বৈপরীত্যের আবহে আজ ঐতিহ্যের ডার্বি
এগিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গলের কাঁটা সুব্রত-ওডাফা
সুব্রত ভট্টাচার্য যখন অনুশীলন শুরু করলেন, তখন ঘন কুয়াশা আর টিপটিপ বৃষ্টিতে চারদিক ঝাপসা। ঘণ্টা দু’য়েক পর ট্রেভর মর্গ্যান দল নিয়ে মাঠে নামার সময় সোনালি রোদ আছড়ে পড়ছে ময়দান জুড়ে।
প্র্যাক্টিস শেষে জনাদু’য়েক বঙ্গসন্তান ফুটবলার নমস্কার করে তাঁবুতে ফিরছেন দেখে মোহনবাগান টিডি-কে বলতে শোনা গেল, “ঠাকুর নমস্কার করে যদি জেতা যেত তা হলে সাধু-সন্ন্যাসীদের মাঠে নামিয়ে দিতাম।”
কিছুক্ষণ পর ওডাফা ওকোলিকে আটকাতে আপনার অস্ত্র কী জানতে চাওয়ায় ইস্টবেঙ্গলের ব্রিটিশ কোচ হাসতে হাসতে বললেন, “কিডন্যাপই করব ভাবছি।”
আজ, শনিবার বাঙালির ঐতিহ্যের আর একটা ডার্বি। তার চব্বিশ ঘণ্টা আগে আবহাওয়া আর মনোভাবে শুধু নয়, অদ্ভুত একটা বৈপরীত্য দুই প্রধানকে যেন গ্রাস করেছে। মাঠে নামার আগেই ৭ পয়েন্টে এগিয়ে ইস্টবেঙ্গল। জিতলেই আবারও কলকাতা লিগ তাঁবুতে তোলা নিশ্চিত করে ফেলবেন টোলগে-মেহতাবরা। স্বাভাবিক নিয়মেই ফুরফুরে মেজাজ মর্গ্যানের ঘরে। অনুশীলনেও পাশের মাঠের ভিড় অনেক বেশি। তুলনায় কেমন যেন একটা চাপা টেনশন পালতোলা নৌকার অন্দরে। ভাবটা যেন চিরকালের লড়াইটায় না হারলেই হল। ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে শুধু সুব্রতকে! যিনি মর্গ্যানের সতেরো মাসের লাল-হলুদের কোচিং জীবনে বারবার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে, ‘বাবলুবাবুর ওষুধে’ বেশির ভাগ সময় কাত হয়েছেন মর্গ্যান। এ মরসুমের প্রথম ডার্বিতেই তো হারতে হয়েছে ইস্টবেঙ্গলকে। যা সামনে আনলে অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছেন মর্গ্যান। বলছেন, “কোনও মন্তব্য করে আপনাদের আর একটা কপি লেখার সুযোগ দিতে চাই না আমি।”
শেষ হাসি কার?
বড় ম্যাচে নামার আগে শুক্রবার দুই শিবিরের ছবি তুলেছেন উৎপল সরকার এবং শঙ্কর নাগ দাস।
কলকাতার ডার্বি খেলাতে শহরে চলে এসেছেন ফিফার পোস্টার বয় উজবেকিস্তানের রবসন ইমাতভ। বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলানো রেফারি যুবভারতীতে যে ম্যাচ খেলাবেন তাতে এগিয়ে কে? অঙ্ক বলছে, ইস্টবেঙ্গল। যুক্তি বলছে কেউই নয়। ‘কেউই নয়’ লিখতে হচ্ছে বাগানের দু’জনের কথা ভেবে। সুব্রত আর ওডাফা। প্র্যাক্টিস শেষে বেরনোর সময় ওডাফা বলছিলেন, “মজার ম্যাচ খেলতে নামছি। জিতলে ট্রফি পাব না। অথচ জিততেই হবে। গোলও করতে হবে। ঈশ্বর নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবেন।” আর মোহন-টিডির মন্তব্য, “প্ল্যানিং একটা করে নামছি। দেখুন না কী হয়।” অনুশীলনের সময় বরাবরই একটা