|
|
|
|
মঙ্গলকোট |
তদন্ত করে ঘরছাড়াদের ফেরাবে পুলিশ, সিদ্ধান্ত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাটোয়া |
মঙ্গলকোটে সিপিএমের ঘরছাড়াদের গ্রামে ফেরাতে উদ্যোগী হল কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে এ নিয়ে একটি সর্বদলীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে সিপিএমের পক্ষ থেকে ১৬৯ জন কর্মী-সমর্থকের নামের একটি তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের ঘরে ফেরানোর দাবি জানিয়েছে সিপিএম। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের পরে ঘরছাড়াদের গ্রামে ফিরিয়ে দেবে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ।
সিপিএমের অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই মঙ্গলকোটের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। সেই সন্ত্রাসে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মঙ্গলকোট, ঝিলু-২ ও ভাল্যগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। সিপিএমের তালিকা অনুযায়ী মঙ্গলকোটে ৬৯ জন, ঝিলু-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বনপাড়া গ্রামে ১৪ জন ও ভাল্যগ্রামের খেঁড়ুয়াতে তাঁদের ৪০ জন কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া।
২০০৯ সালের ১৫ জুন খেঁড়ুয়াতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন সিপিএমের বধর্মান জেলা কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়। ফাল্গুনীবাবুর মৃত্যুর পরে তৃণমূল ও কংগ্রেসের বহু মানুষ গ্রামছাড়া হয়েছিলেন। শতাধিক বাড়ি আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। বিরোধীরা সেই সময়ে প্রত্যেকটি ঘটনার পিছনে সিপিএমের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে সেই খেঁড়ুয়া থেকেই তাঁদের কর্মীদের ঘরছাড়া করেছে তৃণমূল, এই অভিযোগ তুলে বারবার বর্ধমান জেলা ও কাটোয়া মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে সিপিএম। গত ১১ নভেম্বর সিপিএমের এক প্রতিনিধি দল মহকুমাশাসকের কাছে জানান, মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ভাঙড়, শাসন-সহ বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম কর্মীরা যখন বাড়ি ফিরছেন, তখন মঙ্গলকোটের সিপিএম সমর্থকদেরও ফিরিয়ে আনা হোক।
কাটোয়ার মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণমের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনপ্রসন্ন ঘোষ। সিপিএম, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন ওই সভায়। বৈঠকে কাটোয়ার এসডিপিও ধ্রুবজ্যোতি দাস এবং মঙ্গলকোটের ওসি দীপঙ্কর সরকারও ছিলেন। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সিপিএমের ঘরছাড়াদের বাড়ি ফেরানো নিয়ে সবক’টি দলই একমত হয়েছে। তবে পুলিশ আধিকারিকেরা সিপিএমের কাছে পরিবার পিছু নামের তালিকা চাইলে সিপিএমের তরফে আপত্তি জানানো হয়। তাঁদের কথায়, “আমরা যে তালিকা দিয়েছি, সেই তালিকা দেখেই প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।” বিজেপির অলোকতরঙ্গ গোস্বামীও বলেন, “এ সব বলে পুলিশ অযথা ঘরছাড়াদের ফেরানোর ব্যাপারে দেরি করতে চাইছে।”
শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, সিপিএমের দেওয়া তালিকা নিয়ে তদন্ত করবে পুলিশ। ওই তালিকায় কোনও অভিযুক্তের নাম থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার পরে ঘরে ফেরানো হবে তাঁকে।
সিপিএমের বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরীর অভিযোগ, “নিবার্চনের পর থেকে তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্য আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তার মধ্যে মহিলারাও রয়েছেন।” তৃণমূল নেতা অপূর্ব চৌধুরী পাল্টা বলেন, “সিপিএমের আমলে কখনও সর্বদলীয় বৈঠক করে তৃণমূলের ঘরছাড়াদের ফেরানোর উদ্যোগ হয়নি। এখন হচ্ছে। আমরা বলেছি, প্রশাসন যা করবে, তাতে আমাদের সহযোগিতা থাকবে।” কংগ্রেসের দীনবন্ধু পালও ঘরছাড়াদের ফেরানোর জন্য প্রশাসনকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কাটোয়ার মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, “সমস্ত রাজনৈতিক দল ঘরছাড়াদের ফেরানোর জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের পরে দিন ঠিক করে ঘরে ফেরানো হবে তাঁদের।” |
|
|
|
|
|