|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ১... |
|
খোকাবাবুর খুকুমণি |
দেব-শুভশ্রী। একসঙ্গে। এক দিন। রাগ। অভিমান। খুনসুটি। তুলতুলে প্রেম।
নীরব বোঝাপড়া। অনাবিল স্বতঃস্ফূর্ততা। একমাত্র সাক্ষী শতরূপা বসু |
পত্রিকা: দেব, আপনি তো দেখছি মহা বেরসিক...
শুভশ্রী: হাহাহা... (প্রায় তিরিশ সেকেন্ড ধরে দম ফাটা হাসি)
দেব: রসিক চেহারাটা দেখানোর মতো কাউকে পাইনি তো, তাই...
পত্রিকা: এখন দেখলাম, আগেও শুনেছি। আপনার নাকি প্রেম-টেম করা ধাতে সয় না?
দেব: না মানে, যতটা বলছেন অতটাও খারাপ না। (শুভশ্রীর আবার হাসি।)
পত্রিকা: শুভশ্রী?
শুভশ্রী: কে আমি? আমি ভীষণ রোম্যান্টিক।
পত্রিকা: আর দেব?
শুভশ্রী: (প্রচণ্ড হাসতে হাসতে) সেটা আমি জানি না। ও বয়ফ্রেন্ড হলে বলতে পারতাম।
পত্রিকা: বয়ফ্রেন্ড না?
শুভশ্রী: (আবার হাসতে হাসতে) একদমই না।
পত্রিকা: কী দেব?
দেব: আমি ওর বয়ফ্রেন্ড... (লম্বা সময় চুপ) না। (দু’জনের আবার হাসি।)
পত্রিকা: সেই আপনি ‘খোকাবাবু’তে গান গেয়ে ফেললেন? প্রেমে পড়লে কিন্তু লোকে এমন করে...
দেব: কী করে?
পত্রিকা: এই গান গায়, কবিতা লেখে...
শুভশ্রী: (হাসতে হাসতে) একদম ঠিক।
দেব: আচ্ছা বেশ, আমি প্রেমে পড়েছি। (হাসি) এই ছবিটার। এটাই এখন আমার জীবন ।
শুভশ্রী: হ্যাঁ। এই ছবিটার জন্যেই প্রায় প্রতিদিনই ওর সঙ্গে দেখা হচ্ছে তো।
পত্রিকা: কেন, এমনিতে হয় না?
শুভশ্রী: না, অতটা হয় না। তবে বলতে পারি এখন ‘খোকাবাবু’ই ওর প্রেমিকা।
পত্রিকা: এটা কি খুব ভাল ব্যপার দেব?
দেব: সে জানি না। তবে, আমি আমার বউ বা গার্লফ্রেন্ডকে এতটা ভালবাসি না যতটা আমি এই ছবিটাকে আপাতত বাসছি।
পত্রিকা: বউ? প্রেমিকা?
শুভশ্রীর প্রচণ্ড হাসি। দেব চুপ। মিটিমিটি হাসছেন।
পত্রিকা: আপনার গানের প্রথম সমালোচক নিশ্চয়ই শুভশ্রী? এ কী! দেব-এর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন যে!
শুভশ্রী: (সামলে) আমি একদমই ওর সমালোচক নই। সব সময় ওকে ভালই বলি। খারাপ বলি না।
পত্রিকা: বাবা, এ তো অন্ধ ভালবাসা দেখছি...
শুভশ্রী: (হাসিতে ফেটে পড়ে) না, না সেটা না।
দেব: মানে আমার ওপর বিশ্বাস আছে ওর। যে আমি যা করব ভাল করব। |
|
পত্রিকা: আচ্ছা!
দেব: হ্যাঁ, ... (শুভশ্রীর দিকে তাকিয়ে) বলো, বলো, এগুলো বলো...
শুভশ্রীর সলজ্জ হাসি। তার পর দু’জনে জোরে হেসে ওঠেন।
পত্রিকা: তা এই যে আপনারা ছবির জন্য প্রথম বার প্যারিস গেলেন, দেব বলেছিলেন আপনি কী কিনেছেন উনি জানেনই না। এটা আপনি মানেন?
শুভশ্রী: আলবাৎ মানি। জানবে কী করে? এক জন মানুষ যদি সারাক্ষণ নিজেই শপিং করতে থাকে, অন্যে কী কিনল সেটা জানবে কী করে, বলুন? আপনি সবাইকে জিজ্ঞেস করুন না, তাঁরা কী কিনেছেন? তাঁরা...
দেব: (প্রায় তেড়ে উঠে) অ্যাই, অ্যাই, মিথ্যে কথা বলবে না...
শুভশ্রী: (হাত-পা ছুঁড়ে দেব-এর কথা কেটে, থামিয়ে দিয়ে) আমরা যখন শপিং শুরু করব-করব করছি, ততক্ষণে ওর শপিং শেষ...
দেব: আহাহাহাহা, তোমরা কিছুই কেননি...