চিরকুট নিয়ে মাঠে নামেন মর্গ্যান। শুক্রবার সকালে সেটা দেখা যায়নি তাঁর হাতে। সুব্রতর ঘরে ঢুকে দেখা গেল গোটা দশেক কাগজের উপর আঁকা নানান স্ট্র্যাটেজি। তাতে চোখ বোলালেই বোঝা যায়, অঙ্ক দিয়ে সব বাধা উড়িয়ে দিতে চাইছেন। কোন মোটিভেশন নিয়ে এই যুদ্ধে নামতে চাইছে মোহনবাগান? হোসে ব্যারেটোর সঙ্গে কথা বললেই তা বেরিয়ে আসছে। চোটের জন্য প্রথম একাদশে রাখা হয়নি সবুজ-তোতাকে। শেষ মুহূর্তে তাঁকে আঠারো জনের দলে রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলার কথা ভেবে। “লিগ জিতলাম অথচ ডার্বি জিতলাম না, কোনও মানেই হয় না,” ঠোট উল্টে বলে দিলেন ব্যারেটো। সঙ্গে যোগ করলেন, “এই ম্যাচটায় কেউ পিছিয়ে নেই। আই লিগে ওরা যত গোল করেছে, আমরাও তাই।”
বড় ম্যাচে টোলগে-মেহতাবের যোগদানে তাঁর টিম আরও বলশালী হয়ে উঠলেও কথা বলার সময় সতর্ক মর্গ্যান। সুব্রতও। চাপ কমানোর জন্য পেশাদার ব্রিটিশ কোচ যেমন বলে দিয়েছেন, “ডার্বি সব সময় স্পেশ্যাল। তবুও ম্যাচটা না জিতলেও আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ থাকবে। আমি কিন্তু ট্রফি জিততে ভালবাসি।” উল্টো দিকে সুব্রত অপ্রত্যাশিত ভাবে ভাল নম্বর দিচ্ছেন বিপক্ষকে। “টোলগে-মেহতাব আসায় ওরা আরও শক্তিশালী। পেনও খুব ভাল খেলছে। রিজার্ভ বেঞ্চও খুব ভাল। তবে আমরা হারার জন্য নামব না।”
অনুশীলনে নিজের টিম দেখিয়ে দিয়েছেন মর্গ্যান। দুটো চমক থাকছে রাইট ব্যাকে খেলবেন নির্মল ছেত্রী। গোলে ফিরছেন সন্দীপ নন্দী। টোলগের সঙ্গে লেন ফরোয়ার্ডে। মাঝমাঠে পেন-সঞ্জু-খাবরা-মেহতাব। রক্ষণে নির্মলের পাশে ওপারা-গুরবিন্দার-সৌমিক। সুব্রত ঝুঁকির রাস্তায় নেই। এ দিন সকালে সব ফুটবলারকে মাঠের ভিতর ডেকে জেতার শপথ করালেও রাতের খবর, নিজের কুখ্যাত রক্ষণ জমাট করতে জোড়া ডিফেন্সিভ স্ক্রিন নামাতে পারেন। জিলানি আর মাসি। ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠকে অকেজো করে দিতে পাঁচ মিডিও ব্যবহার করার কথাও ঘুরছে সুব্রতর মাথায়। সে ক্ষেত্রে ওডাফার সঙ্গে জুয়েল রাজা শুরুতে ফরোয়ার্ডে নামলেও, পরে মাঝমাঠে নেমে আসবেন। ফর্মেশন দাঁড়াবে ৪-৪-১-১। সব স্ট্র্যাটেজিই সুব্রত-প্রশান্তরা তৈরি করছেন প্রতিআক্রমণের রাস্তা খোলা রেখে।
পরিস্থিতি যা তাতে যত অসম-ই হোক, লড়াইটা ফিরতে চলেছে মাস দেড়েক আগের আই লিগের মোড়কে। চতুর মর্গ্যানের বুদ্ধি বনাম পোড়খাওয়া সুব্রতর অঙ্ক। মরসুমের ডার্বির ফল ১-১ না ২-০ কী হয়, তা দেখার জন্য শনিবার বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছেই।

শনিবারে কলকাতা লিগ
ইস্টবেঙ্গল: মোহনবাগান (যুবভারতী ২-০০)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.