নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
রায়গঞ্জ কলেজের ঘটনার পরে জলপাইগুড়ি জেলার কলেজগুলির ছাত্র রাজনীতির সমীকরণের খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে পুলিশ-প্রশাসন। পাশাপাশি রায়গঞ্জের ঘটনার পরে কলেজগুলির ছাত্র রাজনীতির সর্বশেষ সমীকরণ কী আকার নেয় তার ওপর নজর রাখতে জেলা পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার ১২টি কলেজে একই দিনে নির্বাচন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে কলেজগুলির ছাত্র সংসদের নির্বাচন হবে। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী আলিপুরদুয়ারের দুটি কলেজ, ধুপগুড়ির সুকান্ত কলেজ, মালবাজারের পরিমল মিত্র কলেজ এবং জলপাইগুড়ি শহরের আনন্দচন্দ্র কলেজ ও প্রসন্নদেব মহিলা কলেজকে উত্তেজনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলার ১২টি কলেজের মধ্যে ৮টি কলেজের ছাত্র সংসদই সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের দখলে। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে পরিবর্তনের হাত ধরেই জেলার রাজনৈতিক সমীকরণ পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জেলার সব কলেজেই নির্বাচন ঘিরে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। রায়গঞ্জ কলেজে তৃণমুল ও কংগ্রেস সরকারের দুই শরিক দলের ছাত্র সংগঠনের মধ্যে বিরোধ চূড়ান্ত আকার নেওয়ায় তার প্রভাবও জলপাইগুড়ি জেলায় পড়তে পারে বলে প্রশাসনের কয়েকটি মহল থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলার পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, “একই দিনে জেলার সব কলেজে নির্বাচন হবে। প্রশাসনিক স্তরে এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।” জলপাইগুড়ি শহরের আনন্দচন্দ্র কলেজে প্রতি বছরই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এসএফআই-ছাত্র পরিষদ সর্ংঘষের ঘটনা ঘটে। দু’বছর ধরে কলেজের ছাত্র সংসদ ছাত্র পরিষদের দখলে রয়েছে। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে তৃণমুল ছাত্র পরিষদও ইউনিট খুলেছে কলেজে। তারাও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবে বলে ঘোষণা করেছে। একই পরিস্থিতি শহরের প্রসন্নদেব মহিলা কলেজেও। সেখানেও তৃণমূল নয়া ইউনিট খোলায় প্রতিদ্বন্দিতা ত্রিমুখি। আলিপুরদুয়ার থেকে রাজনীতি করে উঠে আসা ছাত্র পরিষদের এক রাজ্য স্তরের নেতা সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় আলিপুরদুয়ারের দুটি কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে। অন্যদিকে ১৯৭৭ সাল থেকে টানা বামেদের দখলে থাকার পরে পরে গত বিধানসভা নির্বাচনে আলিপুদুয়ার কেন্দ্র বামেদের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। এই সাফল্যকে কলেজ নির্বাচনেও বজায় রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন। শহরের দুটি কলেজের একটিতে ছাত্র পরিষদ অন্যটিতে এসএফআই সংসদে রয়েছে। প্রতি বছরই দুই কলেজের নির্বাচনে হিংসার ঘটনা পরিচিত। বিধানসভা নির্বাচনোত্তর রাজনৈতিক পরিস্থিতে ত্রিমুখি লড়াই জোরদার হবে বলে প্রশাসনিক স্তরেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। মালবাজার, ধূপগুড়ি, ফালকাটা, বীরপাড়া, কামাক্ষাগুড়ির মতো এসএফআইয়ের দখলে থাকা কলেজগুলিতেও রাজ্যে পরিবর্তনের পরে কংগ্রেস ও তৃণমূল দুই দলের ছাত্র সংগঠনই ইউনিট খুলেছে। রাজনৈতিক মহলের খবর বাম জমানায় এসএফআইকে হারাতে যেমন বিরোধী জোট তৈরি হত রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই সম্ভাবনা নেই। সে কারণেই ত্রিমুখি প্রতিদন্দিতার ফল কোনদিকে মোড় নেয় তা নিয়েই উদ্বিগ্ন পুলিশ-প্রশাসন।
|