|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ২... |
|
রাজ দরবার |
তাঁর অফিস খোলা। সব সময়। টালিগঞ্জের ‘স্ট্রাগলার’দের জন্য। শীর্ষস্থানীয় পরিচালক। দেব-জিৎ-দের
মতোই
তারকা স্টেটাস। নায়িকাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। হালিশহরের নিম্নবিত্ত জীবন থেকে ৩১ তলার বিলাসী ফ্ল্যাট।
মাটির সঙ্গে সম্পর্কটা একই রকম দৃঢ়। রাজ চক্রবর্তী। না-বলা অনেক কথা। এই প্রথম। বললেন ইন্দ্রনীল রায়-কে |
পত্রিকা: আপনার অফিস দেখে ২০০০ সালের গোড়ার দিককার রাম গোপাল বর্মার অফিসের কথা মনে হচ্ছে। এত লোক দাঁড়িয়ে বাইরে। অ্যালবাম, ফাইল, বায়োডেটা হাতে? রাজ: হ্যাঁ, সারাদিন আমার অফিসের বাইরে প্রচুর লোক অপেক্ষা করে। এরা সবাই কিন্তু স্ট্রাগলার। ওদের কী করে যেন মনে হয় রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে একটা হিল্লে হয়ে যাবে। আমি গাড়িতে ওঠার সময় কী অফিসে ঢোকার সময় ওরা আমায় ধরে। আমি চেষ্টা করি ওদের সাহায্য করার। অনেকেই আমার বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউজে কাজ করে। আমার অফিসের পেছনেও একটা ঘর আছে। সেখানে ওদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বেসিক মাইনে সহ।
পত্রিকা: কী বলছেন! আপনি ওদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন? রাজ: হ্যাঁ ।সবার নয়। কিন্তু প্রায় ১৫-১৬ জন তো আমার এখানেই থাকে, খায়। এদের মধ্যে টেকনিশিয়ান আছে, অ্যাক্টর আছে। সব ডিপার্টমেন্টের লোকজন আছে।
পত্রিকা: এদের কাউকেই তো চেনেন না। যখন চান্স দেন তখন কী দ্যাখেন এদের মধ্যে? রাজ: আমি শুধু তাদের সততা আর ডেসপারেশনটা দেখি। যদি কারও অ্যাপ্রোচে ভাল কাজ করার ব্যাকুলতা দেখি খুব দ্রুত তাকে টিমে শামিল করে নিই। আমি জানি স্ট্রাগলিংয়ের দিনগুলো কত কষ্টের, কত যন্ত্রণার। আমিও একদিন ভাবতাম একটা চান্স শুধু পাই, তা হলেই স্কোয়্যার কাট মারব। সেই চান্সটা পেতে পেতেই আমার দশ বছর কেটে গেছে। চাই না বাকিদের ওই দশ বছর নষ্ট হোক।
পত্রিকা: আমি তো শুনেছি এই স্ট্রাগলারদের অনেকেই উচ্চশিক্ষিত... রাজ: হ্যাঁ। আছেই তো। সোম বলে একটা ছেলে আছে। ও এম এসসি পাস। কিন্তু ইচ্ছে ছিল এই লাইনে আসার। একদিন আমাকে এই অফিসের বাইরে ধরে, চান্স দিতে বলল। তখন আমার অফিসে একজন রান্নার লোকের প্রয়োজন ছিল। আমি ওকে বলি ‘রান্না করতে পারবে’, ও বলে ‘হ্যাঁ’।
তার পর থেকে ও রান্না করত, চা দিত, বাসন মাজত। এক দিন অফিস থেকে বেরনোর সময় দেখি ও বসে বসে কাঁদছে। আমি বললাম ‘কাঁদছিস কেন?’ তখন ও আমাকে ওর কোয়ালিফিকেশন জানাল। বলল, ও নাকি এম এসসি করেছে। এবং ওর কান্নার কারণ, ওর চা দিতে আপত্তি নেই, কিন্তু আমার প্লেট ছাড়া অন্যদের প্লেট মাজতে ওর খারাপ লাগছে। এটা শোনার পর ওকে বলি, ‘তুই কি পাগল? তোকে দিয়ে এই কাজ করালে আমার নিজের পাপ হবে।’ সেই থেকে ওকে আমি আমার প্রোডাকশন ম্যানেজার করে দিয়েছি। এ রকম অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতা আমার অফিসে রোজই হচ্ছে।