শুভশ্রী: একশো বার! জানেন, একটা দোকানে ঢুকল...তার পর, এটা? না ওটা? এই করতে করতেই সময় শেষ। আমাদের কিছুই হল না।
দেব: কী হিংসুটি রে বাবা!
শুভশ্রী: হ্যাঁ-আ-আ, নিজে এত কিছু কিনলে। হিংসে তো হবেই। একটা কিছু কিনে দিতে পারতে।
পত্রিকা: ইসসসসসস, কিচ্ছু দিলেন না?
শুভশ্রী: কিচ্ছু দেয়নি।
দেব: এ কি রে! জন্মদিনের কেকটা ভুলে গেলি?
শুভশ্রী: ইসসসসসস! ওটা প্রোডাকশন হাউস দিয়েছিল। অশোকজি (ধানুকা) দিয়েছিলেন...
দেব: (চোখ গোল গোল করে হাত তুলে, শাসানোর ভঙ্গিতে) এএএএএএএ!!!
শুভশ্রী: (আরও চেঁচিয়ে) থ্যাঙ্ক ইউ হিমাংশু... (অশোক ধানুকার ছেলে)
দেব: (চোখে রাগ, ঠোঁটে হাসি) দাও দাও, সব্বাইকে থ্যাঙ্ক ইউ দাও...
পত্রিকা: শান্তি, শান্তি। আচ্ছা, দেব-এর ফ্যান পেজ-এ ‘শুভশ্রী দ্য ইন্সপিরেশন’ বলে একটা আলাদা পাতা আছে।
দু’জনের আবার মিটিমিটি হাসি।
পত্রিকা: তা কী ভাবে ইন্সপায়ার করেন দু’জন দু’জনকে?
দেব: (খুব নিচু গলায়) ঢপের ইন্সপিরেশন...
শুভশ্রী: (কড়া গলায়) কী বললে?
দেব: না, না ভাল ইন্সপিরেশন।
শুভশ্রী: হুম। ওর কথা বললে, ও খুব ডেডিকেটেড। সব জিনিস খুব ভাল ব্যালেন্স করে। এটা ওর কাছ থেকে আমি শিখতে চাই।
পত্রিকা: কী রকম ব্যালেন্স?
শুভশ্রী: মানে, সব কিছুই। এটা ওর মজ্জাগত।
পত্রিকা: দেব?
শুভশ্রী: (দেব-এর দিকে চোখ পাকিয়ে) উল্টোপাল্টা বললে দেব ধরে! (তার পর প্রতিবেদকের দিকে তাকিয়ে) ওর কারও কোনও কিছুই ভাল লাগে না।
দেব: (চাপা, দুষ্টু হাসি হাসতে হাসতে) না, লাগে। (শুভশ্রীর দিকে তাকিয়ে) ওকে ভাল লাগে। ওর ডেডিকেশন ভাল লাগে। জেদ ভাল লাগে। এগুলো অবশ্য সব আমারই শেখানো।
শুভশ্রী: নিজের ক্রেডিট নিতে ওস্তাদ।
দেব: না, না, তা নয়।
শুভশ্রী: না, না বলো, বলো। সবাই জানে। তাও বলো।
দেব: (সিরিয়াস হয়ে) নিজের কাজের প্রতি খুব অনুগত। এটা শিখতে চাই।
পত্রিকা: হাইটের দিক থেকে আপনারা দু’জনে সব থেকে লম্বা জুটি। বেশ সুবিধে, না?
শুভশ্রী: খুব সুবিধে হয়। (দেব-এর দিকে তাকিয়ে) তোমার কী মনে হয়?
দেব: কী সুবিধে সেটা জিজ্ঞেস করো আগে...
শুভশ্রী একটু থমকান। তার পর দু’জনে হাসিতে ফেটে পড়েন।
শুভশ্রী: না, তবে একটা ভাল ব্যাপার, ওর পাশে আমি স্বচ্ছন্দে হিল্স পরতে পারি।
পত্রিকা: আর দেব?
দেব: ওর ওই উঁচু-উঁচু হিল্স নিয়ে আমারও ঝামেলার শেষ নেই। এটা নিয়ে আমাদের সব সময় ঝগড়া হয়।
শুভশ্রী: মোটেই না। আমি পাঁচ-সাত। বেশি হিল আমায় পরতেই হয় না।
‘দাদাগিরি’র সেট থেকে ফোন। প্রায় ঘণ্টা দুই দেরি।
দেব-এর কপালে আবার ভাঁজ পড়ি-পড়ি। ড্রাইভারকে
তাড়া দেন।
পত্রিকা: এই যে দেব-এর ইডেন থেকে ইতালি ফ্যান, শুভশ্রী, আপনার হিংসে হয় না?
