জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের দু’টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার জন্য উপভোক্তা নির্বাচনে ভুল করা হচ্ছে। এই অভিযোগ তুললেন বোরোর বুন্দিয়া গ্রামের বাসিন্দারা। রবিবার ওই গ্রামের উপভোক্তাদের কার্ড বিলি করতে এসে বাসিন্দাদের হাতে ঘেরাও হলেন খাদ্য দফতরের পরিদর্শক ও রেশন ডিলার। পরে মানবাজার ২ ব্লকের বিডিও পার্থ কর্মকার সেখানে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করার পরে ওই দু’জনকে ৬ ঘণ্টা পরে ঘেরাও মুক্ত করা হয়।
এই প্রকল্পে দু’টাকা কিলো দরের চাল সবাইকে দেওয়ার দাবিতে বোরো থানারই সিন্দরাইডি গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ শনিবার কয়েক জন আধিকারিক-সহ রেশন ডিলারকে স্কুলের ভিতরে আটকে রেখেছিলেন। রবিবার ফের ঘেরাও করার ঘটনা ঘটল বুন্দিয়া গ্রামে। খাদ্য দফতরের পরিদর্শক রতন সিং ও রেশন ডিলার গণেশ মাহাতোকে এ দিন সকালে ১০টা থেকে প্রায় ছ’ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পুরুলিয়া জেলা খাদ্য দফতর জানিয়েছে, জঙ্গলমহলের গরিব বাসিন্দাদের দু’টাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার জন্য বিশেষ কার্ড দেওয়ার কাজ চলছে। যে সব আদিবাসী পরিবারের বার্ষিক আয় ৩৬ হাজার টাকা ও অ-আদিবাসী পরিবারের বার্ষিক আয় ৪২ হাজার টাকার মধ্যে, তাঁরাই শুধু এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন। তবে, অন্ত্যোদয় ও অন্নপূর্ণা প্রকল্পভুক্ত বাসিন্দারা এই সুবিধা পাবেন না। |
এই প্রকল্পের আওয়ায় আসা উপভোক্তাদের বিশেষ কার্ড দেওয়ার জন্য এ দিন সেখানে খাদ্য দফতরের পরিদর্শক ও রেশন ডিলার গিয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা দশরথ মাহাতো, শরৎচন্দ্র মাহাতোর অভিযোগ, “রেশন ডিলার ওই বিশেষ প্রকল্পের উপভোক্তাদের নাম পড়ে শোনানোর সময় অসঙ্গতি আমাদের নজরে আসে। এলাকায় থাকেন না এমন অনেকের নামেও কার্ড রয়েছে। আবার অন্ত্যোদয় ও অন্নপূর্ণা যোজনায় থাকা কয়েকজনের নামেও কার্ড বিলি করা হচ্ছিল।” এ নিয়েই গোলমাল বাধে। রেশন ডিলার বলেন, “অল্প কয়েকটি ভুল নাম রয়েছে। সেগুলি সংশোধন করে নেওয়া হবে।” বুন্দিয়া প্রাথমিক স্কুল থেকে কার্ড বিলি করার সময় বাসিন্দাদের একাংশ তাঁদের আটকে রাখেন।
দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশো বাসিন্দা ওই দু’জনকে আটকে রেখেছেন। বিডিও পার্থ কর্মকার ও জয়েন্ট বিডিও প্রহ্লাদ বিশ্বাস (শনিবার তাঁকেও সিন্দরাইডি প্রাথমিক স্কুলে আটকে রাখা হয়েছিল) -সহ আধিকারিকদের কাছে ক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বাসিন্দারা। উপভোক্তাদের নির্বাচন করা নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান ও খাদ্য দফতরের পরিদর্শকের মধ্যে তাপানউতোর শুরু হয়। বুন্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা তথা স্থানীয় দিঘি পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের প্রভাতি মাহাতোর অভিযোগ, “শনিবার এই গ্রামে ৭০০ কার্ড বিলি করা হয়েছে। কিন্তু উপভোক্তা নির্বাচনে অসামঞ্জসা রয়েছে।” অন্য দিকে, খাদ্য দফতরের পরিদর্শক রতন সিংয়ের দাবি, “পঞ্চায়েতের পাঠানো তালিকা ধরেই এই বিশেষ প্রকল্পের উপভোক্তা নির্বাচন করা হয়েছে।” প্রধান প্রভাতিদেবী ও উপপ্রধান ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সোনামনি সোরেনের পাল্টা দাবি, “ব্লক অফিস থেকে তালিকা পেয়ে খাদ্য দফতর ওই কার্ড তৈরি করেছে। চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করার সময় আমাদের জানানো হয়নি।” পরে বিডিও বলেন, “নামের তালিকা তৈরি নিয়ে সমস্যা হয়েছে। যে নামগুলি নিয়ে অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাঁরা প্রকল্পে থাকার জন্য দাবি জানাচ্ছেন, তাঁদের আবেদন পত্র জমা করতে বলা হয়েছে।” |