ধুলো জমছে পড়ে থাকা সরঞ্জামে, নষ্ট হচ্ছে গাড়ি
ধুঁকছে বিশেষ জেলা তথ্য-সংস্কৃতি দফতর
রিকাঠামো এবং কর্মীর অভাবে ধুঁকছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের বিশেষ জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। দফতরে যে দু’একজন কর্মী আছেন, কাজকর্ম তেমন না থাকায়, প্রায় বসে বসেই বেতন পাচ্ছেন তাঁরা। দফতরের আধিকারিককেও মাসে দু’তিন দিনের বেশি দফতরে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় দফতর থেকে যে সব পরিষেবা দেওয়ার কথা এলাকার মানুষকে তা প্রায় বন্ধ।
এ বিষয়ে রাজ্যের তথ্য অধিকর্তা উমাপদ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই অফিসটির জন্য আমরা একজন বিশেষ তথ্য ও সংস্কৃতি অফিসার নিয়োগ করেছি। রাজ্যের সর্বত্র বিশেষত গ্রামস্তর পর্যন্ত জনস্বার্থে নেওয়া সরকারি নানা প্রকল্পের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে অবহিত ও সচেতন করতে যে নীতি আমরা নিয়েছি তার মধ্যে সুন্দরবন এলাকার ওই দফতরও পড়ে। নতুন অফিসার নিয়োগে দফতরের কাজকর্ম আরও ভাল হবে। উন্নতি হবে পরিষেবারও।”
১৯৭৯ সালে কাকদ্বীপের বিশেষ এই জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতরটি অনুমোদন পায়। উদ্দেশ্য ছিল, জেলার বিশেষত সুন্দরবন অঞ্চলের ১৯টি ব্লকের মানুষকে সরকারি নানা প্রকল্পের বিষয়ে অবহিত করা, তাঁদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। যে ১৯টি ব্লকের জন্য এই পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল সেগুলি হল, উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি-১ ও ২, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, মথুরাপুর-১ ও ২, জয়নগর-১ ও ২, কুলতলি, ক্যানিং ১ ও ২, বাসন্তী ও গোসাবা।
দফতর তৈরি হওয়ার পরে বিভিন্ন ব্লকে সরকারি নানা প্রকল্পের বিষয়ে নিয়মিত তথ্যচিত্র, মাইক-প্রচারের সাহায্যে জনগণকে অবহিত, সচেতন করার প্রয়াস চলছিল ভালভাবেই। বিশেষত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, নারী পাচার, কুষ্ঠরোগ ইত্যাদি বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে কাকদ্বীপের রথতলা মোড়ের কাছে একটি দোতলা বাড়িতে চালু করা হয়েছিল ওই দফতর। কেনা হয়েছিল বিভিন্ন প্রকল্পকে সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য প্রোজেকশন যন্ত্র, টেলিভিশন, মাইক প্রভৃতি সরঞ্জাম। এ ছাড়া দফতরে একটি লাইব্রেরির ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। যাতে ছাত্রছাত্রীরা এসে সেখানে নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারেন।
চালু হওয়ার পরে বেশ কয়েক বছর ভালই চলছিল দফতরটি। কিন্তু ক্রমশ দফতরের কর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ অবসর নেওয়ায়, কেউ অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরেই দফতরটি ধুঁকছে। দফতরে বর্তমানে অপরেটর, ফিল্ড ওয়ার্কার, সুইপার, দু’জন করণিক ছাড়াও আরও কয়েকটি পদ দীর্ঘদিন নধরেই শূন্য পড়ে রয়েছে। কর্মীর অভাবে যে উদ্দেশ্য দফতরটি চালু করা হয়েছিল সেই কাজকর্ম সবই বন্ধ। দিনের পর দিন পড়ে থাকতে থাকতে যাবতীয় যন্ত্রপাতির উপরে ধুলো জমেছে। দফতরের ব্যবহারের জন্য থাকা গাড়িটিও দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
বর্তমানে যে তিনজন কর্মী দফতর সামলাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে দু’জন পিয়ন ও একজন নৈশরক্ষী। সামলাচ্ছেন বলতে সময়মতো দফতরে আসা এবং চলে যাওয়া।
সম্প্রতি দফতরে গিয়ে দেখা গেল, তিন কর্মী ঘরে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। আধিকারিকের ঘর-সহ বেশিরভাগ চেয়ারই ফাঁকা। উপস্থিত কর্মীরা জানালেন, “পাঁচ-ছয় বছর আগে পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যালয় বা ক্লাবগুলিতে নাট্য কর্মশালা, ছৌ নাচের আসর, অঙ্কন ও ক্যুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হত দফতরের পক্ষ থেকে। কিন্তু ২০০৫ সালে মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি দফতর চালু হওয়ার পর থেকেই আমাদের কাজকর্ম একেবারেই নেই। কাজ না থাকায় দফতরের আধিকারিকও মাসে ২-৩ দিনের বেশি আসেন না। নতুন করে কর্মী নিয়োগ করা হলে ফের কাজকর্ম শুরু হতে পারে। আমরাও মানুষকে পরিষেবা দিতে পারব।”
এ ব্যাপারে দফতরের ওই আধিকারিক দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “দফতরে কোনও কাজ নেই। শুধু শুধু গিয়ে বসে থাকা। কী করব অফিস গিয়ে? প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ করে দফতরের কাজকর্ম ফের চালু করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

দফতরে পড়ে ফাঁকা চেয়ার। ভেঙেচুরে পড়ে রয়েছে গাড়ি।--নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.