শুভশ্রী: না। খুব ভাল লাগে। কো-স্টার হিসেবে আমার খুব গর্ব হয় ওকে নিয়ে। কিছু দিন আগেও যখন বর্ধমান থেকে কলকাতা আসতাম হোর্ডিংয়ে দেখতাম মুম্বইয়ের স্টারদের ছবি। শাহরুখ খান, রণবীর কপূর, স্যাফ আলি খান... সেখানে আজ দেব-এর মুখ। দারুণ লাগে। (দেব-এর দিকে তাকিয়ে কপট রাগে) ও যতই খারাপ বলুক আমাকে নিয়ে। (দেব-কে), এই, তোমার মনে আছে, ‘চ্যালেঞ্জ’-এর সময় সেই মেয়েটা কী রকম তোমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চুমু খেয়েছিল?
দেব: (নিস্পৃহভাবে) ও রকম কত হয়েছে...
শুভশ্রী: ওটা ছিল প্রথম....। তাই বলছি, খুব ভাল লাগে!
পত্রিকা: এটা তো বলছেন কো-স্টার হিসেবে। আর অন্যভাবে?
শুভশ্রী: অন্য মানে?
দেব: (কেটে দিয়ে) ভাল ‘মানুষ’ হিসেবে বলতে চাইছে...
|
ঝলক ১ |
জুলিয়েটকে রোমিও খেয়ে নিয়েছে |
‘দাদাগিরি’তে টিম ‘খোকাবাবু’র শু্যটিং। যেতে হবে হাওড়ার সেই ডুমুরজলা স্টেডিয়াম। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে ঘড়ি কবে ঘোড়া হয়ে গেছে! এদিকে শুভশ্রীর এগারো তলায় ফোনের সিগনাল নেই। ওদিকের বাসিন্দা, মানে দেব, থাকেন ২৯ তলায়! মাঝে লাইন লাগল একবার। মুহূর্তে কন্যার ঠোঁটে চিলতে হাসি। “শোনো না, কী ভাবে যাব একটু বল না?...তাড়াতাড়ি বেরোতে পারব না। আরে, রেডি হতে হবে তো!” তাড়া খেয়ে গলায় অভিমান। বেডসাইড টেবিল-এর ওপর কাঁচের বোল-এ ঘুরছে একা গোল্ড ফিশ। একা? “দু’জন ছিল। রোমিও আর জুলিয়েট। জুলিয়েটকে রোমিও খেয়ে নিয়েছে!” জুতো নিয়ে শুভশ্রী প্রায় ছুটছেন দরজার দিকে। |
ঝলক ২ |
এত দেরি কেন? |
সাউথ সিটি। কিছুক্ষণের অপেক্ষা। ওই তো! আসছেন তিনি। কালো সানগ্লাসের ওপরে কপালে, সামান্য বাঁকা ঠোঁটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিরক্তির ভাঁজ। ঝাঁজ বোরোল শুভ ওরফে শুভশ্রীর ওপর। “এত দেরি কেন?” উত্তরে শুভশ্রী ঝাঁপিয়ে পড়ে দেব-এর দু’গাল জোরসে টিপে দিলেন। রাগ? অভিমান? মাখনের মতো গলে, মিশে গেল তুলতুলে অনুভূতিতে। কপট রাগে প্রায় ঠেলে ওঠালেন শুভশ্রীকে নিজের সাদা বিএমডব্লু’তে। নিজে বসলেন পাশে। কোত্থেকে একটা কিং সাইজ ডেয়ারি মিল্ক চকোলেট উড়ে এল! মুখ মিষ্টি। মিষ্টি মুখ। |
|
ফ্ল্যাশব্যাক |
কিন্তু সেদিন দু’জনের দেখাটা হল কী ভাবে? তা হলে পিছিয়ে যাওয়া যাক কয়েকটা ঘণ্টা।
টালিগঞ্জ ট্রাম-ডিপোর কাছে, ঝকঝকে বিশাল
ফ্ল্যাট। কলিং বেল-এর ওপরে পেতলের গণপতির ছবি। দরজায় ৮ ডিসেম্বর হওয়া গৃহপ্রবেশের ডাব-কলাগাছ এখনও সরেনি। ভেতরে সোফা বাঁধাইয়ের কাজ চলছে। বেডরুমের বিশাল আয়নার সামনে শুভশ্রী। খুশিতে ডগমগ। হাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা নতুন বছরের কার্ড। “ওঁর মায়ের ‘নিয়মভঙ্গ’র কাজে গিয়েছিলাম। ডাল-ভাত খেলাম। কার্ডটা দিলেন। বললেন, ‘তুমি তো নতুন বাড়ি নিয়েছ। আমি ক্যানভাস বানিয়ে দেব! কী দারুণ ব্যপার, ভাবুন!” গালে ব্লাশ-অন-এর শেষ টান দিচ্ছেন। কিন্তু নিশ্চিন্তে কথা বলার উপায় আছে? ক্ষণে ক্ষণে তাড়া-মারা ফোন আসছে সাউথ সিটি থেকে। যেটা ওঁর বেডরুমের জানালা থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। ওপারে দেব। যাঁর নাম শুভশ্রীর মোবাইলে ‘সেভ’ করা এমন একটা বিশেষণে, যেটা দেখলে ওঁদের রসায়নটা পরিষ্কার হয়ে যায়। |
|
|
|
|
|