পত্রিকা: এত জনের ত্রাতা হয়ে গেছেন, এটা তো একটা চাপও? রাজ: আমার এই প্রেশারটা নিতে ভাল লাগে। এত লোক আমার ওপর নির্ভরশীল এই দায়িত্বটা আমার কাজের ফোকাসটা আরও বাড়িয়ে দেয়।
পত্রিকা: মানে মিঠুন চক্রবর্তীর পর আপনিও একটা গ্রুপের কাছে ইন্সপিরেশন হয়ে গেছেন? রাজ: আমি নিজেও তো মিঠুনদার লড়াইয়ের গল্প থেকে ভীষণ অনুপ্রাণিত। যদি আমার লড়াইটা কাউকে প্রেরণা দেয় মনে করব ভগবানের আমার ওপর আশীর্বাদ। এটাও বিশ্বাস করি একা কোনও দিন বড় হতে পারব না, সবাইকে নিয়ে চললেই বড় হব। তাই সবাইকে নিয়েই চলার চেষ্টা করছি। |
|
পত্রিকা: এটা তো মানেন, আজকে আপনি বাংলার এক শীর্ষস্থানীয় পরিচালক। আপনাকে নিয়ে টেলিভিশনে প্রোমো হচ্ছে, নন্দনে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল চলাকালীন ‘মবড’ হচ্ছেন আপনি....
রাজ: আমি শীর্ষস্থানীয় ডিরেক্টর কি না জানি না সত্যি। কিন্তু এই অ্যাডিউলেশনটা আমার ভাল লাগে। আর ‘মবড’ হওয়ার পেছনে আমার একটা থিয়োরি আছে। বাংলা ছবির দর্শক জানে রাজ চক্রবর্তী----দেব, জিৎ, কোয়েলদের খুব বন্ধু। কোথাও আমায় স্পর্শ করলে ওরা ভাবে ওরা দেব কী জিৎকে স্পর্শ করতে পারছে।
পত্রিকা: আচ্ছা, আজকে আপনি, সৃজিত, অনিরুদ্ধ, বিরসারা এসে যাবার পরে টালিগঞ্জে একটা জেনারেশনের ডিরেক্টর কি ক্রমশ দূরে চলে যাচ্ছে। আজকে কি প্রভাত রায়, হরনাথ চক্রবর্তী, অনুপ সেনগুপ্তদের দিন প্রায় শেষ বললেই চলে?
রাজ: এটা কিন্তু ভীষণ বিতর্কিত প্রশ্ন....
পত্রিকা: না এড়িয়ে উত্তরটা দিন প্লিজ...
রাজ: না, আমার মনে হয় না কারও দিন শেষ হয়ে গেছে বলে। প্রভাতদা, হরদা, অনুপদা অনেক বছর অনেক হিট ছবি বানিয়েছেন। এবং কে বলতে পারে, কালকে ওঁদের হাত থেকেই এমন ছবি বেরলো যেটা বাংলা ছবির ধারাকে বদলে দিতেই পারে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাই কাউকেই ওভাবে একেবারে উড়িয়ে দেওয়াটা উচিত নয়। তবে আমার মনে হয় আমি, সৃজিত, বিরসা, প্রভাতদা, হরদা, অনুপদা, স্বপনদা আমাদের সবাইকে নিজেদের ক্রমাগত ‘গ্রুম’ করে যেতে হবে। ভাল ছবি দেখতে হবে, সিনেমা বানানোর লেটেস্ট টেকনিক জানতে হবে। এটা করতে না পারলে যে কেউ পিছিয়ে যাবে।
পত্রিকা: কিন্তু এঁদের থেকে আপনার গেমপ্ল্যানটা তো আলাদা। আপনি তো টিম রাজ চক্রবর্তী বানিয়েছেন, বাকিরা তো একা। এটা কি আপনার স্ট্র্যাটেজি?
রাজ: অফকোর্স, এটা আমার স্ট্র্যাটেজি। ওই যে আগে বললাম, একা চলার দিন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে শেষ। কেউ যদি ভাবে সে একা নাম করবে, একা টাকা কামাবে, সেই দিন শেষ। সবাইকে বুঝতে হবে টিম জিতবে। ব্যক্তি নয়। নিজের দুর্বলতাগুলো কিন্তু টিমগেম খেললে ঢাকা যায়।
পত্রিকা: রাজ চক্রবর্তীর দুর্বলতা কী?
