নিয়োগে অনিয়ম ধরার জন্য পরিবহণ দফতরের অধীন সব নিগমের কাছেই কর্মীদের যাবতীয় তথ্য তলব করা হয়েছিল। কিন্তু দু’টি নিগম তথ্য পেশ করলেও অন্য দু’টি নিগম তা দেয়নি। ফলে কিছু কর্মীর বেতন নিয়ে জট খুলতে চলেছে, অথচ কিছু কর্মীর বেতনের ব্যাপারে ধোঁয়াশা কাটছে না।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এনবিএসটিসি) এবং দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এসবিএসটিসি) কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সব তথ্য জমা দেওয়ায় তাদের কর্মীদের বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে বলে মহাকরণ সূত্রের খবর। অন্য দুই পরিবহণ সংস্থা কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি) এবং কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (সিএসটিসি) এখনও তাদের কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত পুরো তথ্য মহাকরণে জমা দেয়নি। তাই তাদের কর্মীরা বেতন পাবেন কি না, তা অনিশ্চিত থেকেই গিয়েছে।
সিএসটিসি এবং সিটিসি এই তথ্য দিতে গড়িমসি করছে কেন? বিশেষত এর সঙ্গে যখন কর্মীদের বেতন পাওয়ার বিষয়টি জড়িয়ে আছে?
রাজ্যের পরিবহণ দফতরের বক্তব্য, কর্মী নিয়োগ বিষয়ক সবিস্তার তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না সিএসটিসি এবং সিটিসি-কর্তৃপক্ষ। আর সেই তথ্য না-পাওয়ায় বিধি ভেঙে নিযুক্ত কর্মীদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি ওই দুই পরিবহণ সংস্থা। বামফ্রন্টের আমলে পরিবহণ দফতরের আওতায় থাকা পাঁচটি নিগমে নিয়ম না-মেনে প্রচুর কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছিল। পরিবহণ দফতর ওই কর্মীদেরই ‘ভুয়ো কর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছে। ওই দফতর তাদের বিভিন্ন নিগমকে সব কর্মী সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য পাঠাতে বলেছিল। নিগমগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘ভুয়ো কর্মী’ চিহ্নিতকরণ সম্পূর্ণ হলেই আটকে থাকা বেতন দিয়ে দেওয়া হবে প্রকৃত কর্মীদের। নিগমকর্মীরা অক্টোবরের বেতন এখনও পাননি। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের আটকে থাকা পেনশন অবশ্য সম্প্রতি শর্তসাপেক্ষে মঞ্জুর করেছে অর্থ দফতর।
জট কাটাতে উদ্যোগী হয়েছেন বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। পরিবহণ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত শোভনদেববাবু বলেন, “আমি বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর নির্দেশে পৃথক ভাবে কথা বলেছি পরিবহণমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও। অর্থমন্ত্রী আমাকে জানিয়েছেন, এনবিএসটিসি এবং এসবিএসটিসি প্রয়োজনীয় জবাব মহাকরণে পাঠিয়ে দিয়েছে।” মুখ্য সচেতক জানান, ওই দুই সংস্থার কর্মীদের বেতন মঞ্জুর করেছে অর্থ দফতর। সিএসটিসি এবং সিটিসি-র কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট জবাব আসছে না। তাই তাদের কর্মীদের বেতন মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে।
কর্মীদের নিয়োগের ব্যাপারে সব তথ্য খুঁজে বার করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে সিএসটিসি। রবিবার সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর-সহ পাঁচ পদস্থ অফিসার নিগমের দফতরে দফায় দফায় বৈঠক করেন। বিভিন্ন নথিপত্র ও কম্পিউটার ঘাঁটাঘাঁটিও করেন তাঁরা। কিন্তু পুরো তথ্য না-পাওয়ায় এ দিনও ‘ভুয়ো কর্মী’ সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করা যায়নি বলে সিএসটিসি সূত্রের খবর। তবে সংস্থার মুখ্য হিসাব অফিসার (সিএও) অভিজিৎ বসু বলেন, “কর্মী সংক্রান্ত অধিকাংশ তথ্যই মহাকরণে পাঠানো হয়েছে।” সিটিসি-কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা নিগমের কর্মী সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য মহাকরণে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
কর্মীদের বেতন না-হওয়ায় বিভিন্ন পরিবহণ সংস্থার কর্তারা তাঁদের দফতরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। পরিবহণ সংস্থাগুলির বিভিন্ন বাম কর্মী সংগঠন ইতিমধ্যেই এই নিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে। বিক্ষোভের জেরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ। আজ, সোমবার বিক্ষোভের কর্মসূচি রয়েছে এনবিএসটিসি-তে। সংস্থার আইএনটিইউসি সমর্থিত কর্মী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সত্যানন্দ দত্ত জানান, বেতন না-হওয়ায় সোমবার বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টা তাঁদের ২২টি ডিপোতেই কর্মী-বিক্ষোভ হবে। |