|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
নবাব আলি পার্ক |
অবহেলার স্টেডিয়াম |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
বহু টাকা খরচ করে মাঠে বসানো হয়েছিল ঘাস। খেলা দেখার জন্য তৈরি হয়েছিল গ্যালারি। ফুটবল, ক্রিকেটের জন্য পিচ এবং কুস্তির জন্য আলাদা করে তৈরি হয়েছিল আখড়া। এমনকী, শিশুদের জন্য তৈরি হয়েছিল আলাদা পার্ক। কিন্তু, মাত্র দু’বছরের মধ্যে স্টেডিয়ামের ঘাস উঠে গিয়ে মাঠ জুড়ে কেবল বালি। ক্রিকেটের জন্য তৈরি পিচেরও কোনও অস্তিত্ব নেই। গ্যালারি থাকলেও তা ধুলো-ময়লায় ভর্তি। গ্যালারির রেলিংয়ে ঝুলছে আশপাশের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের জামাকাপড়। এই ছবি একবালপুরে, কলকাতা পুরসভার ৭৮ নম্বর ওয়াডের্র নবাব আলি পার্কের স্টেডিয়ামের।
২০১০-এ নবাব আলি পার্কে নবনির্মিত স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে পার্কটি স্টেডিয়াম হিসেবে গড়ে তুলতে খরচ হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা। সাংসদ তহবিল এবং পুরসভার টাকায় স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়। কিন্তু মাত্র দেড় বছর কাটতে না কাটতেই স্টেডিয়ামের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, স্টেডিয়াম তৈরির পর থেকে কোনও রকম রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় বহু টাকা ব্যয়ে বসানো ঘাস উঠে গিয়ে মাটি বেরিয়ে পড়েছে। ক্রিকেটের জন্য তৈরি পিচও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। |
|
গ্যালারি ঠিকঠাক থাকলেও চার দিকে পানের পিকের দাগ। গ্যালারিতে ঝুলছে আশপাশের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের রোগীদের কাচা জামাকাপড়। আশপাশের বস্তির কাচা জামাকাপড়ও ঝুলছে গ্যালারির রেলিংয়ে। সকাল থেকে সারা দিনই স্টেডিয়ামের গেট খোলা। সারা দিনই মাঠ জুড়ে এলাকার ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে। মাঠ জুড়ে ধুলো ভর্তি। অভিযোগ উঠেছে, সকালে আশপাশের ছেলেরা ফুটবল খেললেও সন্ধের পর থেকে স্টেডিয়ামের মাঠ নেশা করার জায়গা হয়ে ওঠে। শিশুদের জন্য আলাদা করে পার্ক তৈরি হলেও সেটি অধিকাংশ সময়েই বন্ধ থাকে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁরা জানান, পার্কটি স্টেডিয়াম হিসেবে তৈরি করা হলেও সারা দিন নিরাপত্তা রক্ষীর দেখা মেলে না। নেই দেখাশোনার কোনও কর্মী। |
|
পুরসভা সূত্রে খবর, স্টেডিয়ামটি মাঝারি মাপের ফুটবল খেলার মাঠের আকারে। মাঠের মোট আয়তন ৩০ হাজার বর্গফুট। গত বাম পুরবোর্ডের মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) ফৈয়াজ আহমেদ খান জানান, নবাব আলি পার্ক এলাকার বহু পুরনো পার্ক। পার্কটি ঘিরে গাছ লাগানো ছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে আশপাশ জঙ্গলে পরিণত হয়।
ওখানে বাচ্চাদের পার্ক ছাড়াও একটি জগার্স পার্ক ছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওই জায়গা বেহাল হয়ে পড়ে। মাঠটিরও মাটি উঠে গিয়ে সেখানে বিস্তর খানাখন্দ তৈরি হয়। ওই ওয়ার্ড ছাড়া আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ছেলেরাও এখানে খেলাধুলো করত। পার্কটি বড় বলেই ওখানে স্টেডিয়াম করার পরিকল্পনা করা হয়।
ওয়ার্ডের যে সব মানুষ এখানে প্রাতর্ভ্রমণ করেন তাঁদের জন্য মাঠের চার দিকে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে চলার রাস্তা করে দেওয়া হয়। পার্কের সামনের কিছু অংশ ঘিরে আলাদা করে শিশুদের পার্ক করা হয়। বসানো হয় স্লিপ এবং দোলনা। কিন্তু বাচ্চাদের পার্কটি সারা দিনে মাত্র দু’বার কয়েক ঘণ্টার জন্য খোলা থাকায় সেটি অক্ষত আছে। যদিও ধুলোয় ভর্তি থাকায় দেখলে মনে হয়, পার্কটি খোলা হয় না।
পুরসভার পার্ক এবং উদ্যান বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “এক সময় পার্কটি সমাজবিরোধীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। স্থানীয় মানুষজন পার্কে ঢুকতে পারতেন না। তাই পার্কটি সারানোর জন্য বহু বার বাসিন্দাদের কাছ থেকে অনুরোধ এসেছিল।” |
|
কিন্তু মাত্র দু’বছরের মাথায় স্টেডিয়াম বেহাল হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “মাঠের ঘাস উঠে যাওয়ার মূল কারণ, সারা দিন মাঠটিতে এলাকার ছেলেরা ক্রিকেট খেলে। কোনও সময়েই মাঠটি ফাঁকা থাকে না। সাধারণত স্টেডিয়ামের মাঠের ঘাস রক্ষা করতে হলে মাঠের বিশ্রাম দরকার। যেটি এই পার্কের ক্ষেত্রে হয় না।”
দিনভর যদি শুধু এলাকার ছেলেরাই খেলাধুলো করবে তা হলে কীসের জন্য পার্কটিতে স্টেডিয়াম তৈরি করা হল? গত পুরবোর্ডের মেয়র পারিষদ (পার্ক ও ঊদ্যান) ফৈয়াজ আহমেদ খান বলেন, “বরাবরই ওই মাঠে এলাকার ছেলেরা খেলাধূলা করত। কিন্তু পার্কটির মাঠের অবস্থা এত খারাপ ছিল যে ওটি সারানো দরকার ছিল। স্টেডিয়াম তৈরির পরে ওখানে কলকাতা মেয়র’স ক্লাবের খেলাও হয়েছিল। তার পর রক্ষণাবেক্ষণ না করলে খারাপ তো হবেই।”
যদিও ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ফরওয়ার্ড ব্লকের শামিমা রেহান খান বলেন, “প্রতি দিন সাফাইকর্মীরা স্টেডিয়াম সাফাই করে এলেও নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় আশপাশের ছেলেরা সারা দিন এখানে খেলা করে। তাতেই মাঠ নোংরা হয়ে যায়। আমি বছরখানেক আগে মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান)-কে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়ার জন্য লিখিত ভাবে জানাই। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি।”
কিন্তু মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ওই স্টেডিয়াম বা পার্কে নিরাপত্তা রক্ষী দেওয়ার জন্য কোনও লিখিত চিঠি পাইনি। পাশের একটি বস্তির পানীয় জল সরবরাহের ব্যাপারে আমাকে জানানো হয়। তবে, স্টেডিয়ামের ব্যাপারটি শুনলাম। আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নেব।”
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|