জন উদ্যোগে জন স্বাস্থ্য প্রকল্পের প্রায়
২ কোটি টাকা খরচ করা যায়নি
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পের প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করতে পারেনি আরামবাগ মহকুমার পঞ্চায়েতগুলি। তিনটি আর্থিক বছরে ওই টাকা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, হাতে গোনা কিছু পঞ্চায়েত ৪০-৪৫ শতাংশ টাকা খরচের হিসেব দিলেও শংসাপত্র দিতে পেরেছে মাত্র ১৫-২০ শতাংশ কাজের। টাকা পড়ে আছে পঞ্চায়েতের কাছেই।
জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের অধীন ‘জন উদ্যোগে জন স্বাস্থ্য’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য, জনগণের সঙ্গে মিলিত প্রচেষ্টায় এলাকার সমস্ত শ্রেণির মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তোলা। প্রতিটি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সংসদ-পিছু এ জন্য বছরে ১০ হাজার টাকা দেয় জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন। ওই টাকায় যে সব কাজ করার কথা, তা হল
১) নলকূপ ও কূপের খোলা চাতাল থাকলে তা মেরামত করা।
২) শৌচাগার নির্মাণ ও তা ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা শিবির করা।
৩) জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে দেওয়াল লিখন।
৪) ছোটখাট পয়ঃপ্রণালী সংস্কার।
৫) গ্রামীণ হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভ্যান রিকশার ব্যবস্থা রাখা।
৬) পানীয় জলের গুণমান পরীক্ষার ব্যবস্থা করা।
৭) মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, টিকাকরণ, সঠিক বয়সে বিবাহ, পুষ্টি প্রভৃতি নিয়ে পাড়াভিত্তিক সচেতনতা শিবির আয়োজন প্রভৃতি।
আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকে এই প্রকল্পটি চালু হয় ২০০৯ সালের শেষের দিকে। টাকা পাঠানো শুরু হয়েছিল ২০১০ সালের এপ্রিল মাস থেকে। কিন্তু কাজ প্রায় কিছুই হয়নি বলা চলে। প্রকল্পের কাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রতিটি সংসদের গ্রামোন্নয়ন সমিতিকে। মাথার উপরে থাকার কথা পঞ্চায়েতের। কথা ছিল, স্থানীয় স্বনির্ভর দলগুলিকেও সামিল করানো হবে। কিন্তু আদপে সে সব কিছুই হয়নি। যার জেরে প্রকল্পের প্রায় ২ কোটি টাকা অব্যবহৃত থেকে গিয়েছে।
গোঘাট ১ ও ২ বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল, অনির্বাণ সোমদের অভিযোগ, অধিকাংশ টাকা খরচ হয়নি এটা বাস্তব। বিধানসভা ভোটের আগে যদি বা কিছু খরচের হিসেব দেখানো হয়েছে, পরবর্তী কালে সে সব কিছুই নেই। গ্রামোন্নয়ন সমিতিগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ সংসদের পঞ্চায়েত সদস্য কিংবা গ্রামোন্নয়ন কমিতির সচিবরা হয় তো গ্রামেই নেই। নয় তো হাল ছেড়ে দিয়েছেন। খানাকুল ২ যুগ্ম বিডিও স্নেহাশিস দত্তের কথায়, “আমাদের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টি পঞ্চায়েত এলাকায় কিছু কাজ হয়েছিল। বর্তমানে মাত্র দু’টি (নতিবপুর ২ এবং জগৎপুর) পঞ্চায়েত কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি সংসদে আবার এই প্রকল্পের তহবিলের টাকা অন্য খাতে খরচ করেছে।” আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁই, পুড়শুড়ার বিডিও সম্রাট মণ্ডলদের আবার বক্তব্য, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে। খানাকুল ১ বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কিছু ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতকে সরাসরি প্রকল্পের কাজ দেখভাল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। গ্রামোন্নয়ন সমিতিগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়াতেই এই পরিস্থিতি বলে মনে করেন তিনি।
প্রকল্পের টাকা নিয়ে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। রাজনৈতিক ডামাডোলে গ্রামোন্নয়ন সমিতিগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়য়ায় বেশ কিছু পঞ্চায়েতের প্রধান কাজটি পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের। কোনও কোনও স্বাস্থ্যকর্মী টাকা নয়ছয় করেছেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি গোঘাট ২ ব্লকের বেঙ্গাই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মী শুক্লা চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা তছরুপের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মানুষ। তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিডিও অনির্বাণ সোম। শুক্লাদেবী অবশ্য দাবি করেছেন, “কোথাও যখন কাজ হচ্ছে না, আমি তো তা-ও চেষ্টা করছি। মিথ্যা অভিযোগ করে নৈতিক ভাবে আমাকে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।”
প্রকল্পের এই হাল নিয়ে হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সৃষ্টিধর সাঁতরা বলেন, “সমস্ত জেলাতেই বেশ কিছু টাকা খরচ করা যায়নি। আরামবাগ মহকুমায় সমস্যা আরও বেশি হওয়ার কারণ, সংসদগুলিতে টাকা তোলার দায়িত্ব যাঁদের (তাঁদের নামেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ে) সেই নির্বাচিত সদস্য এবং গ্রামোন্নয়ন সচিবের দেখাই মেলেনি অধিকাংশ জায়গায়। আবার যে টাকা পঞ্চায়েতেই পড়ে আছে, সেখানেও টাকা তোলার অথরিটি (এ ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত প্রধান) বেশ কিছু জায়গায় নেই। এ দিকে, সরকারি গাইডলাইন অনুযায়ী, নির্বাচিত সদস্য ছাড়া নতুন কমিটিও গড়া যাবে না।” সৃষ্টিধরবাবু অবশ্য একই সঙ্গে বলেন, “কাজের ইচ্ছা থাকলে যে তা করা যায়, সে দৃষ্টান্তও এই মহকুমায় আছে।” প্রকল্পের টাকা সদ্ব্যবহার নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “কোথাও দুর্নীতির নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে, তা নিয়ে তদন্ত হবে।”
রাজনৈতিক উত্তেজনাপ্রবণ আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চায়েতের সামগ্রিক কাজকর্মই দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ গতি পায়নি এখানে। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মতে, ‘জন উদ্যোগে জন স্বাস্থ্য প্রকল্প’ তারই তালিকা বাড়িয়েছে মাত্র!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.