রাজ: সেটা বলা যাবে না।
পত্রিকা: শোনা যায়, নায়িকারা রাজ চক্রবর্তীর দুর্বলতা?
রাজ: (হেসে) হ্যাঁ, আমি তো তাই শুনি... সবাই তো তাই বলে।
পত্রিকা: সেই হিরোইনদের সঙ্গেই তো আপনার প্রেম শুনি? সব সময় দেখা যায় হিরোইনরা ঘিরে আছে আপনাকে?
রাজ: আরে সব নায়িকারাই আমার বেস্টফ্রেন্ড। হিরোইনরা ঘিরে থাকলে তো ভাল লাগেই। এখনও কোয়েলের সঙ্গে যখনই দেখা হয় ওর হাতটা মটকে দিই। সেদিন দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) একটা অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে কোয়েলের হাতটা মটকে দিয়েছিলাম। সবার সঙ্গেই আমার দারুণ সম্পর্ক। সম্প্রতি স্বস্তিকাও আমার খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেছে। আসলে নায়িকাদের সঙ্গে যখনই কথা বলি তাঁদের সঙ্গে আমার একটা দারুণ রসায়ন তৈরি হয়ে যায়।
পত্রিকা: আপনার সঙ্গে তো শুনি নুসরতের সঙ্গেও অ্যাফেয়ার?
রাজ: (হেসে) ওই সবাই বলে আর কী....
পত্রিকা: পায়েলের সঙ্গেও শুনি আপনার অ্যাফেয়ার?
রাজ: (হেসে) ওই সবাই বলে আর কী....
পত্রিকা: কিন্তু যা রটে তার কিছুটা তো বটে।
রাজ: না না। আমার ক্ষেত্রে রটেটাই বেশি....বটেটা কম।
পত্রিকা: তা হলে পুজোর সময় ম্যাডক্স স্ক্যোয়ারে কাকে ছাড়তে গিয়েছিলেন?
রাজ: (হা হা হা হা হা হা) এটা কী করে জানলেন?
পত্রিকা: বলুন না কাকে ছাড়তে গিয়েছিলেন?
রাজ: (হেসে) কমলিনীকে। কমলিনীর বাড়ি ম্যাডক্স স্ক্যোয়ারের কাছে। |
|
আমার সঙ্গে শ্রীকান্তদা’র সম্পর্কটা অনেকটা
স্বামী-স্ত্রীর মতো... দু’জনের সাংঘাতিক ঝগড়া হয়,
কথা কাটাকাটি হয়... শ্রীকান্তদা হচ্ছেন একজন অসম্ভব
খারাপ মানুষ। আবার অসম্ভব ভাল মানুষও। নির্ভর
করে আপনি কী ভাবে সেটাকে দেখছেন |
|
পত্রিকা: তার পর?
রাজ: তার পর আবার কী? এটা জানার পর থেকে বন্ধু মহলে আমায় অনেক কথা শুনতে হয়। বিশেষ করে টোনিদার (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) কাছ থেকে। আমাকে দেখলেই টোনিদা হাতটা স্টিয়ারিংয়ে গাড়ি চালানোর মতো করে, “এই পথ যদি না শেষ হয়” গানটা গায়। দুষ্টু সবাই।
পত্রিকা: নায়িকাদের বেস্টফ্রেন্ড হওয়া নিয়ে আপনার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী কি সৃজিত মুখোপাধ্যায়?
রাজ: (হেসে) প্রতিদ্বন্দ্বী? না, না। সে রকম কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না। আসলে ভেবে দেখিনি। তবে সৃজিতের কাজ আমার খুব ভাল লাগে।
পত্রিকা: পরিচালক সৃজিত তো প্রতিদ্বন্দ্বী নিশ্চয়ই?
