পূর্ব কলকাতা
আশ্বাসই সার
পিঠ পুড়ছে...
ড়সড় কোনও দুর্ঘটনার পরেই টনক নড়ে প্রশাসনের। মেলে নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু কিছু দিন পরে যে-কে-সেই।
বিধাননগরে বিভিন্ন কমিউনিটি হল কিংবা বাজার কমপ্লেক্সের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছিল। এর আগে একটি মার্কেট কমপ্লেক্সের দোকানও আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। প্রশাসনের তরফে মিলেছিল নানা প্রতিশ্রুতি। কিন্তু অভিযোগ, তার পরেও কিছুই হয়নি। ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে ফের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি, প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ সর্বস্তরে সচেতনতার অভাবও ফুটে উঠছে।
ব্লকের কমিউনিটি হলগুলির একটি তল শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত। তিনতলা বা দু’তলা থেকে নীচে নামার দু’টি সিঁড়িও আছে। ব্যস, ওইটুকুই। সেখানে দেখা মেলে না কোনও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের। এখানেই শেষ নয়, হলের সামনে পার্কের মাঠে অনেকটা জায়গা জুড়ে মণ্ডপ। আলোকসজ্জার জন্য বিদ্যুতের তার ছড়ানো শুধু মণ্ডপে বা হলেই নয়, সারা পার্কে। পার্কে যেখানে কচিকাঁচারা খেলাধুলো করে তার পাশেই এক দিকে গ্যাসের সিলিন্ডার ও কাঠের উনুনে চলছে রান্না। মাঠেই আলোকসজ্জার জন্য আলাদা করে বিদ্যুতের মিটার বক্স। কমিউনিটি হলের পিছন দিকের গেটের কাছেই কাঠ, প্লাই ইত্যাদি নানা দাহ্য পদার্থের ছড়াছড়ি।
বিধাননগরের বিভিন্ন পার্কের কমিউনিটি হল জুড়ে চিত্রটা এমনই। বাদ নেই বাজার এলাকাও। দোকান ছাপিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার চলাচলের জায়গায় পণ্যসামগ্রীর স্তূপ। দোকানের মধ্যে ক্রেতাদের খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা যেমন আছে, সেখানেই স্বল্প পরিসরে রান্নাও চলে। হাতে-গোনা কয়েকটি বাজারে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকলেও অধিকাংশ জায়গাতেই নেই। বাজার জুড়ে তারের জঞ্জাল। অর্থাৎ, যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটার আয়োজন সম্পূর্ণ। নেই কেবল অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা।
বিক্রেতাদের একাংশ জানান, কয়েকটি মার্কেটে ‘ফায়ার এক্সটিংগুইশার’ থাকলেও কেউ সেগুলি চালাতে জানেন না। কেন্দ্রীয় বাজার সমিতির সম্পাদক শ্যামলকান্তি রায় বলেন, “বাজারগুলিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। বৈদ্যুতিন ব্যবস্থাও তথৈবচ। এর আগেও পুরসভাকে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করা হয়েছিল। ফের আবেদন করব।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, এমন অব্যবস্থা দীর্ঘ দিনের। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পনেরো বছরের বাম আমলেও যা, দেড় বছর পার হওয়া তৃণমূল পুরবোর্ডের সময়েও তাই। অবস্থার এতটুকু বদল হয়নি।
ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে ফের প্রশ্ন উঠেছে, কেন ব্লক কমিটি যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা করেনি?
অভিযোগ স্বীকার করে জিডি ব্লক কমিটির সদস্য কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “পুজোর সময়ে ও বিয়ের অনুষ্ঠান থাকলে নামমাত্র ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকে। সেগুলিরও রিফিলিং করা হয় না বললেই হয়। আমাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। পুর কর্তৃপক্ষ ও ব্লক কমিটিগুলিকে একযোগে পদক্ষেপ করতে হবে।”
প্রশ্ন উঠেছে, ব্লক কমিটি ভাড়া দেওয়ার জন্য অর্থ নেন। বিধাননগর পুরসভাও কমিউনিটি হল ও পার্কের মাঠ ব্যবহারের জন্য প্রাপ্য অর্থ পায়। তা সত্ত্বেও ব্লক কমিটি বা বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষের তরফে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? বিএ ব্লক কমিটির সম্পাদক দীপঙ্কর পাত্র বলেন, “এত দিন সত্যিই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ঢাকুরিয়া আমরির ঘটনার পরে ব্লক কমিটির বৈঠকে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দ্রুত তা কার্যকর করা হবে। এই বিষয়ে পুরসভার কাছে আমরা আবেদনও করিনি।”
এ দিকে অভিযোগ স্বীকার করে বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) অনুপম দত্ত বলেন, “এত দিন এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। দ্রুত এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করবে পুরসভা।”

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.