চিকিৎসার নাম করে অবসরপ্রাপ্ত এক মহিলাকে কালনার একটি বেসরকারি হোমে জোর করে আটকে রাখা হয়েছে। এমনই অভিযোগ করল রাজ্যের একটি মানবাধিকার সংগঠন। বৃহস্পতিবার ওই সংগঠনের বর্ধমান জেলা সভাপতি সুভাষ ঢালিকে সঙ্গে নিয়ে ওই হোমে যায় কালনা থানার পুলিশ। তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা।
|
ভারতী ঘোষ। নিজস্ব চিত্র। |
২০১০ সালের অক্টোবরে কলকাতার রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী ভারতী ঘোষকে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য কালনার পূর্ব সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের বিক্রমনগর এলাকার একটি বেসরকারি হোমে ভর্তি করানো হয়। তাঁকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন তাঁরই সহকর্মী রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা মানিক সরকার। সম্প্রতি কালনা থানা, কলকাতার পুলিশ কমিশনার, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগে রাজ্যের একটি মানবাধিকার সংগঠন জানায়, অবিবাহিত ভারতীদেবী কলকাতায় তাঁর মাকে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে থাকতেন। সহকর্মী মানিকবাবুর নিয়মিত যাতায়াত ছিল তাঁর বাড়িতে। ভারতীদেবীর মাকে মাঝে মধ্যেই নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েও রাখতেন মানিকবাবু। তিনিই ভারতীদেবীর মায়ের লিখিত সম্মতি নিয়ে ভারতীদেবীকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান কালনার ওই বেসরকারি হোমে। ওই সংগঠনের আরও অভিযোগ, মায়ের মৃত্যুর পরেও ভারতীদেবীকে তাঁর নিজের ফ্ল্যাটে যেতে দেওয়া হয়নি। বর্তমানে তাঁর ফ্ল্যাটটি ‘দখল’ করে রেখেছেন মানিকবাবু । এমনকী তাঁর পেনশনের টাকা ও ব্যাঙ্কে জমানো অর্থও মানিকবাবুই আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ করে তারা।ওই মানবাধিকার সংগঠনের বর্ধমান জেলা সভাপতি সুভাষ ঢালির দাবি, “হোমে থাকাকালীন ভারতীদেবী তাঁর সমস্যার কথা আমাদের লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। তদন্তে নেমে বিষয়টির সত্যতা মেলে। এর পরেই প্রশাসনকে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।”
বৃহস্পতিবার সুভাষবাবুকে নিয়ে ওই হোমে তদন্তে যায় পুলিশ। কালনা থানার ওসি অমিতকুমার মিত্র কথা বলেন ওই হোম কর্তৃপক্ষ ও ভারতীদেবীর সঙ্গে। হোম কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানান, ভারতীদেবীর চিকিৎসা চলছে। মানিকবাবুই তাঁকে হোমে ভর্তি করিয়ে দিয়ে যান। প্রশাসনের নির্দেশ পেলে তাঁরা অভিভাবকের হাতে ভারতীদেবীকে তুলে দিতে প্রস্তুত। কালনা থানার এক আধিকারিক জানান, হোম কতৃপক্ষকে দ্রুত মানিকবাবুকে কালনায় ডেকে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পরে ভারতীদেবীর সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে গ্রেফতার করা হবে অভিযুক্তকে। এ দিন ভারতীদেবী জানিয়েছেন, তিনি সুস্থ। টেলিফোনে মানিকবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ভারতীদেবী যে এক সময় তাঁর সহকর্মী ছিলেন সে কথা স্বীকার করেন তিনি। তাঁর দাবি, “ভারতীদেবী মনোরোগী ছিলেন। তাঁর মা ও এলাকার বাসিন্দাদের সম্মতি নিয়েই তাঁকে ওই হোমে ভর্তি করানো হয়েছিল।” |