|
|
|
|
সঙ্কটের আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞেরা |
সব্জির জমিতে বাড়ছে চা চাষ |
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য • ময়নাগুড়ি |
বাড়তি লাভের আশায় উর্বর কৃষি জমিতে চা বাগান গড়ে তোলার ঝোঁক বেড়ে চলায় উদ্বিগ্ন কৃষি দফতর। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ওই পরিস্থিতি চলতে থাকলে জলপাইগুড়ি জেলায় সবজি ও খাদ্য শস্য উৎপাদনে মন্দা নেমে আসবে। রামসাই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের গবেষক জ্যোতির্ময় কারফর্মা বলেন, “উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলার চাষিরা যে ভাবে চা চাষে ঝুঁকেছেন তাতে আগামী দিনে সবজি ও শস্য চাষের জমির সঙ্কট দেখা দিতে পারে। যে সমস্ত এলাকা কয়েক বছর আগেও সবজি চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন সেখানে সবজি খেত খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে। ওই পরিস্থিতির জন্য বাজারে সবজির যোগান কমছে। দাম বাড়ছে।” জলপাইগুড়ি মহকুমা জুড়ে বছরভর ধান ও সবজি চাষ হয়ে থাকে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে ১ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ধান চাষ হয়েছে। উৎপাদনের পরিমান ছিল ৪ লক্ষ মেট্রিক টন। এ বার শুধুমাত্র আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু চাষ হয়েছে ১ লক্ষ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে। কেন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হল না? জলপাইগুড়ি মহকুমা কৃষি আধিকারিক হরিশ্চন্দ্র রায় বলেন, “কারণ জানতে খোঁজখবর শুরু করেছেন। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, মহকুমা জুড়ে চা বাগান গড়ে তোলার ঝোঁক উর্বর জমি নষ্ট করেছে। ধান চাষের এলাকা কমে যাওয়ার পিছনে এটা অন্যতম কারণ হতে পারে।” উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি মহকুমার সাতটি ব্লকে কমবেশি সবজির চাষ বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু সেখানেও চা বাগান সম্প্রসারণের কারণে সবজি চাষের এলাকা কমে হয়েছে ৩০ হাজার হেক্টর জমি। এক দশক আগেও সেটা প্রায় দ্বিগুণ ছিল। জেলা জুড়ে প্রতিদিন ধান ও সবজি চাষের জমি কমছে। ভূমি ও রাজস্ব দফতরের ২০১০ সালের সমীক্ষায় জানা গিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলার ২৮ হাজার একর জমিতে প্রায় ৭ হাজার ছোট চা বাগান গড়ে উঠেছে। কিন্তু ওই সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে ক্ষুদ্র চা চাষিদের যৌথ মঞ্চের কর্তারা-ই। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “জেলায় কমপক্ষে ৫০ হাজার একর জমিতে ১০ হাজার ছোট চা বাগান গড়ে উঠেছে। ওই সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ধান ও সবজি চাষের জমি উধাও হতে বসেছে। এর ফলে একদিকে যেমন চা পাতার দাম তলানিতে ঠেকেছে। অন্যদিকে সবজির দাম আকাশছোঁয়া হয়েছে।” এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন মঞ্চের কর্তারা বেপরোয়া ভাবে চা বাগান গড়ে ওঠা ঠেকাতে দ্রুত ভূমি ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নিয়ম তৈরির দাবি জানিয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন। মঞ্চ সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে ধান ও সবজি চাষের জমি সবচেয়ে বেশি কমেছে রাজগঞ্জ ব্লকে। এখানে প্রায় তিন হাজার ছোট চা বাগান গড়ে উঠেছে। এর পরে রয়েছে ময়নাগুড়ি। এখানে দেড় হাজার চা বাগান হয়েছে। একই দশা জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের। ধূপগুড়ি, মালবাজার ব্লকেও চা বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। জেলার এক কৃষিকর্তা বলেন, “নতুন করে চা বাগান তৈরি বন্ধ করা না গেলে সবজির দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাবে।” |
|
|
|
|
|