কার্তিক পুজো ঘিরে জমজমাট পলাশিপাড়া। অন্যান্য বারের মত এ বছরও চার দিন ধরে কার্তিক পুজোয় মেতেছে তেহট্টের এই গ্রাম। ছোট বড় মিলিয়ে চল্লিশটিরও বেশি কার্তিকপুজো হচ্ছে গ্রামে। আট থেকে আশি গ্রামের সকলেই পুজো নিয়ে মেতে উঠেছে।
কাঁচের মণ্ডপ তৈরি করেছে তহবাজার মেইন গেট পুজো কমিটি। কমিটির অন্যতম শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতিবারই আমরা বিশেষ কিছু করার চেষ্টা করি। এ বছর মণ্ডপ সেজেছে কাঁচ দিয়ে। মণ্ডপের ভিতরে কাঁচ দিয়ে তৈরি হয়েছে মিউজিয়াম। রাখা হয়েছে বিভিন্ন মহাপুরুষের ছবি। মাটির তৈরি মডেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে যাযাবরদের জীবন, অসহায় বৃদ্ধদের কথা ও সাপুড়েদের জীবনযাত্রার কথা।” |
ধান, মুসুরির ডাল, আতপ চাল, কলাই, কালো জিরের মত রান্নার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছে রায় মার্কেট পুজো কমিটি। অন্যতম উদ্যোক্তা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রতিমা ছাড়া সব কিছুই তৈরি করেছে পুজো কমিটির ছেলেরা। পুজোর পরিকল্পনা আমরা অনেক আগেই শুরু করে দিই। বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল পাইথন।’’
এলাকার অন্যতম বড় বাজেটের পুজো হচ্ছে বেলতলা মুক্তি সঙ্ঘের আয়োজনে। বাজেট প্রায় তিন লক্ষ টাকা। পুজোর উদ্যোক্তা অনুপ বৈরাগ্যের কথায়, ‘‘প্রতিবারের মত প্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জায় জোর দিয়েছি আমরা। মেলাও বসেছে। প্রতি সন্ধ্যায় দেখানো হচ্ছে সমুদ্র মন্থনের দৃশ্য।’’ সিনেমাহল ষষ্ঠিতলা মন্দির কমিটির সদস্য সম্বিত ঘোষ বলেন, ‘‘পোড়ো বাড়ির আদলে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। আলো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আইফেল টাওয়ার।’’ চন্দননগরের বিশেষ আলোকসজ্জা নজরে পড়বে বাসস্ট্যান্ড কার্তিক পুজো কমিটির মণ্ডপে। পুজো কমিটির সুভাষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ কলকাতার লাটবাগানের একটি শিবমন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে মানব স্ট্যাচুও।’’ |
আপনজন সঙ্ঘের শ্রীদাম বৈরাগ্য বলেন, ‘‘আমাদের পুজো ৪০ বছরে পড়ল। শ্মশান ও শবদাহের দৃশ্য আলো ও শব্দের ব্যবহার করে দেখানো হবে। মাটির পুতল দিয়ে তৈরি হয়েছে শ্রীচৈতন্যদেবের জীবন বৃত্তান্ত। থাকছে তারা মা, বামাক্ষ্যাপা ও রামকৃষ্ণ, সারদা মায়ের মানব স্ট্যাচু’’ নাথপাড়া সর্বজনীন কার্তিকপুজো কমিটির সলিল কর বলেন, ‘‘আমরা জোর দিয়েছি আলোকসজ্জার উপরে। আলো দিয়ে তৈরি হয়েছে চাঁদের বুড়ি, হনুমানের লঙ্কাকাণ্ড, বাঘ ও স্পাইডার ম্যান। সোমবার বিসর্জনের দিন পুরুলিয়ার শিল্পীদের দিয়ে ছৌ নাচের আয়োজন করা হয়েছে।’’
যুবক সঙ্ঘের কার্তিকপুজো এ বার ৩৭ বছরে পড়ল। উদ্যোক্তাদের মধ্যে অমিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘সাঁইথিয়া রেল দূর্ঘটনার দৃশ্য আমরা পুজো মণ্ডপে তুলে ধরেছি। থাকছে আলো ও শব্দের ব্যবহারও।’’ বাজার কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কার্তিক পুজোই এখন এই এলাকার সবথেকে বড় উৎসব। সব ধর্মের মানুষ এই উৎসবে সামিল হন। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই পুজো শেষ হবে আজ, সোমবার। নজরকাড়া শোভাযাত্রা করে হবে বিসর্জনও।’’
স্থানীয় বাসিন্দা তেহট্ট ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখানে পাঁচ দিন ধরে পুজো চলে। সোমবার ঘট বিসর্জন উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করে পুজো কমিটিগুলো। এই উৎসবের সময়ে কোথাও যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রচুর স্বেচ্ছাসেবকও থাকেন। পঞ্চায়েত ও সমস্ত পুজো উদ্যোক্তাদের আমরা অনুরোধ করেছি, বিসর্জনের পর জলঙ্গি নদী যাতে দূষিত না হয় সে জন্য নদী থেকে প্রতিমার কাঠামো যেন দ্রুত তুলে নেওয়া হয়।’’
|
পলাশিপাড়ায় কার্তিক পুজোর ছবি দু’টি তুলেছেন কল্লোল প্রামাণিক। |