এক দিনের বিশ্রামের পর ফের বড় মাপের পতন হল শেয়ার দরে। আগের দিন ১১৯ পয়েন্ট বাড়ার পর বুধবার এক ধাক্কায় সেনসেক্স পড়ে গেল ৩৬৫.৪৫ অঙ্ক। এই দিন এক সময়ে পতনের অঙ্ক ছিল আরও বড়। সূচক নেমে গিয়েছিল ১৫,৪৭৮.৬৯ অঙ্কে। বাজার বন্ধের সময় অবশ্য তা কিছুটা উপরে উঠে এসে শেষ হয় ১৫,৬৯৯.৯৭ অঙ্কে। পাশাপাশি, এ দিন আরও পড়ল ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম। এই নিয়ে পরপর আট দিন পতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি টাকা।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এবশ্য এ দিন আশ্বাসের সুরে বলেছেন, “ভারতের অর্থনীতির ভিত যথেষ্ট শক্তিশালী। সমস্যায় আক্রান্ত বিশ্ব অর্থনীতির নিরিখে বিচার করলে তা আরও ভাল ভাবে বোঝা যাবে।” শেয়ার বাজার সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, বিদেশি আর্থিক সংস্থা ভারতের বাজার থেকে বিপুল পরিমাণে লগ্নি ফিরিয়ে নেওয়ার জেরেই পড়ছে সেনসেক্স। তাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে টাকার দামের পতন। ডলারে টাকা তলানিতে নেমে আসার ব্যাপারে প্রণববাবু বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। প্রয়োজনে তারা ব্যবস্থা নেবে।” এ দিন প্রথম দিকের লেনদেনে ডলারে টাকার দাম ৯ পয়সার মতো বাড়লেও দিনের শেষে তা ৬ পয়সা পড়ায় প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৫২.৩৫/৩৬ টাকা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে ডলার ছেড়ে হস্তক্ষেপ করেছে কি না, তা নিয়ে এ দিন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।
শেয়ার বাজার চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বরং পতনের আরও সম্ভাবনা আছে বলেই তাঁদের ধারণা। কারণ, বিদেশে বছরের শেষে বিভিন্ন লগ্নি প্রকল্প থেকে জমা দেওয়া টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা সাধারণ লগ্নিকারীদের মধ্যে প্রতি বছরই দেখা যায়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে করছে না শেয়ার বাজার মহল। সে ক্ষেত্রে, বিদেশি সংস্থাগুলির শেয়ার বিক্রির বহর আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, ওই সব সংস্থা ভারতের বাজারে লগ্নি করার জন্য বিদেশে বিভিন্ন প্রকল্প ছেড়ে টাকা তোলে। ওই সব প্রকল্পে যাঁরা টাকা জমা দিয়েছেন, তাঁরা সেই টাকা ডিসেম্বর মাসে তুলে নিতে চাইলে, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিকে শেয়ার বিক্রি করেই ওই টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। ফলে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলির শেয়ার বিক্রির জেরে বছরের শেষে সূচকের মুখ আরও নীচের দিকে যাতে পারে বলেই আশঙ্কা।
টাকার দাম কমলে সাধারণত রফতানি ভিত্তিক শিল্পের মুখে হাসি ফোটে। কারণ, রফতানি করে ওই সব সংস্থা ডলার আয় করে। টাকার দাম কমলে ভারতে ওই ডলার বিক্রি করে ওই সব সংস্থা বেশি আয় করতে পারে। যেমন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের মুখেও হাসি নেই। তার কারণ, ইউরোপ ও আমেরিকা-সহ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আর্থিক অবস্থা এমন সমস্যায় যে, রফতানির বরাতেই টান পড়েছে।
এক দিকে মার খাচ্ছে দেশের রফতানি বাণিজ্য, অন্য দিকে ডলারের দাম বাড়ায় আমদামনির খরচ বেড়েছে। এর ফলে রফতানি-আমদানি বাণিজ্যের ভারসাম্য ভারতের প্রতিকূল অবস্থায় চলে গিয়েছে। যার অবশম্ভাবি ফল হিসাবে ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট’ ঘাটিত আরও বাড়ছে। অর্থাৎ রফতানি থেকে ডলারে আয় কমেছে, অন্য দিকে আমদানির জন্য বেশি টাকা দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। এই কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতিই আবার টাকার দাম আরও টেনে নামাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ‘ভিসাস সর্কেল’ বা দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই পথ বাতলাতে হবে। |