চার দিন ধরে ঠাঁই হয়েছিল কালভার্টের পাশে। সারা গায়ে দগদগে ঘা, আর সেই সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রনা। অনেকে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছেন, অনেকে আবার কাছে এসে মুমূর্ষু রোগীর অবস্থাটা দেখে গিয়েছেন। তবে শরীরে পচে যাওয়া মাংসের দুর্গন্ধে খুব একটা কাছে ঘেঁষতে পারেননি কেউই। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা সহায়-সম্বলহীন ওই যুবকের পাশে এসে দাঁড়ায় পুলিশ। আর মানবিকতার খাতিরে তাই অসুস্থ ওই যুবককে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে তাঁর যথাযত চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে দিয়েছে পুলিশই। রবিবার দুপুরে শান্তিপুর হাসপাতাল কর্মীদের সাহায্য নিয়ে মুমূর্ষু ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশই। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই যুবকের নিম্নাঙ্গের বিভিন্ন অংশে পচন শুরু হয়েছে। সারা গায়ে দগদগে ঘা। দুর্গন্ধে কাছে ঘেঁষাই কঠিন। এই অবস্থায় শান্তিপুরের বৈষ্ণবপাড়া কালভার্টের কাছে দু’দিন ধরে পড়ে ছিলেন ওই যুবক। স্থানীয় বাসিন্দারাই পুলিশকে খবর দেন। রবিবার সকালে শান্তিপুর থানার পুলিশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসপাতাল কর্মীদের সহযোগীতায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও তাঁরা ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে এসেছিল। শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার সমর জি অধিকারী বলেন, ‘‘চার দিন আগেও পুলিশ ওই যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। আমরা তাঁর চিকিৎসাও শুরু করেছিলাম। কিন্তু রাতে ওই যুবক হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। ফের তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে পুলিশ। পুলিশের এই ভূমিকা সত্যিই মানবিক।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই যুবকের যে ধরণের চিকিৎসার প্রয়োজন তা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে আমরা তাঁকে সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অসুস্থ ওই যুবকের নাম টমাস ফ্রেডরিক। বৈষ্ণবপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ছেলেটিকে ওই ভাবে পড়ে থাকতে দেখে খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু সমস্ত শরীরে ঘা। দুর্গন্ধে কাছে যাওয়া যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়েই তাই প্রশাসনকে জানাই।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে অহরহ। খবর দেওয়ার পরে দেরী করে আসা কিংবা কর্তব্যে ঢিলেমির অভিযোগ করেন অনেকেই। সম্প্রতি শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে শৌচাগারের পাশে পড়ে থেকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছিল এক মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীর। এই সব ঘটনার পাশে শান্তিপুরের এই ঘটনা একটি দৃষ্টান্ত। যদিও শান্তিপুর থানার পুলিশকর্মীরা তা মানতে রাজি নন। তাদের কথায়, পুলিশের কাজই আপদে বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এ ক্ষেত্রেও সেই মানবিকতার খাতিরেই কাজ করেছে পুলিশ। |