সরকার দিনক্ষণ জানালে গোপন ডেরায় আত্মগোপন করে থাকা জীবন সিংহ আলোচনার টেবিলে আসতে পারেন। এ বার জনসভায় সে কথা ঘোষণা করল কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন, কেএলও (আলোচনাপন্থী)।
রবিবার বেলাকোবার কেবলপাড়া স্কুলের মাঠে আলোচনাপন্থী কেএলও-র প্রথম প্রকাশ্য জনসভা হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা ওই সভা থেকেই জানিয়ে দেন, তাঁদের সংগঠন নিষিদ্ধ। সে জন্য বিতর্ক এড়াতে তাঁরা নিজেদের ‘আলোচনাপন্থী কেএলও’ হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের নানা প্রান্তের বিদ্বজ্জনদেরও ওই সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই উপস্থিত হন। বিদ্বজ্জনদের সামনেই কেএলও নেতারা জানান, একসময়ে চরমপন্থা বেছে নিতে হলেও রাজ্যে এখন নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বর্তমান সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা দেখেই তাঁরা আলোচনার ব্যাপারে এগোচ্ছেন বলে নেতারা দাবি করেছেন। আলোচনাপন্থী কেএলওর ডেপুটি কম্যান্ডার-ইন-চিফ টম অধিকারী বলেন, “রাজ্য সরকার আলোচনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে দিনক্ষণ ঘোষণা করলে চেয়ারম্যান জীবন সিংহকে আনা হবে। কী ভাবে তাঁকে আনা হবে তা আমাদের ভাবনা। আগে সরকারের সন্মতি চাই।”
কোচবিহারের তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “রাজ্যে এখন পরিবর্তন এসেছে। খুনোখুনির পথ ছেড়ে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানোর আহ্বান জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে সাড়াও মিলছে। উত্তরবঙ্গে আগামী দিনে যাতে আর সন্ত্রাস না তৈরি হয়, তার জন্য যে কোনও উদ্যোগকেই স্বাগত।” |
এ দিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন কেএলওর ভাইস চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন বর্মন। তিনি বলেন, “কামতাপুর সম্প্রদায়ের ভাষা ও আলাদা কামতাপুর রাজ্যের স্বীকৃতি জীবন সিংহের মূল দাবি। তবে আপাতত উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। তেলেঙ্গানা হোক কিংবা গোর্খাল্যান্ড, চাইলেই যে রাজ্য মিলে যাচ্ছে, এমন নয়। তাই দেশের সংবিধানের মধ্যে থেকেই আমাদের দাবি-দাওয়া পেশ করা হবে।” এদিন সভা মঞ্চের সামনে জাতীয় পতাকাও উত্তোলন করা হয়। উল্লেখ্য, শুক্রবার কেএলও-র তরফে কোচবিহারের জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্য সচিবের কাছে আলোচনায় বসার প্রস্তাব পাঠায় কেএলও। বর্তমানে যাঁরা আলোচনার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের ধারনা, গোপন ডেরায় থাকা কেএলও প্রধানও হাঁপিয়ে উঠেছেন। সে জন্য তিনি দলের অনুগামীদের দিয়ে আলোচনায় বসার প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বলেও পুলিশ-প্রশাসনের অনেকেই ভাবছেন। এ দিন কেএলওর প্রথম প্রকাশ্য সভায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির নাগরিকদের মধ্যে জলপাইগুড়ির আইনজীবী কমলকৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায়, ভাস্কর নন্দী সহ ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন কলেজ শিক্ষক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবী কমলকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ভাবে এগিয়ে চলার সিদ্ধান্ত সবসময়েই স্বাগত।” কামতাপুর পিপলস পার্টির সভাপতি নিখিল রায়ও সভায় উপস্থিত হন। তিনি বলেন, “আগের সরকারে সময় আলোচনার পরিবেশ ছিল না। বর্তমান সরকারের ভুমিকা সদর্থক। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার পরে উত্তরবঙ্গের পরিকাঠামো উন্নতির হাত ধরেই শান্তি, সমৃদ্ধি আসবে বলে আমরা আশা করি।”
এ ব্যাপারে ভাস্কর নন্দী বলেন, “কেএলওরা ভুল পথ অর্থাৎ সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে গণতান্ত্রিক কাঠামোয় ফিরতে চাইছে। আলোচনার মাধ্যমেই সুস্থ সামাজিক পথে এক গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ উত্তরবঙ্গ পাওয়া সম্ভব। আমাকে যদি আলোচনায় ডাকা হয় তা হলে আমিও যেতে প্রস্তুত।” |