দোকানে কাঁচের পাল্লার ভিতরে সাজানো বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির ডালি। ভিন্ন ভিন্ন নাম। দেখলে জিভে জল তো আসতেই পারে। কিন্তু মিষ্টি তৈরির প্রধান উপাদান ছানা নিয়ে দুর্গাপুর স্টেশনে যে কাজ কারবার চলে তা দেখার পরে আর তা হবে কি না সন্দেহ!
সকাল ৮টা। বধর্মানের দিক থেকে এসে থামে লোকাল ট্রেন। ‘ট্রেনে ছানা নিয়ে যাওয়া নিষেধ’ জাতীয় রেলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রীতিমতো কামরা বোঝাই হয়ে আসে ছানা। এর পরে ছানার বালতিগুলি নিয়ে গিয়ে রাখা হয় স্টেশনের বাইরের একটি পরিত্যক্ত চাতালে। চারিদিক আবর্জনায় ভরা। পাশেই নর্দমা। |
কী নেই সেখানে? ছেঁড়া কাগজ, মাটি, খড় থেকে শুরু করে গরু, ছাগলের মল পর্যন্ত। সেখানেই বালতি থেকে ঝুড়িতে ছানা তুলে রাখা হয় অতিরিক্ত জল বের করার জন্য। ফলে রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকেই যায়। পথ চলতি মানুষজন পরিস্থিতি দেখে থমকে দাঁড়ান ক্ষণিকের জন্য। তার পর আবার চলেও যান। এক নিত্যযাত্রী রঞ্জন বসু বলেন, “সকালে ট্রেন ধরতে গিয়েও দেখি। আবার ফেরার সময়ও দেখি। এ সব একটু পরিষ্কার জায়গায় করা উচিত। দেখেশুনে মিষ্টি খেতে আর ইচ্ছে হয় না।” আরও এক নিত্যযাত্রী সুস্মিতা বণিকের কথায়, “আগে অনেক মিষ্টি খেতাম। কিন্তু যাতাযাতের পথে এই দৃশ্য দেখে আর তেমন খেতে পারি না।” যদিও এক মিষ্টির দোকানের মালিক শ্যামল প্রামাণিক বলেন, “মিষ্টি তৈরির পদ্ধতিটি বেশ দীর্ঘ। চড়া তাপে রাখলে ছানায় যদি কোনও জীবাণু থাকেও তা নষ্ট হয়ে যায়।”
চিকিৎসক তথা দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার মিহির নন্দী বলেন, “সংক্রমণের পাশাপাশি রুচিরও ব্যাপার তো রয়েছে। ছানার কারবারিদের মধ্যে সচেতনতার অভাবেই এই পরিস্থিতি।” দীর্ঘ দিন ধরে ছানার কারবারে যুক্ত সদানন্দ মণ্ডল, বিপদতারণ ঘর। তাঁরা স্টেশন থেকে ছানা নিয়ে শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করেন। চাতালটি যে নোংরা তা জানেন তাঁরাও। তবে তাঁদের দাবি, ছানার সঙ্গে চাতালের কোনও সংযোগই থাকে না। ফলে নাক সিঁটকানোর কিছু নেই। ভয় নেই সংক্রমণেরও।
সাধারণ মানুষ বা চিকিৎসকরা যাই বলুন, ছানার কারবারিরা শুনছেন কৈ! |