দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
অটো-রাজ
বিপজ্জনক যাত্রা
পিছনের আসনে তিন জন এবং চালকের পাশে এক জন— অটোরিকশায় মোট চার জন যাত্রী তোলাটাই নিয়ম। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, সারা রাজ্যেই অটোর ক্ষেত্রে চালু রয়েছে এই নিয়ম। কিন্তু বারুইপুরের বাসিন্দা এবং নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এলাকার অধিকাংশ অটোতেই এই নিয়ম মানা হয় না। চার জনের বদলে এখানে অটোয় আট-ন’জন করে যাত্রী তোলা হয়। অটোর পিছনের আসনে বসা যাত্রীদের কোলেও অন্য যাত্রীদের বসানো হয়।
বারুইপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সারা দিনে গড়িয়া, জুলপিয়া, চম্পাহাটি, ক্যানিং, গোচরণ-সহ বিভিন্ন রুটের প্রায় এক হাজার অটো চলাচল করে। নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, অন্যান্য যানবাহন কম থাকায় মূলত অটোর উপরেই নির্ভর করতে হয় তাঁদের। তাই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করা ছাড়া কোনও উপায় থাকে না।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নির্ধারিত সংখ্যার তুলনায় বেশি যাত্রী তুলে অটো চালাতে গিয়ে মাস দু’য়েক আগে চম্পাহাটির কাছে একটি অটো উল্টে এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম হন চালকও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই ঘটনার পরেও হুঁশ ফেরেনি কারও। স্থানীয় নির্মলেন্দু চক্রবর্তীর কথায়: “অটোর দাপটে স্টেশন সংলগ্ন রাস্তাগুলি দিয়ে চলাচল করা যায় না। যাত্রী ওঠানামার নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও রাস্তার মাঝখানেই অটোগুলি যাত্রী তোলার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে বারুইপুরের রাস্তাগুলিতে সব সময়েই যানজট লেগে থাকে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বারুইপুরে অটোর সমস্যা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে বেশ কয়েক বার বৈঠক হলেও কোনও সুরাহা মেলেনি।
বারুইপুরের সিটু নেতা বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই সমস্ত সমস্যার নিরসন করতে হলে ইউনিয়নকে কঠোর হতে হয়। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে এলাকার অধিকাংশ রুটের ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ আর আমাদের হাতে নেই। তবে আমাদের সময়েও এই সব দুর্বলতা ছিল, এখনও আছে। কিন্তু ইউনিয়নগুলি চট করে কঠোর হতে পারে না। এটি অত্যন্ত কঠিন বিষয়।”
বারুইপুরের চার নম্বর অটো ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তৃণমূলের মহম্মদ রফিক এই সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “প্রশাসনিক স্তরে এই সমস্যা নিয়ে অনেক বার বৈঠক হয়েছে। সবাই মিলে আলোচনা করে সমস্যা সুরাহার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা আর কার্যকর হয়নি। আমরাও চাই বারুইপুরের অটোর সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চালকদের নিয়ে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম করা হোক।”
বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, সারা দিনে বিভিন্ন রুটে প্রচুর অটো চলাচল করলেও সন্ধের পর থেকে সেই সংখ্যা কমতে শুরু করে। রাত বাড়লে অটোচালকেরা অনেক সময়েই নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে চান না। অনেকে আবার নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়াও চান। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই সব সমস্যার কথা বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক চপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সম্প্রতি বারুইপুরে আমাদের দফতরের একটি শাখা অফিস খোলা হয়েছে। কিন্তু পরিদর্শকের অভাব রয়েছে। তাঁদের সংখ্যা আরও বাড়ানো দরকার। তবে আমাদের কাছে অটো সংক্রান্ত অভিযোগ এলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখব।”

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.