কান্না নিয়ে ফিরল ছটফটে খুশির কফিন
দের ছুটির কিছুদিন আগে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় যেমন খুশি তেমনি সাজো প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিল। টেলিফোনে সে কথা ঠাকুমা ও কাকাকে জানানোর সময়ে আনন্দে ভাসছিল ছোট্ট খুশি। তখন জানিয়েছিল বাড়ি গিয়ে সেই ছবি দেখাবে। সবজিওয়ালির বেশে প্রথম পুরস্কার পাওয়া সেই ছবি ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসে জনে জনে ডেকে দেখিয়েছিল সে। মালদহের রতুয়ার ভাদো বটতলার বাড়িতে তার পর থেকে সবাই তাকে সবজিওয়ালি বলে ক্ষেপাত। তাতে অবশ্য কোনও হেলদোল ছিল না তার। বরং খুশিই হত। ২০ দিন বাদে সেনাকর্মী বাবার সঙ্গে হরিদ্বার ফেরার সময় ঠাকুমাকে কাঁদতে নিষেধ করে তার হাতে ওই ছবিটা গুঁজে দিয়ে বলেছিল, কেঁদো না, মার্চ মাসে পরীক্ষার পর ফের আসব। তার অনেক আগেই কফিনবন্দি হয়ে ফিরছে ৭ বছরের খুশি। আস্ত দেহ নয়, আগুনে পোড়ার পরে যে হাড়গোড় মিলেছে তাই-ই আসছে কফিনে। সোমবার গভীর রাতে দুন এক্সপ্রেসের বি-১ কামরায় কয়েকজনের মতো ঝলসে গিয়েছে আতিয়া বেওয়ার আদরের নাতনি, কাকা হাবিব মোস্তাফার আদরের ভাইঝি, নাদুল ও উমে সালমার বোন খুশি ওরফে মেহজুবির ছোট্ট দেহ। ধানবাদ থেকে বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই রতুয়ার বাড়িতে কফিন পৌঁছনোর কথা। দুন এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার সংবাদ গভীর রাতেই টেলিফোনে বাড়িতে জানান সেনাকর্মী আকমান আলি। তার পর থেকে ওই পরিবারে আর হাঁড়ি চড়েনি।
দুদিন বাদেও প্রাণবন্ত খুশির ওই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পরিবার সহ প্রতিবেশীদের কেউই। শোকে কাতর হয়ে কপাল চাপড়ানোর পাশাপাশি দুষছেন এক অচেনা যাত্রীকে। পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, ১৫ তারিখ বাড়ি থেকে কলকাতা যান আকমান। সেখানে শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন। রেলের চাকরির কর্মসূত্রে তাঁর শ্বশুর কলকাতাতেই থাকেন। কয়েকদিন সেখানে কাটিয়ে হরিদ্বারে রওনা দেন ওই ট্রেনে চেপে। একই সঙ্গে টিকিট মেলেনি তাদের। পাশে বি-২ কামরায় ছিল একটি আসন। পরিবার সূত্রেই জানা যায়, খুশিও বাবাকে ছাড়তে চাইছিল না। তাই শেষ মুহূর্ত পর্য়ন্ত চেষ্টা করেছিলেন ওই কামরায় থেকে যেতে। সেজন্য একা এক পুরুষ সহযাত্রীকে বারবার অনুরোধ করেছিলেন পাশের কামরায় তাঁর আসনে শুতে যেতে। কিন্তু রাজি হননি তিনি। ফলে খুশি ঘুমানোর পর গভীর রাতে পাশের কামরায় শুতে যান তিনি। তার কিছুক্ষন বাদেই ঘটে ওই দুর্ঘটনা। ওই কামরায় থাকলে যেভাবেই হোক মেয়েকে তিনি বাঁচাতে পারতেন বলে পরিবারের লোকজনকে জানিয়েছেন। কাকা হাবিব মোস্তাফা বলেন, “আমরা হতভাগ্যই! কিন্তু ওই যাত্রীও কম হতভাগা নয়। দাদার কাছে শুনে যা মনে হয়েছে, তাতে ওই যাত্রী একটু মানিয়ে নিলে খুশিকে হয়ত বাঁচানো যেত। ওই জন্য একটা ফুটফুটে শিশুর প্রাণ বাঁচতে পারত। দাদার কাছেই শুনেছি, অসংখ্যবার ওই যাত্রীকে অনুরোধ করেছিল সে।” এক বছর আগে হরিদ্বারে পোষ্টিং হয় আকমান আলির। সেখানেই একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত খুশি। ভাদোতে এলে একমুহূর্তও ঘরে থাকত না। দারুন মিশুকে হওয়ায় প্রত্যেকেই তাকে ভালোবাসত। ঠাকুমা আতিয়া বেওয়া কোনক্রমে বলেন, “বার বার বলেছিল কয়েক মাস পর পরীক্ষা হলেই চলে আসবে। কিন্তু খুশি যে এ ভাবে বাড়ি আসবে তা আমরা কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।” ছবি পারিবারিক অ্যালবাম থেকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.