পুরুলিয়ায় ফের আত্মসমর্পণ মাওবাদীর
প্যাকেজের ‘টানে’ আসবেন আরও: ডিজি
কদিন খেতে পাওয়ার টানেই সমাজ ছেড়ে ‘বনপার্টি’তে নাম লিখিয়েছিলেন। সেই খাবার চেয়েই যখন স্কোয়াডে জুটল মারধর, তখন পার্টি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে আর দেরি করেননি রবি মান্ডি। ঠিক করেছিলেন, সমাজের মূলস্রোতে ফিরবেন।
রবিবার পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বছর উনিশের সেই রবিই ‘আনুষ্ঠানিক’ ভাবে মূলস্রোতে ফিরলেন। সেই অর্থে জাগরী বাস্কে, রাজারাম সোরেন বা দুর্যোধন রাজোয়াড়দের মতো বড় মাপের স্কোয়াড নেতা একেবারেই নন। তবু একাধিক খুনের অভিযোগ থাকা মাওবাদীদের অযোধ্যা প্লাটুনের অন্যতম কম বয়েসী ‘সেকশন মেম্বার’ রবির আত্মসমর্পণকে পুলিশ-প্রশাসন তাদের ‘সাফল্য’ হিসাবেই দেখছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সুনীলকুমার চৌধুরী বলেন, “স্কোয়াডে রবির নাম ছিল সিংরাই। এই তরুণ বলরামপুর থানার ভাঙিডি গ্রামের বাসিন্দা। ২০১০ সালের গোড়ার দিক থেকে রবি মাওবাদীদের সঙ্গে ছিলেন।”
তবে, জঙ্গলমহলের অনেক তরুণী-তরুণীকেই ‘জোর করে’ স্কোয়াডে নেওয়ার যে অভিযোগ মাওবাদীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের, তা এ দিন কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে রবির কথায়। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছর গোড়ার দিকে মাওবাদী স্কোয়াড নেতা রঞ্জিত পাল রবিকে স্কোয়াডে নিয়ে যান। সংসারে চরম অভাব থাকলেও বাড়ির একমাত্র ছেলে মাওবাদীদের সঙ্গে যাক, তা চাননি পরিবারের সদস্যেরা। রবির কথায়, “আমাকে বলল যেতেই হবে। খেতেও দেবে বলল। আমি কী বলব?” পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কোয়াডে থেকে কিছু দিন পরেই বাড়ি ফিরে আসেন রবি। ভিন্ রাজ্যে কাজে যান। ন’মাস আগে বাড়ি ফিরতেই মাওবাদীরা তাঁকে ফের স্কোয়াডে নিয়ে যায়। কিন্তু জঙ্গল-জীবনে হাঁফিয়ে উঠে এ বার পাকাপাকি ভাবে স্কোয়াড ছাড়লেন রবি।
পুরুলিয়া ডিএসপির দফতরে মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য রবি মান্ডি। শনিবার সুজিত মাহাতোর ছবি।
গত ৬ নভেম্বর পুরুলিয়াতেই আত্মসমর্পণ করেন মাওবাদী দম্পতি দুর্যোধন ও আকরি সহিস। গত বৃহস্পতিবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন মাওবাদী জঙ্গি রাজারাম ও তাঁর স্ত্রী, সশস্ত্র স্কোয়াড নেত্রী জাগরী বাস্কে। রাজ্য পুলিশের কর্তাদের দাবি, সরকারের আত্মসমর্পণের প্যাকেজ এঁদের মূলস্রোতে ফিরতে উৎসাহ দিয়েছে। এ দিন বীরভূমের সিউড়িতে পুলিশের একটি অতিথিনিবাসের উদ্বোধনে গিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আরও কিছু মাওবাদী আত্মসমর্পণ করবেন। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আত্মসমর্পণের যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তা খুবই ভাল। সেই হিসেবে আরও আত্মসমর্পণ হবে বলে আমাদের ধারণা।” শান্তি প্রক্রিয়া ও যৌথ বাহিনীর অভিযান এক সঙ্গে চলবে বলেও ডিজি জানান।
মাওবাদী-মোকাবিলায় এই ‘দ্বিমুখী’ প্রক্রিয়াকে আরও এক বার সমর্থন জানিয়েছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। যৌথ বাহিনীর অভিযান এবং শান্তি-আলোচনা---দু’টোই একসঙ্গে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে স্বাগত জানান রাজ্যপাল। কলকাতা পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে এ দিন রাজ্যপাল বলেন, “এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী নেত্রী থাকাকালীনও মাওবাদীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার কথা বলতেন। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি সেই অবস্থান অটুট রেখেছেন।” সম্প্রতি সল্টলেকে এক অনুষ্ঠানেও রাজ্যপাল বলেন, “মাওবাদী নিয়ে রাজ্য সরকার এখন যে পদক্ষেপ করছে, তা ঠিক।”
পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরক্ষর রবি প্রথম দিকে স্কোয়াড-সদস্যদের ফাইফরমাস খাটতেন। পরে তাঁকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পুলিশ সুপার বলেন, “ও নিজে থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ব্যবহার করত। কখনও কখনও এসএলআর। তবে আত্মসমর্পণের সময় ও কোনও আগ্নেয়াস্ত্র আনেনি।” তাঁর দাবি, বাঘমুণ্ডি থানার চিরুগোড়া-পাড়ডি গ্রামে তিন জনকে এবং বলরামপুরের তিলাই গ্রামে দু’জনকে খুনের ঘটনায় রবি জড়িত বলে জেরায় কবুল করেছেন। এ ছাড়া এ বছর ১৯ সেপ্টেম্বর বলরামপুরের বেড়সা গ্রামের অদূরে অযোধ্যা পাহাড়ে পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ের সময়ও রবি মাওবাদীদের সঙ্গে ছিল। পুলিশ সুপার বলেন, “আর কোন কোন ঘটনায় ও যুক্ত, তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কেননা, ২০১০ সালে এই জেলায় ৩২ জন খুন হয়েছেন মাওবাদীদের হাতে।”
পুলিশ সুপারের দাবি, ‘মধ্যস্থদের’ মাধ্যমে রবির আত্মসমর্পণ হয়েছে। তবে, মধ্যস্থ কারা, তা তিনি বলেননি। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে সদ্য গঠিত ‘জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধী কমিটি’। শনিবার রাতেই রবিকে বলরামপুরের উরমার কোনও একটি জায়গায় আনা হয়। সেখান থেকে পুলিশ তাঁকে নিয়ে আসে পুরুলিয়ায়। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে রবির স্বীকারোক্তি, “এই জীবন আর ভাল লাগছিল না। কোনও কথা না শুনলেই মারধর করা হত। এক দিন খিদে পেয়েছিল। খাবার চেয়েছিলাম বলেও মার জুটেছিল। তখনই ঠিক করি, আর না।” পুলিশের দাবি, গ্রামে ফিরলে মাওবাদীরা তাঁকে মেরে ফেলতে পারেন রবির আশঙ্কা। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই রবিকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.