এক দিকে, উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। অন্য দিকে, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। এ সবের জেরেই বন্ধ করা যাচ্ছে না চোলাইয়ের রমরমা। এমনটাই মত আসানসোল আবগারি দফতরের।
আসানসোল আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল-দুর্গাপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তাদের দফতরের অধীন। ১৪টি থানা এলাকাকে বরাকর, আসানসোল, রানিগঞ্জ ও দুর্গাপুরএই ৪টি রেঞ্জ এবং তাদের মধ্যে ৬টি সার্কলে ভাগ করা হয়েছে। এত বড় এলাকায় মাত্র ৪১ জন কনস্টেবল, ৪ জন রেঞ্জ ইন্সপেক্ট্রর, ৭ জন করে এসআই এবং এএসআই রয়েছেন। আসানসোল ছাড়া অন্য কোনও কার্যালয়েই নেই টেলিফোনের ব্যবস্থা। তাই সাধারণ মানুষ চাইলেও ফোন করে খবর দিতে পারেন না।
এক কনস্টেবল জানান, আগ্নেয়াস্ত্র তো দূর, লাঠি ছাড়া তাঁদের হাতে অন্য কোনও অস্ত্রও থাকে না। সেই সব লাঠিও আবার ১৫ বছরের পুরনো। দফতর থেকে খাকি পোশাক দেওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অবস্থাটা যে নিধিরাম সর্দারের মতো, স্বীকার করছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মীর আবার অভিযোগ, “রাজনৈতিক হস্তক্ষেপই সব চেয়ে বড় বাধা। আমরা এক জায়গায় হয়তো দোকান বন্ধ করে দিলাম। অন্য জায়গায় অভিযান চালিয়ে প্রথম জায়গায় ফিরে এসে দেখি, ফের রমরমিয়ে ব্যবসা চলছে।” এ ছাড়াও রয়েছে মামলার দীর্ঘসূত্রতা। বাজেয়াপ্ত করা জিনিসপত্র রাখার কোনও জায়গা নেই। নিলামের নির্দেশ পেতেও প্রায় ১০ বছর গড়িয়ে যায়।”
আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিভাগের অধীনে বৈধ দেশি মদের দোকান ১৮০টি। এ ছাড়া আছে ১১টি ‘অফ শপ’, ৮০টি ‘অন শপ’। এ বছর রাজস্ব আদায়ে আসানসোল আবগারি দফতর রাজ্যের শীর্ষে। ২০১০-২০১১ বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২০৯ কোটি টাকা। ২০১১-২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৪২ কোটি টাকা। এক বছরে আর্থিক বৃদ্ধি ১৫.৪১ শতাংশ। গত এক বছরে এলাকায় মদের দোকানের সংখ্যা বাড়াই এর কারণ বলে জানিয়েছেন আবগারি দফতরের কর্তারা।
সদিচ্ছা নিয়ে অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। জামুড়িয়ার সিপিএম নেতা সুজিত দত্ত, নকশাল নেতা সাধন দাসেরা দাবি করেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ছাড়া চোলাইয়ের রমরমা বন্ধ করা যাবে না। তাঁদের কথায়, “আর্থ-সামাজিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন চাই। তা হলে হয়তো আবগারি দফতরের কোনও প্রয়োজনই হবে না।” অন্য দিকে, তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বলেন, “বর্তমান রাজ্য সরকার চোলাই এবং জাল মদ বন্ধ করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে। পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পরিকল্পনা নিয়েছেন।” বিরোধীদের বক্তব্য প্রসঙ্গে তাপসবাবু বলেন, “গত ৩৪ বছরে কোনও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যে হয়নি, তা ওদের এই সব বক্তব্য থেকেই পরিষ্কার। ওদের ব্যর্থতায় আবগারি দফতরের পরিকাঠামোও বিপর্যস্ত।”
আবগারি দফতরের জয়েন্ট কমিশনার (বর্ধমান পশ্চিম) সুজিত দাস জানান, সীমিত ক্ষমতা সত্ত্বেও জুলাইয়ে তাঁরা দুগার্পুরের মায়াবাজার, অক্টোবরে জামুড়িয়ার নিঘায় জালমদ তৈরির ভাটি বন্ধ করেছেন তাঁরা। প্রতি মাসে নিয়মিত অভিযান চলছে ও ফল মিলছে বলে তাঁর দাবি। |