‘জাপানিজ ওয়াইফ’-এ সুন্দরবনের স্কুলশিক্ষক স্নেহময় চট্টোপাধ্যায় কোনও দিন চোখেই দেখেননি তাঁর জাপানি ‘স্ত্রী’ মিয়াগিকে। তাতে প্রেমে কোনও ব্যাঘাত ঘটেনি। দু’পক্ষের চিঠিতেই চলত ভালবাসার আদান-প্রদান।
১১ বছর ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের পদ্মপুকুর গ্রামের মুকুল হাসান আর সোলের জিনি-আ-ইয়ংয়ের প্রেম অবশ্য চিঠিতে নয়। সামনাসামনিই তাঁরা পরস্পরকে দেখেছেন। ভাষার ব্যবধান প্রেমে ব্যাঘাত ঘটায়নি। সেই প্রেম বৃহস্পতিবার নতুন ‘আলো’ নিয়ে এল দু’জনের জীবনে। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ের বাঁধনে বাঁধা পড়লেন তাঁরা।
মুকুলের বাবা এম এ ওয়াহাব একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার। সংস্থার চক্ষু হাসপাতাল রয়েছে সুন্দরবন-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে এবং বিদেশেও। মুকুল সংস্থার কো-অর্ডিনেটর। ২০০০ সালে ফরাসি সাহিত্যিক দমিনিক লাপিয়েরের হাত ধরে ভাঙড়ে আসেন জিনি-আ-ইয়ং। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন দক্ষিণ কোরিয়ার সোলের ওই তরুণী। তাঁকে কাজে নেন ওয়াহাব। সংস্থার কোয়ার্টারেই থাকতেন। তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় মুকুলের। তার পরে প্রেম গড়িয়েছে নিজের ছন্দে। |
‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’। প্রথম দর্শনেই মুকুলের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন জিনি-আ-ইয়ং। যিনি ১১ বছরে মুকুলের ‘আলো’ হয়ে গিয়েছেন। ওই নামেই প্রেমিকাকে এত দিন ডাকছিলেন মুকুল। মোটামুটি ভাবে বাংলা বলতে শিখেছেন আলো। চিনেছেন রবীন্দ্রনাথকে। বিয়ের দিন লাল বেনারসি ও প্রচুর গয়নায় সেজে এক মুখ হাসি ছড়িয়ে নববধূ বললেন, “প্রথম দেখাতেই আমার ওঁকে ভাল লেগে গিয়েছিল। আজ বিয়ে। দারুণ মজা লাগছে।” শেরওয়ানিতে মুকুল সকাল থেকেই ব্যস্ত অতিথি-অভ্যাগতদের আপ্যায়নে। তাঁর কথায়, “ও-ই প্রথমে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। বাড়িতে কী হবে, ভেবে প্রথম দিকে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু বাড়ির লোকজন সকলেই আলোকে মেনে নিয়েছেন। ওঁর মতো মেয়ে হয় না।” ভাঙড়ে সংস্থার অফিসেই এ দিন বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। রেজিস্ট্রি হয়ে গিয়েছে ১ ডিসেম্বর। এই উপলক্ষে দুই পরিবারের আত্মীয়-স্বজনই উপস্থিত। সরগরম গোটা ভাঙড়ই। বিয়েবাড়িতে খাওয়া-দাওয়া হল পুরোপুরি বাঙালি মেনু অনুযায়ী ভাত, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, রুই মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস, চাটনি, এবং নতুন গুড়ের সন্দেশ।
বিদেশিনি পুত্রবধূকে পেয়ে আপ্লুত ওয়াহাব। বললেন, “দু’জনের সম্পর্কের কথা জেনে আমরা আপত্তি করিনি। তার উপরে আলো এত দিন এখানে রয়েছে। আমাদের সকলের মন জয় করে নিয়েছে।” বাঙালি জামাই পেয়ে খুশি জিনি-আ-ইয়ংয়ের মা-বাবাও। মেয়ে-জামাইকে আশীর্বাদ করবেন বলে তাঁরা দিন কয়েক আগে চলে এসেছেন সোল থেকে। মুকুলের শ্বশুর ও-হি-কিং বলেন, “এ দেশে আমাদের কোনও আত্মীয়-স্বজন নেই। মুকুলকে পেয়ে এ দেশের সঙ্গে আত্মীয়তা হয়ে গেল।” কাল, শনিবার নবদম্পতি মধুচন্দ্রিমায় যাচ্ছেন বুদ্ধগয়া। শুরু নতুন পথ চলার। |