রাজ: দেখুন, সৃজিতের কাজটা আমার খুব ভাল লাগে। আমি ওর একটা চিত্রনাট্য ‘ইয়ো দেবি’ নিয়ে কাজও শুরু করতে চলেছি। খুব মন দিয়ে ‘অটোগ্রাফ’ থেকে ‘২২শে শ্রাবণ’ জার্নিটা দেখেছি। আমার ওকে অত্যন্ত বুদ্ধিমান মনে হয়। ওর থট প্রসেসটা, লার্নিং প্রসেসটা ভাল লাগে। আমার সঙ্গে ও ছবির বাণিজ্যিক দিক নিয়ে অনেক রকম আলোচনা করে। তবে হ্যাঁ, সৃজিতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আমার ভাল লাগবে, ওর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মজা আছে। তাতে পরিচালক হিসেবে আমারও ধার বাড়বে।
পত্রিকা: আর রাজীব? উনিও তো নিশ্চয়ই প্রতিদ্বন্দ্বী?
রাজ: না, আমার মনে হয় না রাজীবের সঙ্গে আমার কম্পিটিশন আছে।
পত্রিকা: কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে একটা কথা খুব চলছে আজকাল প্রযোজকরা বলছেন যে রাজ চক্রবর্তী তাঁর পরিচালনার পারিশ্রমিক এত বেশি করেছেন যে সেই ছবি কম টাকায় রাজীবকে দিয়ে করিয়ে নেওয়া যাচ্ছে...
রাজ: তা হলে রাজীব আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে কী করে? বিশ্বাস করুন আমার কাছে এত ছবির অফার আছে, আমি রাজীব, রবি-জি সবার নাম রেকমেন্ড করি। এবং সেটা রাজীবরা জানেও।
পত্রিকা: অনেকেই এখন বলতে শুরু করেছে রাজের প্রায়োরিটি আর পরিচালনা নয়, ওর লক্ষ্য এখন প্রযোজক হওয়া।
রাজ: না, আমার প্রায়োরিটি একটা কমপ্লিট এন্টারটেনমেন্ট প্যাকেজ হওয়া। তা ছাড়া আমি দেখেছি, আমি ডিরেক্টর হিসেবে একটা ছবি বানালাম। সেটা ধরে নিন দশ কোটি টাকা কামাল কিন্তু সেখানে আমার পারিশ্রমিক ছাড়া কোনও কিছুর ওপরই কোনও অধিকার নেই। আমি তো আর লাভ হলে তা চাইতে পারব না। তাই আমি ঠিক করেছি যদি বড় হতেই হয় তা হলে আমাকে প্রযোজক হতেই হবে, অনেক দায়িত্বও নিতে হবে। তাতে টাকাটাও অনেক বেশি কামানো যাবে। সোজা কথা ‘আই লভ মানি’। তাই আমি প্রযোজক হয়েছি কিন্তু তার জন্য পরিচালক রাজ চক্রবর্তী কখনওই ঢাকা পড়ে যাক আমি চাই না।
পত্রিকা: অনেকে এটাও বলেছে আজকাল আপনি মিডিয়াতে ছবি ঘোষণা করছেন কিন্তু তার পর সেই ছবি বানানো হচ্ছে না। এটা কি এক ধরনের প্রচারের রাস্তা?
রাজ: একেবারেই নয়। এবং এই অভিযোগটা প্রধানত ‘দেবী চৌধুরাণী’ ছবিটাকে নিয়েই হয়েছে। আমি আপনাকে সেই খবরটা জানিয়েছিলাম। কিন্তু পরে শ্রীকান্তদা (মোহতা) আমায় বললেন, ছবিটা এত বড় বাজেটের যে বাজার থেকে টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। আমি খুব উৎসাহিত ছিলাম ছবিটা নিয়ে, কিন্তু যখন দেখলাম প্রযোজক পিছিয়ে যাচ্ছে আমি ওঁদের বলেছিলাম এবার তো মিডিয়া ভাববেই আমি ছবির কথা ঘোষণা করেও করতে পারলাম না। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে সব কিছু আমার হাতে নেই।
পত্রিকা: তা হলে কি আবার দক্ষিণের ছবির রিমেকে চলে যাবেন?
রাজ: আমার কিন্তু সাউথের ছবি রিমেক করতে ভাল লাগে। কিন্তু আমিও তো চাই মৌলিক চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করতে। সেটা আমার নিজের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।
পত্রিকা: আপনি তো ভেঙ্কটেশ ফিল্মস আর অশোক ধানুকা, দু’জনের সঙ্গে কাজ করেছেন। ওঁদের কাজের পার্থক্যটা কী?
