‘নেতা গড়ার কারখানা’ নয়, ধারা বদলের ডাক সিপিএমে
লোকে যাকে ‘ভাল’ বলে, সে-ই কি ভাল? নাকি পার্টি যাকে ‘ভাল’ বলে, সে-ই ভাল?
রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পরে দলকে নতুন করে গড়ার কাজে হাত দিয়ে এমনই দ্বন্দ্বের মুখোমুখি সিপিএম! নিচু তলা থেকে উঠে আসা এই দ্বন্দ্বই ধরা পড়েছে সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্মেলনে। ওই সম্মেলনেই জবাবি বক্তৃতায় দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর বার্তা, সিপিএম ‘নেতা গড়ার কারখানা’ নয়! যাঁরা ‘অতিরিক্ত’ দায়িত্ব সামলাতে পারবেন, তাঁরাই কমিটিতে স্থান পাবেন। অর্থাৎ ‘নেতা’ হবেন। কিন্তু ৩৪ বছর পরে রাজ্যে বিরোধী আসনে বসে দল পুনর্গঠনের সময় সিপিএমকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে, বতর্মান সময়োপযোগী ‘নেতা’ কেমন হবেন? কর্মীই বা কেমন হবেন?
কলকাতা জেলা সম্মেলনে গৃহীত ‘রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদনে’ মেনে নেওয়া হয়েছে, মানুষের চোখে ‘ভাল’ এবং সংগঠনের কাজে ‘ভাল’ দু’ধরনের কর্মীদের নিয়ে সমস্যা কী ভাবে দলের কাজে প্রভাব ফেলছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এলাকায় বলিয়ে-কইয়ে কমরেডরা অনেকেই মানুষের চোখে ভাল মানুষ নয়’! প্রতিবেদনই বলছে, সমসাময়িক পরিস্থিতি বা কোনও বিষয়ে দলের বক্তব্য মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য যে প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন, কর্মীদের অনেকেরই তা থাকছে না। ফলে, এক দল কর্মী মানুষের কাছে গেলেও মানুষ তাঁদের ভাল চোখে দেখছেন না। আবার আর এক দল মানুষের দরবারে দলের বক্তব্য ঠিক ভাবে উপস্থাপিত করতেই পারছেন না। প্রতিবেদনের ভাষায়, ‘এই জন্যই মানুষের দরজায় দরজায় যাওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা কাটছে না। তার বিকল্প প্রদশর্নীমূলক ক্যাম্পেন করার দিকে ঝোঁক বেশি’। অর্থাৎ, ‘দেখনদারি’ বাড়ছে।
অধুনা সিপিএম নেতৃত্ব দলের অন্দরে সব চেয়ে বেশি সরব ‘নিষ্ক্রিয়’ কর্মীদের বিরুদ্ধে। বিমানবাবু কলকাতা জেলা সম্মেলনেই বলেছেন, যাঁরা কাজ করছেন না, বিরাট আকারে কমিটি করে তাঁদের রেখে দেওয়ার মানে হয় না। কিন্তু এক কথায় ‘নিষ্ক্রিয়’ কর্মী বলে কাউকে চিহ্নিত করাও যে সমস্যাজনক, মেনেছে কলকাতা জেলা কমিটির দলিলই। সেখানে বলা হয়েছে, ‘সক্রিয় কিন্তু জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা নেই এবং নিষ্ক্রিয় কিন্তু জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা আছে এই দুই ক্ষেত্রের নেতিবাচক দিককেই চিহ্নিত করে কাঙ্ক্ষিত সংশোধনের মাধ্যমে পার্টির আদর্শ ও নীতির ভিত্তিতে বর্তমান সময়ের চাহিদানুসারে নেতৃত্ব থেকে সাধারণ সদস্য পর্যন্ত সকলকে পার্টি, শ্রমজীবী ও মিত্রদের প্রতি দায়বদ্ধতাকে কার্যকরী রূপ দিতেই হবে’। জনগণের থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়েই নেতৃত্বকে ‘নির্ভুল পথে’ এগোনোর কথা বলা হয়েছে দলিলে।
সিপিএম সূত্রের খবর, কলকাতা জেলায় এখন দলের সদস্যসংখ্যা ২১ হাজার ২৮২। সম্মেলন-পর্বে বিমানবাবুরা যে সূত্র মেনে চলছেন, তাতে কলেবরের নিরিখে তিনটি মাপের জেলা কমিটির কথা বলা হচ্ছে। ৪০ জনের ছোট, ৫৫ জনের মাঝারি এবং ৭০ জনের বড় জেলা কমিটি। কলকাতায় ৭০ জনের অর্থাৎ ‘বড়’ জেলা কমিটি তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাতেও যে বর্তমান ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতি মোকাবিলার কাজ হবে না, দলের অন্দরে তা কবুল করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কলকাতার সম্মেলনেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে বিমানবাবু পর্যন্ত নতুন প্রজন্মের সদস্য তুলে আনার উপরে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁদের আশা, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা যে হেতু যুব সমাজকে তুলনামূলক ভাবে বেশি আকৃষ্ট করে, তাই তরুণ প্রজন্ম বিরোধী দলে থাকা সিপিএমের পাশে দাঁড়াতে পারে। সিপিএম এখন ক্ষমতায় নেই। কাজেই এখন যাঁরা আসবেন, ‘কিছু পাওয়ার আশা’য় আসবেন না। ‘মতাদর্শগত ভিত্তি’ মজবুত করেই এই সময়কে কাজে লাগিয়ে দলের জনভিত্তি বাড়াতে হবে।
কিন্তু একই সঙ্গে সিপিএমকে ভাবাচ্ছে, এমন নেতৃত্ব কোথায়, যাঁদের দেখে নবীন প্রজন্ম এগিয়ে আসবে? কলকাতার সম্মেলনে বক্তৃতাকারী ৭৪ জন প্রতিনিধির অধিকাংশই নতুন ভোটারদের সমর্থন পেতে উদ্যোগী হওয়ার কথা বলেছেন। কলকাতা সম্মেলনে এই ‘শপথ-প্রস্তাব’ও গৃহীত হয়েছে ‘বহু কমরেডের অশ্রু, রক্ত, ঘামের বিনিময়ে, আন্দোলন-সংগ্রামের অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে বিগত ৩৪ বছর ধরে কাজের একটা ধারায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। সেই ধারা (‘মাইন্ডসেট’) থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কাজের নতুন ধারা রপ্ত করতে হবে’।
তবু ক্ষমতাচ্যুত দলেও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব এড়াতে প্রবীণ জেলা সম্পাদককে রেখে দিতে হচ্ছে। তাই দলেই প্রশ্ন থাকছে, অভ্যাস সত্যিই বদলাবে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.