রতন টাটার উত্তরাধিকারী পালোনজি-পুত্র সাইরাস
বশেষে ঘোষণা করা হল টাটা সাম্রাজ্যের যুবরাজের নাম। রতন টাটার পর তাঁর সিংহাসনে বসবেন সাইরাস পালোনজি মিস্ত্রি। শাপুরজি পালোনজি গোষ্ঠীর কর্ণধার পালোনজি মিস্ত্রির ছোট ছেলে। আর বুধবার টাটা সন্সের এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কার্যত শুরু হয়ে গেল ভারতের কর্পোরেট দুনিয়ার নতুন এক রূপকথা।
এত দিনের জল্পনায় ইতি টেনে এ দিন ৮ হাজার কোটি ডলারের টাটা গোষ্ঠীর হোল্ডিং কোম্পানি টাটা সন্স জানিয়েছে, আপাতত সংস্থার ডেপুটি চেয়ারম্যান হচ্ছেন ৪৩ বছরের সাইরাস। আগামী এক বছর রতন টাটার পাশে পাশে থেকে তিনি শিখবেন সংস্থা পরিচালনার খুঁটিনাটি। আর তার পর ২০১২-র ডিসেম্বরে বর্তমান কর্ণধার পাকাপাকি অবসর নিলেই, সংস্থার রাশ চলে যাবে তাঁর হাতে।
বস্তুত, টাটাদের সমস্ত সংস্থার শেয়ারহোল্ডার হল টাটা সন্স। ‘টাটা’ ব্র্যান্ড-নাম এবং ট্রেডমার্কের মালিকও তারা। এই টাটা সন্সেরই ১৮% মালিকানা নির্মাণ সংস্থা শাপুরজি পালোনজি গোষ্ঠীর হাতে। অর্থাৎ একক ভাবে টাটা সন্সে সব থেকে বেশি অংশীদারি তাদেরই। টাটা গোষ্ঠীর প্রতিটি পদক্ষেপের পিছনে যাঁর সবুজ সঙ্কেত থাকে, শাপুরজি পালোনজি গোষ্ঠীর বর্তমান চেয়ারম্যান সেই অন্তরালবাসী পালোনজি মিস্ত্রিরই ছেলে এই সাইরাস। বর্তমানে ওই গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টরও যিনি। কিছুটা অপ্রত্যাশিত হলেও এ দিন সাইরাসকে উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার পেছনে শাপুরজি পালোনজি পরিবারের উপর টাটাদের বহু দিনের নির্ভরতা এবং দু’পক্ষের মধ্যে নিঃশব্দে রয়ে যাওয়া অটুট বিশ্বাসের বন্ধনকেই দেখতে পাচ্ছে শিল্পমহল।
সাইরাস মিস্ত্রি রতন টাটা
পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে বুধবার সর্বসম্মত ভাবেই টাটা সন্সের ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে বেছে নেওয়া হয় সাইরাস মিস্ত্রিকে। কিন্তু এ দিনের ‘চমক’ যেখানে সেটা হল, এত দিন শিল্পমহল রতন টাটার বৈমাত্রেয় ভাই নোয়েল টাটাকেই তাঁর উত্তরসূরি হওয়ার অন্যতম দাবিদার মনে করে এসেছে। কারণ এক দিকে তিনি পরিচিত টাটাদের খুচরো ব্যবসা সংস্থা ট্রেন্ট-এর উত্থানের অন্যতম কারিগর হিসাবে। আবার অন্য দিকে, পালোনজি পরিবারের সঙ্গেও বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ। তাই নোয়েলকে ২০১০-এর ২৯ জুলাই টাটা ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর করার পরেই অগস্টে যখন রতন টাটার অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়, তখনই বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করেছিল সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু রতন টাটা গত কয়েক বছর ধরেই বলে আসছিলেন, টাটা গোষ্ঠীর দায়িত্ব এমন কারও হাতেই যাওয়া উচিত, যাঁর বয়স তুলনায় কম। এবং সেই কারণেই বহু দিন নেতৃত্ব দিতে পারবেন। সম্ভবত এই যুক্তিতেই ৫৪ বছরের নোয়েল টাটাকে পেছনে ফেলেছেন সাইরাস। এর আগে ১৯৩২-৩৮ সালেই শুধু গোষ্ঠীর ভার সামলেছিলেন এমন একজন, যাঁর পদবীতে ‘টাটা’ ছিল না। তাঁর নাম নৌরজি সাকলাতওয়ালা। তবে তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা জামসেদজি-র ভাগ্নে। এবং তার পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ‘টাটা’ বৃত্তের বাইরে বেরলো গোষ্ঠীর কর্তৃত্ব।
পাশাপাশি, সময়ের সঙ্গে টাটাদের পরিচালন গোষ্ঠীতে নিজেদের জায়গা আরও শক্ত করলেও শাপুরজি পালোনজি পরিবার কোনও দিনই জনসমক্ষে আসেনি। সংবাদ মাধ্যমকে বরাবরই এড়িয়ে চলেছেন। শুধু টাটা গোষ্ঠীর মুখ হিসেবে বরাবর থেকেছে ওই নামেরই একজন প্রতিনিধি। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে টাটা ব্র্যান্ডের পিছনে আছে শাপুরজির আর্থিক জোর। একটা সময়, জে আর ডি টাটা ও তাঁর পরিবারের হাতে টাটা সন্সের মাত্র ৩.৫% ছিল। অন্য দিকে, ১৯৩২ সালে সলিসিটর দিনশ-এর ১২.৫% শেয়ার কিনে টাটা সন্সের প্রথম অংশীদার হন শাপুরজি পালোনজি। এ বার এ হেন পরিবার থেকে যাঁকে টাটা গোষ্ঠী পরিচালনার জন্য বেছে নেওয়া হল, সেই সাইরাস পালোনজি মিস্ত্রিও পারিবারিক ঐতিহ্য মেনেই অন্তরালে থাকতে ভালবাসেন। তাঁর সম্পর্কেও বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজ অফ সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড মেডিসিন থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক। ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করেছেন লন্ডন বিজনেস স্কুল থেকে। ১৯৯১-এ শাপুরজি পালোনজি গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার পর আরও বাড়িয়েছেন ব্যবসা। গত ২০০৬ থেকে রয়েছেন টাটা সন্সের পর্ষদেও।
ডেপুটি চেয়ারম্যান হওয়ার পর এ দিন সাইরাসের মন্তব্য: “আমি সম্মানিত। টাটা গোষ্ঠীর যাবতীয় মূল্যবোধ বজায় রেখেই এর মর্যাদা দেব। গোষ্ঠীর যে ঐতিহ্য ও পরম্পরা আমার ওপর বর্তাল, সে ব্যাপারে আমি সচেতন।”
উত্তরসূরি সম্পর্কে খোদ রতন টাটা কী মনে করেন?
টাটা কর্ণধারের কথায়, “একনিষ্ঠ। বুদ্ধিমান।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.