রাস্তা সংস্কার না করার ফলে প্রায়ই যানজট হয়, এ বার হচ্ছে সংস্কারের জন্য রাস্তা আটকে থাকায়।
যান নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা না নিয়েই পুর-কর্তৃপক্ষ রাস্তা সংস্কার করতে শুরু করে দেওয়ায় ব্যাপক যানজট হচ্ছে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ রোডে। এতে ক্ষুব্ধ পুরবাসিন্দারা। গত মঙ্গলবার থেকে ওই রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু জনবহুল ও ব্যস্ততম ওই রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও পুরকর্মী বা ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন না থাকায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ব্যাপক যানজট।
এ দিকে রাস্তার একাংশ সারাইয়ের ফলে তা বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়ায় রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। আর ওই সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে যান চলাচল করতে গিয়ে শুরু হয়েছে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতাও। এর ফলে যানজট আরও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। রাস্তায় তা নিয়ে শুরু হচ্ছে বিবাদ। কখনও কখনও তা গড়াচ্ছে হাতাহাতিতেও। বহরমপুর মহকুমাশাসক অধীরকুমার বিশ্বাসের সাফ কথা, “জনবহুল ওই রাস্তা সংস্কার করার আগে যান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি পুরসভার ভাবা উচিত ছিল। কেননা, সংস্কার করতে গিয়ে সংকীর্ণ হয়ে পড়ার ফলে ওই রাস্তায় যানজট তো হবেই। যানজট নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমি পুরসভা ও ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।” |
দুর্গা পুজোর আগে ওই রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়ে। তখন বহরমপুর জলট্যাঙ্ক মোড়ের কাছেই কৃষ্ণনাথ রোডের উপরে মার্কেট কমপ্লেক্সের সামনের ওই রাস্তায় উঠে আসে নর্দমার জলও। তখন রাস্তা ধরে যাতায়াত করাই সমস্যা হয়ে যাচ্ছিল। পুরসভার পক্ষ থেকে দুর্গাপুজোর আগেই তা সারানোর চেষ্টাও হয়। সেই সময় গির্জার মোড় বরাবর রাস্তার বাঁ দিকের অর্ধেক জুড়ে কংক্রিটের ঢালাই করে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই কংক্রিটের ঢালাই ‘দায়সারা’ ভাবে ফেলা রাখার ফলে রাস্তাটি অসমান হয়ে ‘মরণফাঁদ’ তৈরি হয়।
গত ১১ নভেম্বর রাতে বাড়ি ফেরার পথে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় পড়েন এক স্বর্ণব্যবসায়ী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ওই রাতেই বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতাল থেকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর পরেই শনিবার সকালে তড়িঘড়ি করে অসম্পূর্ণ কাজের জায়গা ঘিরে ‘রাস্তার কাজ চলছে’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয় পুরসভার তরফে। এর পরে গত ২১ নভেম্বর কলকাতার হাসপাতালে ওই ব্যবসায়ী মারা যান। তারপরেই তড়িঘড়ি ওই রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী হয় পুর-কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু রাস্তা সংস্কার করতে গিয়ে যানজট নিয়ন্ত্রণে পুরসভার উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ সাধারণ বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ী মহল। চেম্বার অফ কমার্সের জেলা সভাপতি অজয় সিংহ বলেন, “উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের দিকটি যাতে উপেক্ষিত না থাকে, তাও পুরসভার দেখা উচিত। ফলে ওই রাস্তায় যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরকর্মী বা পুরসভার তরফে পুলিশ প্রশাসনের কাছে অবেদন করে ট্র্যাফিক পুলিশ নিয়োগ করা অবিলম্বে প্রয়োজন।” পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “ওখানে সর্ব ক্ষণের জন্য তিন জন কর্মী রয়েছেন। তবে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা ট্রাফিক পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি।” বহরমপুরের ট্র্যাফিক ইন্সপেক্টর অতুল মণ্ডল অবশ্য বলেন, “ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন করা উচিত ছিল কিন্তু কর্মী সংখ্যা কম থাকায় তা হয়নি। তবে সারা দিনের মধ্যে বেশ কয়েক বার ওই এলাকায় টহল দিয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সোমবার থেকে ট্র্যাফিক পুলিশ নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।” |