পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত
বাগুইআটি
হঠাৎ বাজার
হাঁটতে হয় বাসরাস্তা ধরে। কখনও বা চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে। অথচ, প্রতি সন্ধ্যায় রাস্তার ধার জুড়ে বসে যায় অসংখ্য দোকানপাট, এমনকী, গজিয়ে উঠেছে আস্ত একটি বাজার। এতে যানজট যেমন বাড়ছে, বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। এমনই অবস্থা বাগুইআটি মোড়ের। প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রীতিমতো দখলদারি চলছে ভিআইপি রোডের ধারে।
রাস্তার ধারে বাজার বসায় রোজ সন্ধ্যায় ভিআইপি রোডের বিমানবন্দরগামী লেনে বাড়তি ভিড় তৈরি হচ্ছে। সমস্যা বাড়ছে নিত্যযাত্রী, পথচারী সকলেরই। অভিযোগ উঠেছে, অবৈধ এই দখলদারি নিয়ে কোনও হেলদোল নেই প্রশাসনের। রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা, উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশ এবং রাজ্য পূর্ত বিভাগ (সড়ক) দেখেও দেখে না। অবৈধ এই বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহও হচ্ছে রাস্তার বৈদ্যুতিক তার থেকে হুক করে।
কয়েক মাস আগেও প্রায় খালিই ছিল বাগুইআটির ভিআইপি রোডের বিমানবন্দরগামী লেনের ধারের এই জায়গাটি। বিক্ষিপ্ত ভাবে বিক্রেতারা দু’-একটি ভ্যানরিকশায় নানা পণ্য নিয়ে এসে দাঁড়ালেও লোক চলাচল চলত ঠিকমতোই। কিন্তু মাস দুই আগে প্রায় রাতারাতি ছোট-বড় কাঠের চৌকি পেতে শুরু হয় জায়গা দখল। এক এক করে বসতে শুরু করে মাছ-মাংস-সব্জির দোকান। এর পর থেকেই বাগুইআটির বিমানবন্দরগামী লেনের ধারে পূর্ত বিভাগের জমিতে গজিয়ে উঠতে আরম্ভ করে আস্ত একটি বাজার।
যদিও রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। অনেক দিন ধরে ওই এলাকায় কিছু হকার বসেন। তবে এই বাজারটি কোথায়, খোঁজ নিয়ে দেখব। পূর্ত দফতর এই দখলদারি উচ্ছেদে উদ্যোগী হলে পুরসভাও সহযোগিতা করবে।” রাজ্য পূর্ত বিভাগ (সড়ক)-এর স্টেট হাইওয়ে সার্কেল ১-এর সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার মলয় ঘোষের কথায়: “দায়িত্বে নতুন যোগ দিয়েছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। উড়ালপুল নির্মাণের সময় সমস্ত দখলদারি ভেঙে দেওয়া হবে।”
শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে, অবৈধ এই বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে রাস্তার বৈদ্যুতিক তার থেকে হুক করে। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চিফ ইঞ্জিনিয়ার (বণ্টন) সমীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মাঝেমধ্যেই অভিযান করে হুকিংয়ের তার খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু দিন পরেই আবার হুকিং হয়। আমরা বিশেষ কিছু করতে পারি না। প্রশাসনের সহযোগিতাও সব সময় পাই না। তবে সর্বত্র অভিযান চালানো হয়।”
সন্ধ্যায় ভিআইপি রোডের বিমানবন্দরগামী লেনে গাড়ির সংখ্যা বাড়ে। অফিস ফেরত নিত্যযাত্রীদের ভিড়ে বাগুইআটি বাসস্টপ ও অটোস্ট্যান্ড এমনিতেই থাকে জমজমাট। বাস থেকে নেমে রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে যেতেও নাভিশ্বাস ওঠে। মহিলা ও বয়স্কদের জন্য তা অনেক বেশি ঝুঁকির হয়ে ওঠে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। ট্রাফিক পুলিশের মাত্র কয়েক জন কর্মী মিলে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তার উপরে এই বাজারের জন্য বিপদের আশঙ্কা আরও বাড়বে বলে এলাকার মানুষের বক্তব্য। নিত্যযাত্রী পার্থ সমাদ্দার বললেন, “বাগুইআটি বাসস্টপে যানজট হলে তার অনেকটা আগে থেকে নেমে রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটতে হয়। এখন বাজার বসে যাওয়ায় সেই উপায়ও নেই। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক বেশি তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের বিষয়টি দেখা উচিত।” উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “বাজারটির বিষয়ে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।”

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.