|
|
|
|
বুড়িশোলকে ‘পুরস্কার’ |
মাওবাদী-প্রভাবিত ১১ ব্লকে সৌরলণ্ঠন |
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
বুড়িশোলের জঙ্গলে নিহত হয়েছিলেন মাওবাদী শীর্ষনেতা কিষেণজি। জঙ্গলমহলে ‘শান্তিস্থাপনে’র পথে ওই ঘটনাকে ‘বড় সাফল্য’ বলে মনে করে প্রশাসন। ‘সাফল্য’ উদ্যাপনে জামবনির সেই বুড়িশোল গ্রামকে ‘আলোকিত’ করতে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সৌর-লণ্ঠন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বুড়িশোলের পাশাপাশিই জঙ্গলমহলের মাওবাদী-প্রভাবিত ১১টি ব্লকে এক হাজার সৌর লণ্ঠন বিলির পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। জেলা যুব দফতরের মাধ্যমে এই লণ্ঠন দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২ জানুয়ারি জঙ্গলমহল উৎসব উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামে আসবেন। সে দিনই আনুষ্ঠানিক ভাবে কয়েক জনকে ওই লণ্ঠন প্রদান করা হবে। তার মধ্যে দিয়েই সূচনা হবে ওই আলোকায়ন কর্মসূচির। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত-র বক্তব্য, “প্রতিটি ব্লকের কয়েকজন করে গরিব মানুষকে এই লণ্ঠন দেওয়া হবে।”
১১টি ব্লকে এক হাজার লণ্ঠন ভাগ করতে হলে প্রতি ব্লকের ভাগে পড়বে গড়ে ৯০টি লণ্ঠন। সেই ৯০টি লণ্ঠন বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে না দিয়ে কোনও একটি-দু’টি গ্রামের ৯০টি গরিব পরিবারকে দেওয়ার কথাই ভেবেছে জেলা প্রশাসন। এতে সেই একটি-দু’টি গ্রামের আলোকায়ন সম্ভব। এর পর যখন সরকার ফের সৌর-লণ্ঠন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে, তখন অন্য গ্রামগুলিকে বাছা হবে।
ঝাড়গ্রাম মহকুমায় বহু গ্রামেই এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন যোজনায় দ্রুত জেলার সর্বত্র বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ঘোষণা হলেও নানা কারণে ঝাড়গ্রাম মহকুমা এখনও পিছিয়ে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য মাওবাদী-প্রভাবকেই বার বার দায়ী করেছে প্রশাসন। মাওবাদীদের বাধায় ঠিকাদার সংস্থা কাজ করতে পারেনি বলে দাবি প্রশাসনের। এখন অবস্থা খানিক বদলালেও বিদ্যুদয়ন যোজনার কাজ সময়সাপেক্ষ। তাই আপাতত সৌর-লণ্ঠন বিলির এই সিদ্ধান্ত। মাওবাদী-প্রভাবিত এলাকার জন্য এই পরিকল্পনা অবশ্য অনেক দিনেরই। আগে এমন সিদ্ধান্তও হয়েছিল যে, এক-একটি গ্রামের সবাইকেই এই লণ্ঠন দেওয়া হবে। আর লণ্ঠনগুলি চার্জ করার জন্য গ্রামের কোনও একটি কেন্দ্রে চার্জার রাখা হবে। যে চার্জারের মাধ্যমে একাধিক লণ্ঠন চার্জ করা যাবে। ‘মডেল’ হিসাবে কয়েকটি গ্রামে পরীক্ষামূলক ভাবে এই লণ্ঠন দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এত দিনে পুরনো পরিকল্পনা নতুন করে রূপায়ণের সিদ্ধান্ত নিল সরকার। এ বার প্রতিটি লণ্ঠনের সঙ্গে চার্জারও দেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন কোন গ্রামের কাদের এই লণ্ঠন দেওয়া হবে--তার তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিডিও-দের। বিডিও-দের দেওয়া তালিকা অনুযায়ীই বিতরণ করা হবে। তবে ব্যতিক্রম জামবনি। ওই ব্লকের বুড়িশোল গ্রামে লণ্ঠন দেওয়ার সিদ্ধান্ত একেবারে ‘উপরমহলের’ বলেই প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। বিভিন্ন রাজ্য যে কিষেণজির ‘মাথার দাম’ ঘোষণা করেছিল বিভিন্ন অঙ্কেরবুড়িশোলে তাঁকে ‘খতম’ করার পিছনে যৌথ বাহিনী থেকে প্রশাসন স্থানীয়দের সমর্থন পাওয়ার বিষয়টিকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেই ‘সমর্থনে’র প্রতিদান হিসাবেই বুড়িশোলের প্রতিটি বাড়িতে লণ্ঠন দেওয়ার এই পরিকল্পনা। এমনকী ঝাড়গ্রামের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়েই বুড়িশোলের কয়েক জনকে লণ্ঠন দেওয়ানোও হতে পারে। এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, “আমরা এই বার্তাই দিতে চাইছি যে, মাওবাদীদের নিশ্চিহ্ন করতে পারলেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। মাওবাদীদের জন্যই জঙ্গলমহলে উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হয়েছে। মাওবাদী-মোকাবিলায় পুলিশকে সাহায্য করলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।” তবে, এই ভাবনা ঘিরে বিতর্কেরও সমূহ সম্ভাবনা। ‘হত্যার স্মারক’ না হয়ে ওঠে লণ্ঠনএই চিন্তাও রয়েছে প্রশাসনের একাংশে। এক কর্তার কথায়, “আজাদ-হত্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যেখানে বলেছে, প্রজাতন্ত্র তাঁর সন্তানকে হত্যা করতে পারে নাসেখানে বুড়িশোলের ‘আলোকায়ন’ না আবার হত্যাকে মহিমান্বিত করার অভিযোগ তুলে দেয়!”
দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। সরকারি উদাসীনতায় রাজ্যের ১৪৬টি ট্রান্সফর্মার মেরামতি কারখানা অস্তিত্ব-সঙ্কটে ভুগছে। শুক্রবার দিঘায় ডব্লিউবিএসইডিসিএল ট্রান্সফর্মার রিপেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের ২১তম রাজ্য সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে এমনই আশঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক অমলেন্দু ধর বলেন, “রাজ্যের ১৪৬টি কারখানাই ক্ষুদ্র ও কুটীর শিল্পের আওতায় পড়লেও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও সুবিধা পাওয়া যায় না।” নতুন রাজ্য সরকার কারখানা সচল রাখার ক্ষেত্রে সদর্থক পদক্ষেপ নেবে বলে সংগঠনের আশা। ২১তম দ্বিবার্ষিক এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিধায়ক বনশ্রী মাইতি। উপস্থিত ছিলেন দুই বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারী ও রণজিৎ মণ্ডল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শিবাজী মিত্র। সম্মেলনে দেড়শোরও বেশি প্রতিনিধি যোগ দেন। |
|
|
|
|
|