দলের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ এনে ইস্তফা দিলেন সিপিআইয়ের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য তথা কালনা ১ লোকাল কমিটির সম্পাদক সেলিম শেখ। শুক্রবার জেলা নেতৃত্বের হাতে তাঁর ইস্তফা পত্র পৌঁছে গিয়েছে। সিপিআইয়ের বর্ধমান জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অরুণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আজই সেলিম শেখের চিঠি পেয়েছি। চিঠিটি পূর্ণাঙ্গ ভাবে খতিয়ে দেখে তাঁকে পদত্যাগ করা থেকে দলের তরফে বিরত করা হবে। পাশাপাশি রাজ্য নেতৃত্বের গোচরেও আনা হবে বিষয়টি।”
পদত্যাগী এই নেতার দাবি, ৪টি শাখা কমিটির সম্পাদকেরা আগেই তাঁর হাতে নিজেদের পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। কালনা মহকুমার মধ্যে কালনা ১ লোকাল কমিটিতে সিপিআই ছিল বিশেষ শক্তিশালী। এলাকার ছ’টি শাখা কমিটির মধ্যে চারটির সম্পাদকই পদত্যাগ করায় এলাকায় দলের ভিত যে নড়ে গেল তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসে ধাত্রীগ্রামের একটি প্রেক্ষাগৃহে নিজের অনুগামীদের নিয়ে সিপিআই-এ যোগ দেন সেলিম শেখ। সেই সময়ে ওই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তৎকালীন অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়।
পদত্যাগী নেতা তাঁর চিঠিতে জানিয়েছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় দলের সদস্য এবং অনুগামীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এলাকায় পঞ্চায়েতের চারটি আসন এবং একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দল তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলে। দল শক্তিশালী জায়গায় পৌঁছলে বড় শরিক সিপিএমের অসহযোগিতা শুরু হয় বলে অভিযোগ সেলিম শেখের। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গোঁজ প্রার্থী দাঁড় করানোর অভিযোগও এনেছেন তিনি। এমনকী, জানিয়েছেন, দলের কর্মীরা নানা জায়গায় আক্রান্ত হলেও ডেকে সাড়া মেলেনি সিপিএম নেতাদের। অথচ, বামফ্রন্টের যাবতীয় কর্মসূচিতেই তাঁদের দলের কর্মীরা সক্রিয় ভাবে অংশ নেন। বড় শরিকের দুর্ব্যবহারের কথা লিখিত ভাবে জেলাস্তরে বার বার জানিয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি। সর্বোপরি এলাকার মানুষের রাস্তা, সেতু-সহ নানা নানা ক্ষেত্রে যে চাহিদা তৈরি হয়েছিল, তার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। এলাকার মানুষের চাহিদার প্রতি দল কখনও সুবিচার করেনি বলেও চিঠিতে জানিয়েছেন এই পদত্যাগী নেতা। তাঁর সরাসরি অভিযোগ, দল জেলার সেই সমস্ত লোকাল কমিটিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, যেখানে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে তাঁদের সদস্য রয়েছেন। দীর্ঘদিন দলের জেলা কমিটির বঞ্চনার ফলে এলাকার কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই হতাশায় নিমজ্জিত।
সেলিম শেখ এ দিন বলেন, “দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে যুক্ত থেকেও এলাকার মানুষের জন্য ভাল কিছু করতে পারিনি। এ ব্যাপারে জেলা নেতৃত্ব পাশে ছিল না। কার্যত হতাশা থেকেই পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিই। আমার মতো একই রকম হতাশায় চার শাখা কমিটির সম্পাদকও পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন।” নান্দাই এলাকার বাসিন্দা ইসলাম নবি শেখের কথায়, “সপ্তাহ খানেক আগেও আমি সিপিআইয়ের শাখা কমিটির সম্পাদক ছিলাম। এখন আর নেই। মানুষের কাছে জবাব দিতে পারছি না বলেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত।”
এখনও পর্যন্ত অন্য কোনও দলে যোগ দেননি সেলিম শেখ। তবে স্থানীয় সূত্রের এবং রাজনৈতিক মহলের খবর, কংগ্রেস ও তৃণমূল দু’টি দল থেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
|