কাজের চাপ বেড়েছে বহু গুণ। তিনি কাজও চান দ্রুত। অথচ এ সব সামলানোর মতো অফিসারের সংখ্যা বাড়ন্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই ‘বিকল্প’ পথের সন্ধানে নেমেছেন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আইএএসের সংখ্যা বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সমস্যার সুরাহা কোন পথে হতে পারে, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে ‘সূত্র’ও বাতলেছেন। পাশাপাশি প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে অফিসারের চাহিদা মেটাতে ডব্লিউবিসিএস (এগজিকিউটিভ)-দের পদোন্নতি দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। দ্রুত এর উপায় বার করতে রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষকে ‘নোট’-ও পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নতুন সরকারের আমলে রাজ্যে দফতরের
সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬। উপরন্তু রয়েছে ১৮টি জেলা, সরকারি বহু নিগম ও সংস্থা। সাধারণত এ সব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পদে থাকেন কোনও আইএএস। এ দিকে
পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে আইএএস সাকুল্যে ২২১ জন। ডব্লিউবিসিএসের সংখ্যা দু’হাজারের বেশি হলেও বিশেষ
ও যুগ্ম সচিব পদে মাত্র ১৬৩ জন! সুষ্ঠু ভাবে
প্রশাসন চালাতে তাই নাভিশ্বাস উঠেছে সরকারের। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘প্রশাসনের সর্বোচ্চ ও মধ্য স্তরে অফিসারের অভাবে
অনেককেই একাধিক দফতরের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে।’’
বস্তুত প্রশাসনকে আরও সচল করে তোলার তাগিদেই সরকার গঠনের গোড়া থেকে অফিসারের ‘ঘাটতি’ নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি লিখেছেন, ‘এ রাজ্যে অনুমোদিত আইএএসের সংখ্যা ৩১৪। রয়েছেন ২২১ জন। ফলে পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।’ প্রধানমন্ত্রীকে সমাধান-সূত্রও দিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রস্তাব: ২০১৬ পর্যন্ত (এই সরকারের মেয়াদ) ফি বছর বাড়তি ১২ জন আইএএস দিক কেন্দ্র। তা হলে পাঁচ বছরে অতিরিক্ত ৬০ জন আইএএস মিলবে। |
রাজ্য পেতে পারে ৩১৪ জন আইএএস। রয়েছেন ২২১ জন। |
ডব্লিুউবিসিএস (এগজিকিউটিভ) আছেন ২০১৭ জন। |
এর মধ্যে যুগ্মসচিব ১৪৫,
বিশেষ সচিব ১৮ জন। |
কেন্দ্রের কাছে আর্জি: বছরে অতিরিক্ত ১২ জন আইএএস। |
|
কিন্তু তাতেও সমস্যা পুরো মিটবে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে মমতার প্রস্তাব: রাজ্য সিভিল সার্ভিস (এ রাজ্যে ডব্লিউবিসিএস) অফিসারদের পদোন্নতির ‘কোটা’ বাড়ানো হোক। এখন মোট আইএএসের ৩৩.৫% রাজ্য সিভিল সার্ভিস থেকে নেওয়ার কথা। মমতা চান, এটা বাড়িয়ে ৫০% করা হোক। মহাকরণের খবর: চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি কেন্দ্রের পার্সোনেল ও ট্রেনিং মন্ত্রককে দেখতে বলেছেন।
তবে মমতা এখানেই থেমে থাকেননি। মুখ্যসচিবকে নোট দিয়ে ‘বিকল্প’ হিসেবে কয়েকটি দিক নির্দেশ করেছেন। যেমন, এক জন বিসিএসের ১৬ বছর চাকরি হলেই বেতন-কাঠামো উন্নীত করে তাঁকে ওএসডি বা উপসচিব করা, কিংবা বিসিএসদের মধ্য থেকে যুগ্ম ও বিশেষ সচিব পদমর্যাদার অফিসারের সংখ্যা বাড়ানো যায় কিনা, সে সব সম্পর্কে দ্রুত রিপোর্ট পেশ করতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বেশ ক’বছর যাবৎ পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে অফিসার কম থাকলেও ডব্লিউবিসিএসদের নিয়মমাফিক প্রোমোশন দিয়ে সামনের সারিতে তুলে আনা হয়নি বলে অভিযোগ। প্রশাসন-সূত্রের বক্তব্য: সরকারের নীতি নির্ধারণ করেন মন্ত্রীরা। নীতি কার্যকরের পন্থা স্থির করেন আইএএস বা দফতরের সচিবেরা। আর তা রূপায়ণের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব থাকে যুগ্ম সচিবদের উপরে। একটি বড় দফতরে যুগ্ম সচিব থাকা উচিত গড়ে ৮ জন। রয়েছেন সাকুল্যে ৩-৪ জন। প্রায় সব দফতরেই যুগ্ম সচিবের একাধিক পদে লোক নেই বলে আক্ষেপ করেছেন বেশ কিছু অফিসার।
পাশাপাশি আইএএসদের একাধিক কাজের দায়িত্ব দেওয়া হলেও বিসিএস (এগজিকিউটিভ)-দের সে ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনিক মহলের একাংশে। বর্তমানে রাজ্যে অতিরিক্ত জেলাশাসকের ৭২টি পদের মধ্যে বিসিএস ৫৫ জন। কিন্তু তার উপরের প্রায় সব পদ স্বল্পসংখ্যক আইএএসদের দখলে। বিসিএস থেকে জেলাশাসক মাত্র দু’জন! সচিব (স্বাধীন দায়িত্ব) পদে এক জনও বিসিএস নেই। প্রশ্ন উঠেছে, ইঞ্জিনিয়ারেরা যদি সেচ বা আবাসনের মতো দফতরে সচিব হতে পারেন, জুডিশিয়াল সার্ভিসের অফিসার যদি বিচার-সচিবের দায়িত্ব পেতে পারেন, তা হলে কেন বিসিএস-কে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে বসানো যাবে না?
মহাকরণের খবর: মুখ্যমন্ত্রী এ সব তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তিনি চাইছেন, সমস্যা সমাধানে আশু ব্যবস্থা নিতে। যদিও নতুন সরকারের প্রায় সাত মাস অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরে অনেকেই এখন রাজ্য প্রশাসনের ‘গা-ছাড়া’ মনোভাবের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছেন। |