রাজ: ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের একটা বিরাট অবদান আছে বাংলা ছবির ক্ষেত্রে। ওদের একটা পরম্পরা আছে। ওরা একই সঙ্গে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’, ‘ইতি মৃণালিনী’, ‘বাইশে শ্রাবণ’ করতে পারে। ব্যক্তিগত ভাবে ওদের সঙ্গে কাজ করতে আমার ভাল লাগে। আর আমার সঙ্গে শ্রীকান্তদা’র সম্পর্কটা অনেকটা স্বামী-স্ত্রীর মতো। দু’জনের সাংঘাতিক ঝগড়া হয়, কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু দু’জনের একে অপরকে ছাড়া চলে না। আমার খুব রাগ হয়েছিল যখন ওরা ‘দেবী চৌধুরাণী’ প্রযোজনা করল না। কিন্তু আমি ওদের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তগুলোকে শ্রদ্ধা করি। আমি সেদিন একটা পার্টিতে শ্রীকান্তদার সামনেই বলছিলাম, শ্রীকান্তদা হচ্ছেন একজন অসম্ভব খারাপ মানুষ। আবার অসম্ভব ভাল মানুষও। নির্ভর করে আপনি কী ভাবে সেটাকে দেখছেন।
পত্রিকা: আর অশোক ধানুকা?
রাজ: একটা কথা বলতে পারি, অশোক ধানুকার এখনও অনেক কিছু শেখা বাকি আছে। অনেক কিছু ওঁকে শিখতে হবে। |
পুজোর সময় ম্যাডক্স স্ক্যোয়ারে কাকে
ছাড়তে গিয়েছিলেন?
কমলিনীকে... এটা জানার পর থেকে বন্ধু মহলে
আমায় অনেক কথা শুনতে হয়। বিশেষ
করে টোনিদার কাছ থেকে... |
|
|
পত্রিকা: সেটা কী? পেশাদারিত্ব?
রাজ: না শুধু পেশাদারিত্ব নয়। এক্জ্যাক্টলি কী, আমি সেটা বলতে পারব না। কিন্তু এটা বলতেই পারি উনি যদি ভেঙ্কটেশ ফিল্মসকে ওঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখেন তা হলে ওঁকে দশ পা এগিয়ে খেলতে হবে। তিনি তা না করে দশ পা পিছিয়ে খেলছেন। ওঁর হয়তো এটা পড়ে খারাপ লাগবে। কিন্তু এটাই আমার ওঁর সম্পকের্র্ অ্যানালিসিস।
পত্রিকা: কিন্তু আপনার পরের ছবি তো ওঁর সঙ্গেই?
রাজ: হ্যাঁ, তা ঠিক। ভবিষ্যতে হয়তো আরও কাজ করব। কিন্তু এটাই আমার অ্যানালিসিস। আমি ওঁর থেকে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের সঙ্গে কাজ করতে বেশি কমফর্টেবল।
পত্রিকা: আচ্ছা আজকে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছেন দারুণ একটা সাজানো অফিসে। স্প্লিট এসিটাও ১৬ ডিগ্রিতে চলছে। কিন্তু এক সময় শুনেছি এই সংগ্রামে সাহায্য করার জন্য আপনার মা আর বোন ঠোঙা পর্যন্ত বানাতেন। সেটা সত্যি?
রাজ: হ্যাঁ, সত্যি। আমার হালিশহর থেকে কলকাতা আসার মান্থলি টিকিটের টাকাটা মা আর বোন ঠোঙা বানিয়ে তুলে দিত।
পত্রিকা: আর যে দিন দেড় কোটির ফ্ল্যাট বুক করলেন। মা-বাবা খবরটা শুনে কী বললেন?
