বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যেই উৎসব-হাহাকারের শিবির বদল
টোলগের হ্যাটট্রিকে ৮ গোল ইস্টবেঙ্গলের
ইস্টবেঙ্গল-৮ (রবিন, ওপারা-২, টোলগে হ্যাটট্রিক-সহ ৪, বলজিৎ)
হ্যাল-১ (হামজা-পেনাল্টি)
গোল হলেই সাইডলাইন থেকে একটা চিৎকার অনবরত ভেসে আসছিল, “ওয়ান্ট মোর....ওয়ান্ট মোর..।” তার পরেই চোখ বুজে লম্বা লাফ। আকাশের দিকে দু’হাত তুলে ঈশ্বরকে খোঁজার প্রয়াস! মোহনবাগান ম্যাচ হারার পর যে বিষণ্ণতার চাদরে ঢাকা পড়েছিলেন, সেটা এক ঝাপটা মেরে খুলে ফেললেন ট্রেভর মর্গ্যান।
মাত্র বাহাত্তর ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই মহা-বিস্ফোরণ। বেঙ্গালুরুতে হ্যালকে ৮-১ গোলে হারিয়ে অনেক ইতিহাস গড়ল ইস্টবেঙ্গল। আই লিগে লাল-হলুদের সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় (ইস্টবেঙ্গলের সর্বোচ্চ জয় ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ৬-১)। এই প্রথম কলকাতার কোনও দল আই লিগে ছয়ের বেশি গোল করল। কলকাতার বাইরেও ইস্টবেঙ্গলের সবচেয়ে বড় জয়। হ্যালকে হারিয়ে ইস্টবেঙ্গল উঠে এল তিন নম্বরে। ডেম্পো, মোহনবাগানের পরেই।
বুধবারের ম্যাচের আসল নায়ক অবশ্য মর্গ্যান নন। বরং ব্রিটিশ-অস্ট্রেলিয়ান কোচের মুখ উজ্জ্বল করলেন তাঁরই এক দেশোয়ালি ফুটবলার। টোলগে ওজবে। হ্যাটট্রিক-সহ চার গোল করে যাবতীয় সমালোচনা উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, টোলগেহীন ইস্টবেঙ্গল আর টোলগে সমেত ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে কতটা পার্থক্য। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে না পারার জ্বালা হ্যালকে ধূলিসাৎ করে মিটিয়ে নিলেন তিনি। গোটা নব্বই মিনিট বিপক্ষের ছোট বক্সে তাণ্ডব চালালেন। শুধু গোল করলেন না, করালেনও। আই লিগে টোলগে প্রথম ফুটবলার যিনি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে চার গোল করলেন।
চার গোলের হুঙ্কার।
টোলগের তাণ্ডব যদি ম্যাচের প্রথম আকর্ষণ হয়, তা হলে দ্বিতীয় স্থানটা অবশ্যই দখলে থাকবে উগা ওপারার। একটা দলের প্রধান স্টপারের কী ধরনের ভূমিকা হওয়া উচিত, সেটাই দেখালেন ওপারা। বেঙ্গালুরু স্টেডিয়ামে উপস্থিত কচি-কাঁচাদের জন্য যেটা একটা উদাহরণ। রবার্টের একটা ভুলে হ্যাল পেনাল্টিতে ১-১ করার পরেই নড়েচড়ে বসেন এই নাইজিরিয়ান। লাল-হলুদ রক্ষণকে একাই আগলে রেখে বুক চিতিয়ে সামলালেন বিপক্ষের সব ঝড়-ঝাপটা। আবার দরকারে উপরে উঠে টোলগে-রবিনদের সাহায্য করলেন। একই সঙ্গে উপহার দিলেন বাঁ পায়ের দুটো বিশ্বমানের গোলও। ম্যাচের পর সোজা চলে এসেছেন হোটেলের ঘরে। কলকাতায় মোহনবাগান-প্রয়াগ ইউনাইটেড ম্যাচ দেখার জন্য। বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে ওপারা বলছিলেন, “আগের ম্যাচে ওরা আমাদের সঙ্গে যে প্রতারণা করেছিল, তার শাস্তি পেল এ দিনের ম্যাচ হেরে।”
ইস্টবেঙ্গলের গোলের চাকা ঘুরতে শুরু করে রবিন সিংহের গোলে। যদিও তাঁর গোলে হ্যালের গোলকিপারের অবদান বেশি। অমরের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই রবিনের প্রথম গোল। তবে জয়ের ব্যবধান আরও বাড়তে পারত। বলজিৎ সিংহের ‘সৌজন্যে’ তা হয়নি। ম্যাচ শেষ হওয়ার কুড়ি মিনিট আগে মাঠে নেমে যে প্রথম বলটা ধরলেন, সেটাই গোল। কিন্তু তার পরের দশটা বল নষ্ট করলেন। ফাঁকা গোলেও বল ঢোকাতে পারলেন না। বেঙ্গালুরু থেকে মর্গ্যান বলছিলেন, “জয়ের চেয়ে বড় ব্যবধানে জয়টা বেশি দরকার ছিল। এই জয়ে ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যাবে।”
হ্যালের চরম দুর্ভাগ্য, পেন-ওপারাদের যাবতীয় ক্ষোভ-রাগ-যন্ত্রণা-জ্বালার সামনে তাদেরই খেলতে হল। হ্যাল এই মরসুমে ৭ ম্যাচ খেলে ৬টি হেরেছে। একটি ড্র। এ দিনের ৮ গোলে হার তাদের সব লজ্জাকে ছাপিয়ে গেল। রবিবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ভাল খেলেও পেনাল্টিতে হারতে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। যার প্রতিবাদে বুধবার কলকাতা ময়দানে গোষ্ঠ পালের মূর্তির নীচে প্রতিবাদ জানাল ইস্টবেঙ্গল ফ্যান ক্লাব ‘টাইগার্স অন ফিল্ড’-এর প্রতিনিধি এবং অন্যান্যরাও। সন্ধ্যেতে ক্লাবের কার্যকরি কমিটির সভায় এই নিয়ে দীর্ঘ আলোচনাও হয়। ফেডারেশনকে অনেক প্রশ্ন তুলে চিঠি দেওয়া হচ্ছে তদন্ত চেয়ে।
এদিকে ডেম্পো ৫-০ হারিয়ে দিল লাজংকে। ৭ ম্যাচে তারা একটিও পয়েন্ট হারায়নি। মুম্বই এফ সি-র কাছে ১-২ হেরে গেল স্পোর্টিং। এই প্রথম হার।

ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, নওবা, ওপারা (গুরবিন্দর), রবার্ট, নির্মল, পেন (বলজিৎ), ভাসুম, সুশান্ত, সঞ্জু (সৌমিক), রবিন, টোলগে।

বৃহস্পতিবারে আই লিগ
পৈলান অ্যারোজ : চিরাগ ইউনাউটেড কেরল (যুবভারতী, ২-০০)
সালগাওকর : চার্চিল ব্রাদার্স (মারগাও)
পুণে এফ সি : এয়ার ইন্ডিয়া (পুণে)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.