সংরক্ষণ ও কর আদায়ে উদ্যোগ
স্টেডিয়াম বেসরকারি হাতে দিতে চলেছে রাজ্য সরকার
নেতাজি ইন্ডোর সহ সরকারি মালিকানাধীন রাজ্যের সব ক’টি স্টেডিয়ামের (সিএবি-র অধীন ইডেন এর আওতায় নয়) রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেসরকারি হাতে দিতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার। শুধু তা-ই নয়, বিয়ে, জলসা বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপন বা অন্য কোনও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও ওই স্টেডিয়ামগুলি ভাড়া দিতে চায় রাজ্য। লক্ষ্য দু’টি। এক, এ যাবৎ অবহেলিত স্টেডিয়ামগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, আধুনিকীকরণ ও সংস্কার এবং দুই, বাণিজ্য করে সরকারি কোষাগারের স্বাস্থ্য ফেরানো।
এই সিদ্ধান্তে অবশ্য এখনও চূড়ান্ত সরকারি সিলমোহর লাগেনি। তবে পর্যায়ক্রমে এই পথেই হাঁটার পরিকল্পনা পাকা। ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র নিজেই বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছেন, স্টেডিয়ামগুলির ‘মালিকানা’ সরকার ছাড়বে না।
অর্থাৎ, স্টেডিয়ামগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে যাওয়ার পরেও সেগুলি ভাড়া করতে হলে সরকারেরই দ্বারস্থ হতে হবে। পুরো বিষয়টাই মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। তাঁর অনুমতিক্রমেই সব হবে।
ঘটনাচক্রে, ক্রীড়ামন্ত্রী মদনবাবু দায়িত্ব নেওয়ার অব্যবহিত পরেই রাজ্যের স্টেডিয়ামগুলি বিয়ে, জলসা, অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ভাড়া দেওয়ার নিন্দা করেছিলেন। বলেছিলেন, ৩৪ বছরের শাসনকালে স্টেডিয়ামগুলি নিয়ে ওই ধরনের ভাড়া-বাণিজ্য করেছে বাম সরকার। তার ফলে খেলাধুলোর ক্ষতি হয়েছে।
ছ’মাসের মধ্যেই তাঁদের সরকারও সেই পথেই হাঁটার সিদ্ধান্ত নিল কেন? মদনবাবুর জবাব, “বামফ্রন্ট শাসনকালে স্টেডিয়ামগুলির ভাড়া-বাণিজ্য থেকে পাওয়া অর্থের অধিকাংশই ব্যক্তি মালিক বা কোনও বেসরকারি সংস্থার পকেটে যেত। কিন্তু আমরা দেখব, ভাড়া-বাণিজ্যের অধিকাংশ অর্থ যেন সরকারের ঘরে জমা পড়ে এবং খেলাধুলোয় বিঘ্ন না ঘটে।” যার অর্থ, রাজ্যের স্টেডিয়ামগুলি সামাজিক বা বাণিজ্যিক কাজে ভাড়া দেওয়া নিয়ে বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে মমতা-সরকারের ‘নীতিগত’ কোনও পার্থক্য নেই। পার্থক্য কেবল ‘প্রক্রিয়াগত’।
স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেসরকারি হাতে দেওয়া নিয়ে মদনবাবুর বক্তব্য, “স্টেডিয়ামগুলির অত্যন্ত দুরবস্থা। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার ও আধুনিকীকরণ না-হলে রাজ্যকে খেলাধুলোয় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষে ওই বিপুল ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। তাই বেসরকারি সংস্থার হাতে ওই দায়িত্ব ছাড়তে হবে। তবে স্টেডিয়ামগুলির মালিকানা সরকার ছাড়বে না।”
প্রসঙ্গত, বামফ্রন্ট সরকার ক্রীড়াক্ষেত্রে যথেষ্ট নজর দেয়নি বলে অভিযোগ ছিল খেলোয়াড়, ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ এবং খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত মহলের একাংশের। তাঁদের মতে, রাজ্যের স্টেডিয়ামগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার এবং আধুনিকীকরণ হয় না বলে যথেষ্ট সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়রা অনুশীলন করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়ছেন। ফলে রাজ্যে খেলাধুলোর মান পড়ে যাচ্ছে। বামফ্রন্ট আমলে তৈরি ‘যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন’ এশিয়ার বৃহত্তম স্টেডিয়াম হলেও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটি আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছতে পারেনি।
সেই অভিযোগগুলিরই রেশ টেনে ক্রীড়ামন্ত্রী জানান, যুবভারতীতে এখন ড্রেসিংরুমের দেওয়ালে জুতোর দাগ। যত্রতত্র পানের পিক। হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়াম ভেঙে পড়ছে। অনেক স্টেডিয়ামে অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগও তিনি পাচ্ছেন। সেই প্রেক্ষিতেই স্টেডিয়ামগুলির সংস্কার, আধুনিকীকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে উদ্যোগী হচ্ছে রাজ্য। কিন্তু শুধু যুবভারতীর রক্ষণাবেক্ষণের আনুমানিক খরচই মাসে ১ কোটি টাকা। অন্যান্য স্টেডিয়ামের ক্ষেত্রেও ওই ব্যয় সরকারের সাধ্যাতীত। তাই বেসরকারি সংস্থার হাতে ওই দায়িত্ব ছাড়তে চাইছে। ক্রীড়ামন্ত্রীর কথায়, “সুষ্ঠু ভাবে প্রকাশ্যে ই-টেন্ডার ডাকা হবে। সর্বোচ্চ দর যে দেবে, তাকেই স্টেডিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার ও আধুনিকীকরণের বরাত দেওয়া হবে। তা হলে সমস্যা থাকবে না।”
বস্তুত, একদিকে সরকারের লাভ এবং অন্যদিকে খেলাধুলোয় বিঘ্ন না-ঘটাতে এই মডেল সুষ্ঠু ভাবে অনুসরণ করলে স্টেডিয়ামের ভাড়া-বাণিজ্য নিয়ে ফ্রন্ট সরকারের মতো তাদের বিতর্কে পড়তে হবে না বলেই মমতা-সরকার মনে করছে। মদনবাবু জানান, কোষাগারের যা অবস্থা, তাতে সরকারের পক্ষে দান-খয়রাতি করা ‘বিলাসিতা’। ফলে ‘ফেলো কড়ি, মাখো তেল’ নীতি নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। এই প্রেক্ষিতেই মদনবাবু বলেন, “স্টেডিয়ামগুলির ফাঁকা অংশও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে তাদের বিজ্ঞাপনের জন্য লিজ দেওয়া যেতে পারে। তবে আগের আমলের মতো সরকারের লাভ না-দেখে ভাড়া দেওয়া হবে না। ভাড়ার বড় অংশ সরকার পাবে এবং ওই ধরনের কাজে স্পোর্টস কমপ্লেক্স, সুইমিং পুল, খেলাধুলোর বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না এই দু’টি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.