রাজ: আমার মা-বাবা প্রথমে বুঝতেই পারেননি। এমনকী ওঁদের যখন ফ্ল্যাটের ব্রোশিওর দেখালাম তখনও বোঝেননি। ওঁরা এখনও হালিশহরে থাকেন। মাঝে মাঝে কলকাতায় আসেন। তার পর আমি ওঁদের মডেল ফ্ল্যাটটা দেখাতে নিয়ে গেলাম। বললাম, এ রকম ফ্ল্যাটেই আমরা থাকব কিন্তু। ৩১ তলাতে। তখন মা বলছিলেন, ‘রাজু, এত বড় ফ্ল্যাটে থাকব আমরা? ৩১ তলাতে। ওখানে অক্সিজেন পাব তো?’ আমি বলেছিলাম, ‘মা চিন্তা কোরো না, ওখানে দরকার হলে অক্সিজেন সিলিন্ডারেরও ব্যবস্থা থাকবে।’ আমার বাবারও একটা স্বপ্ন ছিল লাল গাড়ি চড়বে। এই ধনতেরসের দিন তাই বাবাকে একটা স্যান্ট্রো কিনে দিয়েছি। সেটা বোধ হয় আমার জীবনের অন্যতম খুশির দিন। খুব খুশি হয়েছিলাম বাবাকে গাড়িটা উপহার দিয়ে।
পত্রিকা: নতুন ফ্ল্যাটের গৃহপ্রবেশে তা হলে কোন কোন নায়িকাকে নেমন্তন্ন করবেন?
রাজ: সব নায়িকাকেই নেমন্তন্ন করব। কেউ বাদ যাবে না।
পত্রিকা: ইন্ডাস্ট্রির নায়করা কিন্তু বলছে রাজ তাদের নিয়ে কোনও সিরিয়াল করল না। শুধু ‘নায়িকা’দের নিয়েই সিরিয়াল করল...
রাজ: আসলে নায়কদের চরিত্রটা ঠিক বুঝতে পারিনি আজ অবধি।
পত্রিকা: নায়িকাদের তা হলে বুঝে গেছেন?
রাজ: হ্যাঁ, অনেকটাই বুঝে গেছি। (হেসে) অনেক কাছ থেকে দেখেছি তো।
পত্রিকা: সে দিন শুনলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন উনি আপনার ‘নায়িকা’ সিরিয়াল দেখেছেন?
রাজ: হ্যাঁ, দিদি বললেন, উনি হোর্ডিংও দেখেছিলেন। টেলিকাস্টও দেখছেন। আমার কাছে অবশ্যই এটা একটা বড় পাওয়া। কিন্তু সেদিন বকলেন আমায় (হেসে) বললেন, ‘শোনো হিরোইনদের অত রোগা করে দিও না তোমরা। আমি শুনেছি পরিচালকেরাই হিরোইনদের রোগা হতে বলে। আরে, বাঙালি হিরোইন এত রোগা হলে ভাল লাগে না।’ আমি বলেছি, ‘দিদি আমি আপনার কথাটা মনে রাখব।’
পত্রিকা: আচ্ছা আজকে যে আপনার এত সাফল্য তার পেছনে এক্স-ফ্যাক্টরটা কী?
রাজ: এক্স-ফ্যাক্টর আমার আত্মবিশ্বাস। আমি যদি মনে করি এটা করাটাই ঠিক সেই কাজটাই ফুল কনফিডেন্সের সঙ্গে করি। ওটাই আমার এক্স-ফ্যাক্টর। |
|
অশোক ধানুকা... যদি ভেঙ্কটেশ ফিল্মসকে
ওঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখেন তা হলে ওঁকে
দশ পা এগিয়ে খেলতে হবে। তা না করে
উনি দশ পা পিছিয়ে খেলছেন... |
|
পত্রিকা: শোনা যায় আপনি খুব জ্যোতিষে বিশ্বাসী। সেই জন্যই নাকি রাজু চক্রবর্তী থেকে রাজ চক্রবর্তী হয়েছেন। বেহালাতে একজন জ্যোতিষীর কাছে যান। রাজ: হ্যাঁ, তা ঠিক। নিউমারোলজির জন্য আমি রাজু থেকে রাজ হয়েছি।
পত্রিকা: আজকের রাজু তো জেন্টলম্যান। তার জুহি চাওলা কে তা হলে? রাজ: রাজু সবসময়ই জেন্টলম্যান ছিল। তার অনেক জুহি চাওলা আছে। আর প্রত্যেকদিন জুহি চাওলাদের সংখ্যা বাড়ছে। মিথ্যে কথা বলব না। মেয়ে ফ্যান ফলোয়িং আমার খারাপ নয়।
পত্রিকা: সেটা জানি তো। তা হলে শেষমেশ কী হলো? রাজ চক্রবর্তীর বৃহষ্পতি তুঙ্গে না শুক্র? রাজ: বৃহষ্পতি। বৃহষ্পতি তুঙ্গে থাকলে বাকি সব কিছুই তুঙ্গে থাকে। |
|
|
|
|
|