সংস্কার কর্মসূচিতে আপত্তি তুলে চাপ
কেন্দ্রেও বিরোধিতার সুর চড়ালেন মমতা
রাজ্যে যখন কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়ছে, তখন কেন্দ্রেও জোট শরিকের সঙ্গে বৃহত্তর সংঘাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি থেকে শুরু করে মনমোহন সিংহের সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা ইতিমধ্যেই করেছে তৃণমূল। এ বার সেই আপত্তির পরিধি আরও বাড়বে। যেমন গত কাল তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে তৃণমূল সাংসদদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেন্দ্র খুচরো ব্যবসা এবং বিমান চলাচলে বিদেশি লগ্নির পথ খুলে দিতে চাইলে দল তার বিরোধিতা করবে। আর প্রস্তাবিত পেনশন বিলেরও যে বিরোধিতা করা হবে, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা নিজেই। রাজ্য স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সাম্প্রতিক বিরোধের সূত্রপাত ছোট শরিকের সন্ত্রাস-বিরোধী মিছিল নিয়ে। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের আগে তৃণমূলকে দুষে কংগ্রেসের এই মিছিলে বেজায় চটেন মমতা। রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, কংগ্রেস জোট ছেড়ে চলে গেলে তাঁর কোনও অসুবিধা নেই। কংগ্রেস শীর্ষ স্তর থেকে জোট ভাঙছে না বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও রাজ্য নেতাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কিন্তু রাশ টানা হয়নি। বরং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ রাজ্যে গিয়ে উপর্যুপরি ‘কংগ্রেস তো বনবাস নেয়নি’ বা ‘ভিআরএস নেয়নি’ জাতীয় মন্তব্য করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
এই অবস্থায় দিল্লি এসে আজ বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে কেন্দ্রের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে নিজের কড়া মনোভাব জানিয়েছেন মমতা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় গত কালই লোকসভায় জানিয়েছেন, রান্নার গ্যাস বণ্টনের ক্ষেত্রে নতুন ব্যবস্থা খুব তাড়াতাড়িই চালু করা হবে। এই ব্যবস্থায় ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা বেঁধে দিয়ে বাকি সিলিন্ডার বাজার দরে বেচতে চায় কেন্দ্র। মমতা আজ বলেছেন, “মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে গ্যাসের দাম ৯০০ টাকা করার কথা উঠেছিল। সে কারণে আমাদের বিরোধিতা করতেই হয়েছিল। ভবিষ্যতে তেলের দাম বাড়লে আমরা আবার প্রতিবাদ করব।”
মমতার এই অবস্থানকে সংসদের গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন অধিবেশনে কংগ্রেসকে চাপে রাখার কৌশল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। শুধু কেন্দ্রের প্রস্তাবিত বিল নয়, রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়েও আজ সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “পাট চাষিদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিতে হবে। চাষিদের নিরাপত্তা তো আমাদের আগে দেখতে হবে।” সেই সঙ্গে রাজ্যের উন্নয়নে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কোটি টাকার দাবিও তুলেছেন তিনি। কিন্তু ঘটনা হল, বিষয়টি নিয়ে মমতা লাগাতার চাপ দিলেও কেন্দ্র যে পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা করে কোনও আর্থিক প্যাকেজ দিতে এখনও প্রস্তুত নয় সেটা স্পষ্ট। এবং সেটা বুঝতে পেরে কেন্দ্রের উপর বেশ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। আজ তিনি বলেছেন, “আমি ওই টাকা ভিক্ষে চাইছি না।”
যদিও মমতা প্রকাশ্যে বলেছেন যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভাঙার কোনও পরিকল্পনা তাঁর নেই, তবু সম্ভাব্য সব রকম পরিস্থিতির জন্যই তৈরি থাকতে চাইছে কংগ্রেস। গত কাল সমাজবাদী পার্টি নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবের জন্মদিনে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করছেন প্রণববাবু। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে মুলায়মের সঙ্গে তাদের বোঝাপড়া ক্রমশ ভাল হচ্ছে। মুলায়ম এবং অজিত সিংহ কেন্দ্রকে জানিয়েছেন, তৃণমূল যদি সমর্থন প্রত্যাহার করে তবে তাঁরা মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে ইচ্ছুক। এখন মুলায়মের ২২ জন সাংসদ, মায়াবতীর ২১ জন এবং অজিত সিংহের ৪ জন সাংসদ বাইরে থেকে ইউপিএ-কে সমর্থন করছে। আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মায়াবতীর সঙ্গে কংগ্রেস এখন ‘সম্মুখ সমর’ চলছে। কিন্তু মুলায়মের সঙ্গে সেই সমস্যা নেই। রাজ্যস্তরে কংগ্রেস আপাতত একলা চলার নীতি ত্যাগ না করলেও, ভোটের পর মায়াবতী-বিরোধী রাজনীতির জন্য মুলায়মের সঙ্গে জোট বাঁধতেই পারে। এই ‘দুর্যোগপূর্ণ’ আবহাওয়ায় দিল্লি এসেও মমতা কিন্তু প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে আলাদা করে কোনও আগ্রহ প্রকাশ করেননি। বরং আজকের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “ইউপিএ-তে আমরা নিঃসঙ্গ বোধ করি। আমাদের তো মাত্র এক জন পূর্ণমন্ত্রী।” এই নিঃসঙ্গতা বোধ কংগ্রেস-মমতা সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যায় সেটাই দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.