চাহিদার তুলনায় জ্বালানি কয়লার জোগান কম। তাই বাঁকুড়া জেলার বহু ইটভাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এরফলে জেলার বেশ কয়েক হাজার ইটভাটা শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সংসার কী ভাবে চালাবে তা নিয়ে তাঁরা ঘোর দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। ইটভাটা মালিকরা কয়লা সরবরাহ করা নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া সদর, বিষ্ণুপুর ও খাতড়া মহকুমায় ২৫০টিরও বেশি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে শুধু খাতড়া মহকুমাতেই ১০০টির বেশি ইটভাটা রয়েছে। বর্ষায় ইটভাটা বন্ধ থাকে। সাধারণত, কালীপুজোর পরেই ইটভাটাগুলিতে কাজ শুরু হয়। চলে মে মাস পর্যন্ত। প্রায় সাত মাস ইটভাটাগুলিতে শ্রমিকরা কাজ পান। ইটভাটা মালিকরা জানিয়েছেন, এই পেশায় প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক যুক্ত। ইট পরিবহণের কাজে ট্রাক্টর, ট্রাক ও ভ্যানের শ্রমিকরাও যুক্ত। সব মিলিয়ে প্রতিটি ইটভাটায় ১০০ থেকে ২০০ শ্রমিক প্রতিদিন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাজ পান। দৈনিক তাঁদের ১৫০ টাকার বেশি রোজগার হয়।
ইটভাটা মালিকদের অভিযোগ, এ বছর জ্বালানি কয়লা নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। একে কয়লার জোগান নেই। তারপরে যেটুকু কয়লা মিলছে গাড়িতে তা নিয়ে আসতে পুলিশ ঝামেলা করছে। যার পরিণামে অনেক ইটভাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের সংগঠন বাঁকুড়া ব্রিক ফিল্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ভরত সিংহ মহাপাত্র জানান, প্রতিটি ইটভাটার উৎপাদন ক্ষমতা অনুযায়ী কমবেশি ২০০ থেকে ৩০০ টন জ্বালানি কয়লার প্রয়োজন। |
সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাতিল করা কয়লা ইটভাটা মালিকরা সরকারি মূল্যে কিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু, সেখান থেকে এ বার কয়লা আনা যাচ্ছে না। তাঁর অভিযোগ, “সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাতিল কয়লা সরকারিভাবে বৈধ। কয়লা কেনার ‘চালান’ সঙ্গে থাকে। অথচ সেই কয়লা ট্রাকে বা লরিতে নিয়ে আসার সময় পুলিশ রাস্তায় গাড়ি আটকে হেনস্তা করছে। পথে বিভিন্ন থানার পুলিশ দফায় দফায় হয়রানি করছে। ফলে হয়রানির ভয়ে সেখানে থেকে কয়লা নিয়ে আসা যাচ্ছে না।” তিনি জানান, জেলার অধিকাংশ ইটভাটা যে বন্ধ গিয়েছে তা প্রশাসনের কর্তারা জানেন। তবুও কোন পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। সংগঠনের সহ-সভাপতি বাসুদেব দত্ত, গৌতম দত্তেরা জানান, ভাটায় বহু শ্রমিক কাজ করেন। ভাটা বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা কাজ হারিয়েছেন। ভাটা মালিকদেরও প্রচুর টাকা লোকসান হচ্ছে।
প্রসঙ্গত দক্ষিণ বাঁকুড়ায় রোজগারের বড় সুযোগ হচ্ছে ইটভাটাগুলি। এখানে সেই অর্থে কারখানা নেই। তালড্যাংরা থেকে সারেঙ্গা, ইঁদপুর থেকে বারিকুল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় ১০০টিরও বেশি ইটভাটা রয়েছে। ওইসব এলাকার শ্রমিকদের একাংশ ইটভাটায় কাজ করে সংসার চালান। কাজ না পেয়ে তাঁরা ক্ষুদ্ধ। ইটভাটা শ্রমিক সারেঙ্গার অমিত সর্দার, পঞ্চানন দুলে, রানিবাঁধের অনাথ টুডু বলেন, “কাজ করব বলে ভাদ্র মাসে মালিকের কাছ থেকে আগাম মজুরী নিয়েছিলাম। সেই টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। কাজও নেই। সংসার চলবে কী করে? মালিকের টাকা শোধ করব কী ভাবে?” জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “ইটভাটা নিয়ে সমস্যার কথা জানা নেই। বৈধভাবে কয়লা পরিবহণের ক্ষেত্রে সমস্য হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।” পুলিশ সুপার প্রণব কুমারের দাবি, “বেআইনি কয়লা পাচার আটকাতে যতটুকু করণীয় তা করা হচ্ছে। বৈধ কাগজপত্র নিয়ে যাঁরা কয়লা আনছেন, তাঁদের আটকানো হচ্ছে না। হয়রান করার অভিযোগ ঠিক নয়।” |