চার বছর আগে যে ঘরে বসে অনিল কুম্বলে ঐতিহাসিক সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন সিডনি টেস্ট হারা সম্পর্কিত। সেই একই ব্র্যাডম্যান চেঞ্জিংরুমে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। এ বারও হার। তবে দুটো পরিস্থিতিতে কত তফাত। ধোনি মুখে হাসি ধরে রেখেছেন। দেখে এবং কথাবার্তা শুনে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে ভারত অধিনায়ক ওরফে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছেন...
প্রশ্ন: পরপর ছ’টা টেস্ট আমরা বিদেশে হারলাম। কারণ কী?
ধোনি: ইংল্যান্ড সিরিজে এত জন প্লেয়ারের একই সঙ্গে চোট লেগে গেল। এ বারের টিমটা ফিট কিন্তু তৈরি পরিস্থিতি কাজে লাগাতে পারছে না। ব্যাটসম্যানরা সেট হয়েও আউট হয়ে যাচ্ছে। বোলাররা উইকেট ফেলতে দেরি করছে। সব মিলিয়ে আমাদের সেরা খেলাটা বার হচ্ছে না।
প্র: আপনারা অনেকেই অস্ট্রেলিয়ায় এলেন সিরিজ শুরুর বেশ আগে। তাতেও অভ্যস্ত হতে পারলেন না কেন? যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে গত বছর পেরেছিলেন!
ধোনি: বললাম তো, কেন পারছি না ঠিক বোঝানো যাবে না। অ্যাডজাস্টমেন্ট যে সব সময় দশ পনেরো দিনেই হয় এমন তো নয়।
প্র: পরিষ্কার করে বলুন না এখানে হারের কারণ কী?
ধোনি: সহজ করে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা বড় রান করতে যে পারছি না সেটা বড় কারণ।
প্র: অস্ট্রেলিয়া একটা সময় ছিল ৩৭-৩। সেখান থেকে ছ’শোতে চলে গেল। এটা কী আপনাদের বোলিংয়েরও মারাত্মক দুর্বলতা নয়?
ধোনি: নতুন বল এখানে প্রথম ২০-২৫ ওভার কাটিয়ে দিলে তার পর আউট করাটা সমস্যা। আমরা ব্যাটসম্যানদের ওপর পার্টনারশিপের চাপ তৈরি করতে পারিনি।
|
বিদেশে শেষ ৬ টেস্টে |
বনাম ইংল্যান্ড |
• লর্ডস: ১৯৬ রানে হার
• নটিংহ্যাম: ৩১৯ রানে হার - ৪ দিনে
• বার্মিংহ্যাম: ইনিংস ও ২৪২ রানে হার -৪ দিনে
• ওভাল: ইনিংস ও ৮ রানে হার |
বনাম অস্ট্রেলিয়া |
• মেলবোর্ন: ১২২ রানে হার -৪ দিনে
• সিডনি: ইনিংস ও ৬৮ রানে হার - ৪ দিনে |
|
প্র: ০-২ পিছিয়ে গেলেন। আপনাদের অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জেতার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। এর পর ছেলেদের মোটিভেট করবেন কী ভাবে?
ধোনি: আমরা প্রচুর কথা বলেছি সিরিজ নিয়ে। তাতে তো কোনও লাভ হয়নি। আমরা আর সিরিজ জিতব না। তবে আমরা যেটা প্রাণপণে করতে পারি তা হল, পরের দুটো টেস্ট জিতে সিরিজ সমান করা।
প্র: নতুন কোচ ডানকান ফ্লেচার আসার পর থেকে আমরা কেবল হেরে চলেছি। আপনি কি একটু বুঝিয়ে বলবেন, নতুন কোচকে দিয়ে তা হলে হচ্ছেটা কী?
ধোনি: একজন মানুষের ওপর এ ভাবে গোটা টিমের দায়ভারটা চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক নয়। সেটা করলে অন্যায় হবে। ক্রিকেট এমন একটা খেলা যেখানে আপনি যতই প্ল্যানিং করে যান না কেন, মাঠে গিয়ে সত্যি সত্যি আপনাকে পারফর্ম করে দেখাতে হবে।
প্র: এই মুহূর্তে দুশ্চিন্তা কী?
ধোনি: হালকা হালকা ভাবে আমরা ভাল করছি। কিন্তু একসঙ্গে জমাট বেঁধে কিছু করা যাচ্ছে না। সেটাই উদ্বেগের।
প্র: ধোনির জীবনের কঠিনতম সময় কি এটাই যখন কোনও কিছুই ঠিক মতো চলছে না?
ধোনি: আমি তা মনে করি না। আমরা ম্যাচ হেরে গিয়েছি ঠিক আছে। কিন্তু এই যে সব হামাগুড়ি দেওয়ার অভিজ্ঞতা, এগুলোই তো জীবনের জন্য আরও তৈরি করে দেয়। আপনি যত এ সব সমস্যায় পড়বেন, তত আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে।
প্র: এখন কী করা?
ধোনি: খেলা থেকে সম্পূর্ণ সুইচ অফ করে নিতে হবে। সারাক্ষণ ক্রিকেট নিয়ে ভেবে কোনও লাভ নেই। নিজেকে নিজে এ সব ভাবনা থেকে ছুটকারা দিতে হবে। নেটে না গিয়ে বিনোদনমূলক কাজকর্মে মন ডুবিয়ে রাখলে টিমের পক্ষে ভাল হয়।
প্র: আপনার টিমে বয়স্ক প্লেয়ারদের দিন শেষ হয়ে গেছে। আর তারাই টিমকে ডোবাচ্ছে, এ নিয়ে আপনার মতামত কী?
ধোনি: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতাও হয়। আপনারা যাদের কথা বলছেন, তারাই দেশের সেরা। তারা তো ভালই খেলেছে। আর একটা সময় গিয়ে বোধশক্তি আসে যে, যা-ই ঘটুক না কেন, আমার মনকে বর্তমানে রাখতে হবে। অতীতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বেশি ভবিষ্যতেও যেতে হবে না।
প্র: নিজের ক্যাপ্টেন্সি সম্পর্কে কী বলবেন? সাধারণ ধারণা হল, আপনি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।
ধোনি: আমি অনেক কিছুই প্ল্যান-ট্যান করি। কিন্তু সেগুলো কাজে পরিণত হচ্ছে না।
প্র: অনেকের অভিযোগ, আপনি খুব ডিফেন্সিভ ক্যাপ্টেন। সিডনি টেস্টে এর ঝলক বারবার দেখা দিয়েছে।
ধোনি: প্রথম দিকটায় আমাকে স্লিপ কর্ডন রাখতে হয়েছিল বাধ্য হয়ে। ভেবেছিলাম ও দিক দিয়ে বল যাবে। পরে মনে হল আগেই ফিল্ডটা ছড়িয়ে দিলে হত। বলছি না, নির্দিষ্ট কোনও ফর্মুলা হয় না। |