরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল ছাত্রপরিষদ। ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে পথসভা করা হয়। কর্মবরিত করে ধিক্কার দিবস পালন করেন সামসি ও চাঁচল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। কোচবিহারে দুপুরে প্রায় এক ঘন্টা স্টেশন মোড়, গুঞ্জবাড়ি মোড়, বাবুরহাট পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র পরিষদ। এতে দিনের ব্যস্ত সময়ে কোচবিহার থেকে দিনহাটা, তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙা রূটে যান চলাচল ব্যাহত হয়। ভোগান্তি পোহান নিত্যযাত্রীরা। জেলার হলদিবাড়ি, মাথাভাঙ্গা ,দিনহাটাতেও অবরোধর করে ছাত্র পরিষদ। কোচবিহারের বিভিন্ন কলেজে ঘটনার প্রতিবাদে কালো ব্যাজ পরে কর্মবিরতি পালন করেন ওয়েবকুটার সদস্যরা। মালদহে সমস্ত কলেজে কর্মবিরতিরতি করেন কলেজের শিক্ষক,শিক্ষাকর্মীরা। তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষক সংগঠন গৌড়বঙ্গ অধ্যাপক সমিতির সম্পাদক দিলীপ দেবনাথ বলেন, “আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি।” গৌড়বঙ্গ শিক্ষা ও সংস্কৃতি মঞ্চের সম্পাদক নরেশ রায় দোষীদের গ্রেফতারের দাবি তুলছেন। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা কর্মী ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক মৃন্ময় গোস্বামী বলেন, “দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” দুপুরে ফোয়ারা মোড়ে এসএফআই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর পুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। পুরাতন মালদহে অধ্যক্ষের উপর হামলায় পুরাতন মালদহে ও গাজলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে ছাত্র পরিষদ। ইসলামপুরেও ছাত্র পরিষদের পক্ষ ধিক্কার মিছিল করা হয়। |