|
|
|
|
চিদম্বরমের বিরুদ্ধে কোর্টের নির্দেশকেও অস্ত্র করছে বিজেপি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রায় দু’সপ্তাহ পরে সংসদ ফের স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করলেও চিদম্বরমকে বয়কট এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারের ব্যাপারে অনড় থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। এই সূত্রে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-বিরোধী প্রচারও নতুন করে সংসদে শুরু করতে চায় তারা। গত কাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একটি বিল পেশের সময় বিজেপি হট্টগোল করে। আর আজ চিদম্বরমের ইস্তফার দাবিতে দুপুর দু’টো পর্যন্ত সংসদের দুই কক্ষই অচল রাখে তারা। দুর্নীতি-বিরোধী প্রচারে তাদের অক্সিজেন জোগায় টু-জি মামলা নিয়ে আদালতের একটি নির্দেশ।
এ দিন টু-জি মামলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রমাণ পেশের জন্য জনতা পার্টির সভাপতি সুব্রহ্মণ্যম স্বামীকে অনুমতি দেয় বিশেষ সিবিআই আদালত। শুধু তাই নয়, কর্নাটকে অবৈধ খননে দুর্নীতির অভিযোগে বিদেশমন্ত্রী তথা সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে রাজ্যের লোকায়ুক্ত পুলিশ। কংগ্রেসেরই রাজ্যের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ধর্ম সিংহ ও জেডি(এস)-এর কুমারস্বামীর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এই দুই বিষয়কে অস্ত্র করে বিজেপি দুর্নীতি-বিরোধী প্রচারের জোর বাড়াতে চাইছে।
বস্তুত, শীতকালীন অধিবেশনে আগেই টু-জি কাণ্ডে অভিযুক্ত প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী আন্দিমুথু রাজার সঙ্গে এক সারিতে চিদম্বরমকে রেখে তাঁকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজেপি। গত কাল তারই ‘ঝলক’ দেখিয়েছে তারা। আর আজ সকালে বিজেপি-র সংসদীয় নেতাদের বৈঠকে স্থির হয়, চিদম্বরমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি, কালো টাকা উদ্ধারের মতো বিষয়গুলি নিয়ে ফের সরব হবেন তাঁরা। তাই এ দিন সংসদ শুরু হতেই বিজেপি চিদম্বরমের ইস্তফার দাবিতে সংসদ অচল করে রাখে। বাইরে সেই সময় তাদের নজর ছিল টু-জি মামলার শুনানির দিকে।
আদালতে এ দিন কী হয়েছে?
টু-জি কেলেঙ্কারিতে প্রাক্তন টেলিকমমন্ত্রী এ রাজার সঙ্গে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও জড়িত বলে আদালতে অভিযোগ করেছিলেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। আদালতের নির্দেশে ১৭ ডিসেম্বর সাক্ষী হিসেবে এজলাসে হাজিরা দিতে হবে স্বামীকে। চিদম্বরমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করবেন তিনি। এই ব্যাপারে তাঁকে অনুমতি দিয়েছে বিশেষ আদালত। স্বামী আবার চাইছেন, সিবিআই কর্তা এইচ সি অবস্তি ও অর্থ মন্ত্রকের প্রাক্তন যুগ্মসচিব সিন্ধুশ্রী খুল্লারকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির করাতে। সেই ব্যাপারেও ১৭ তারিখ সওয়াল করতে পারেন তিনি। তাঁর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হলে আদালত অবস্তি ও খুল্লারকে হাজিরা দিতে বলতে পারে। আবার সরাসরি চিদম্বরমকেও সমন পাঠাতে পারে। |
এ রাজা যদি দোষী হন,
তা হলে চিদম্বরমও দোষী।
এটাই আমাদের অবস্থান।
সুষমা স্বরাজ
বিরোধী দলনেত্রী |
আদালত তো চিদম্বরমের
বিরুদ্ধে কিছু করেনি।
তা
হলে এই রাজনীতি কেন?
সলমন খুরশিদ
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী |
|
আদালতের এই নির্দেশ বিশ্লেষণ করে বিজেপি নেতৃত্ব স্থির করেন, সংসদ কিছু ক্ষণ ‘প্রতীকী ভাবে’ অচল রেখে যাবতীয় বিষয়কে সামনে নিয়ে আসা হবে। লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রার শেষ দিনে ঘোষণা হয়েছিল, এনডিএ-র সব সাংসদ হলফনামা দিয়ে সংসদকে জানাবেন, বিদেশি ব্যাঙ্কে তাঁদের অবৈধ সম্পত্তি নেই। আগামিকালই আডবাণী, সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলির নেতৃত্বে লোকসভার স্পিকার ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে সেই হলফনামা জমা দেওয়া হবে। এই দিনটাকেই বিজেপি ‘দুর্নীতি-বিরোধী’ দিবস পালন করবে। অর্থাৎ, সংসদ চালু হওয়ার পরে বিজেপি আবার দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল ভাবে আক্রমণে নামতে চাইছে।
চিদম্বরম-কৃষ্ণ-সহ দুর্নীতির বিষয়টি যেমন হাতছাড়া করতে চায় না বিজেপি, তেমনই তাদের একাংশ সংসদ অচলের দায়ও ঘাড়ে নিতে রাজি নয়। আডবাণী, অরুণ জেটলিরা এই দলে। আডবাণী বলেন, “তাই আমরা প্রতীকী ভাবে সংসদ অচল করে রাখার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু চিদম্বরমকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত থেকে আমরা পিছু হটব না।” এ দিকে সংসদ সাময়িক ভাবে অচল হওয়ার পরে আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। পরে তিনি বলেন, “আদালত যখন চিদম্বরমের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করেনি, তখন শুধু রাজনীতি করার স্বার্থে সংসদ অচল করে রাখার কোনও অর্থ হয় না।”
এই পরিস্থিতিতে লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় ফোন করেন বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজকে। সুষমা তাঁকে বলেন, “দুপুর দু’টো থেকে আমরা সংসদে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করব।” দু’টোর পরে সংসদ চালু হলে মূল্যবৃদ্ধির আলোচনাতেও সুষমা দুর্নীতি-সহ যাবতীয় প্রসঙ্গ টেনে সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেন। চিদম্বরমের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “এ রাজা দোষী হলে চিদম্বরমও দোষী। এটাই আমাদের অবস্থান।” তাঁর কথাতেই পরিষ্কার হয়ে যায়, দুর্নীতি নিয়ে কোন পথে সরকারকে কোণঠাসা করতে চলেছেন তাঁরা। বক্তৃতায় শুধু চিদম্বরমই নন, মনমোহন সিংহ থেকে মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া, কাউকেই বিঁধতে বাকি রাখেননি সুষমা। তিনি বলেন, “সরকারের দুর্নীতি ও ভুল নীতির খেসারত আম-আদমিকে দিতে হচ্ছে। সরকার যদি সামাল দিতে না পারে, তা হলে গদি ছেড়ে দিক। আমরা সামলে দেব।” প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে আডবাণী বলেন, “এই মুহূর্তে সরকারের সামনে নেতৃত্বের সঙ্কট। প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বের অধিকার খুইয়েছেন।” কর্নাটকের প্রসঙ্গে প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “ইয়েদুরাপ্পার সময় কংগ্রেস যে মাপকাঠি নিয়েছিল, এস এম কৃষ্ণর ক্ষেত্রেও একই মাপকাঠি বজায় রাখতে হবে।” কাল এই বিষয়টিও সংসদে তোলা হবে। |
|
|
|
|
|