সম্পাদকীয় ১...
পূর্ণগ্রাস
০০৮ সালের জুলাই হইতে ২০১১-র ডিসেম্বর। দূরত্ব আড়াই বৎসর মাত্র। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনমোহন সিংহের অবস্থানের মধ্যে আলোকবর্ষের দূরত্ব। ২০০৮ সালে পরমাণু চুক্তি রূপায়ণ করিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনমোহন সিংহকে কি আজকের প্রধানমন্ত্রী চিনিতে পারেন? খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের প্রশ্নে ইউ পি এ সরকার বিরোধীদের অন্যায় চাপের সম্মুখে নতিস্বীকার করিল। আরও এক বার। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আসিলে কৃষকদের লাভ হইত না ক্ষতি, ক্রেতারা কতখানি লাভবান হইতেন সমস্ত প্রশ্ন এখন অবান্তর। এই কুনাট্যের ক্ষতির তালিকাটি দীর্ঘ এবং নাটকীয়। প্রথম ক্ষতি কেন্দ্রের শাসক জোটের। যাহাদের সামান্যতম দৃঢ়তাও নাই, তাহারা কোন অধিকারে দেশ শাসন করে এই প্রশ্নটি উঠিলে অতঃপর জবাব দেওয়ার কিছু থাকিবে না। ইহা শুধু শাসক দলেরই নহে, দেশেরও ক্ষতি। যে দেশের প্রশাসনের মেরুদণ্ডের জোর নাই, সেই দেশে বিনিয়োগ করিতে কেহ উৎসাহী হইবে কি? রিটেলে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নটি বহু দিন অমীমাংসিত পড়িয়া ছিল। তাহাতে ক্ষতি হইতেছিল। কিন্তু বর্তমান কুনাট্যে যে ক্ষতি হইল, তাহার তুলনায় সেই ক্ষতিও নগণ্য ছিল। বিনিয়োগের মূল শর্ত দেশের পরিস্থিতির উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকিতে হইবে। মনমোহন সিংহের এই নতিস্বীকার বলিয়া দিল, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর সরকারের নামমাত্র নিয়ন্ত্রণও নাই। ফলে, বিনিয়োগ করিলে তাহার ভবিষ্যৎ কী, এই প্রশ্নটির কোনও সদুত্তর বিনিয়োগকারীদের নিকট থাকিবে না। বিশ্ব-অর্থনীতির বর্তমান যে অবস্থা, তাহাতে কোনও অনিশ্চিত দেশে বিনিয়োগ করিতে কেই বা সাহস করিবে? দেশের এই ক্ষতির দায় মনমোহন সিংহকেই বহন করিতে হইবে। যিনি দেশের আর্থিক সংস্কারের ভগীরথ হিসাবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পাইতে পারিতেন, তাঁহার এই পরিণতিকে ভাগ্যের পরিহাস ভিন্ন আর কী বলা যায়? ভাগ্য শুধুমাত্র সাহসীদেরই সহায় হয়, এই কথাটি তিনি বহু মূল্যে শিখিলেন।
এই কুনাট্যের বিজয়িনী কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তিনি অবশ্যই জিতিয়াছেন পশ্চাদপসরণের অধিকার। তিনি তাঁহার রাজ্যের জন্য, সমগ্র দেশের জন্য অনুন্নয়ন অর্জন করিলেন। নয়াদিল্লির বাতাস বলিতেছে, তাঁহার আপত্তি আছে জানিয়াই কেন্দ্রীয় সরকার সংসদের বর্তমান অধিবেশনে অসামরিক বিমান ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্রের প্রস্তাবটি উত্থাপনই করিবে না। তাঁহার আরও এক দফা জয়। তবে ভাবিয়া দেখার, এই জয়ই কি তাঁহার কাম্য? বামপন্থীদের অতিব্যবহারে জীর্ণ রাজনীতিকে অবলম্বন করাই কি তাঁহার মোক্ষ? অন্য বিরোধীদের অবস্থানও প্রণিধানযোগ্য। যাঁহারা পেশাদার বামপন্থী, রিটেলে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের প্রশ্নে তাঁহাদের অবস্থান স্পষ্ট তাঁহারা বিরোধী। তাঁহারা তাঁহাদের অবস্থানে আদি কাল হইতে অনড়। অশনিসংকেত নরেন্দ্র মোদীসহ বি জে পি-র অবস্থানে। বাজার অর্থনীতিতে আমূল বিশ্বাসী গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত ভাবেই রিটেলে বিদেশি বিনিয়োগের পক্ষপাতী ছিলেন। উত্তরাখণ্ড, কর্নাটকেও তাঁহার দলের অবস্থান বিদেশি বিনিয়োগের পক্ষেই ছিল। অধুনা বি জে পি-সঙ্গচ্যুত ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কও প্রগতিশীল, উদারনীতিতে বিশ্বাসী হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। আজ যখন তাঁহারা বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতায় মুখর, তখন বুঝিতে সমস্যা হয় না যে এই বিরোধিতার কোনও আদর্শগত ভিত্তি নাই। ইহা শুধু বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা। এবং, আরও বোঝা যায়, পরবর্তী নির্বাচনে বি জে পি ক্ষমতায় আসিলে যখন সংস্কারের পথে হাঁটিতে চেষ্টা করিবে, তখন কংগ্রেসও কোনও আদর্শের পরোয়া না করিয়া এই একই বিরোধিতার খেলায় নামিবে। সংকীর্ণ রাজনীতির এই পচা ডোবায় ভারতের সংস্কারের সূর্যাস্ত হইল। অথবা বলা চলে, ইহা এক অনন্ত পূর্ণগ্রাস গ্রহণ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.