আমি শুধু চেষ্টা করছি, মুহূর্তটা ঈশ্বরের হাতে
বিশ্বকাপ জয়ের মাঠ। নিজের ঘরের মাঠ। যেখানে রিলায়্যান্স কাপে বলবয় থেকে তাঁর যাত্রা শুরু। ২ এপ্রিল এখানেই অধরা স্বপ্ন সফল করে শিশুর মতো ছুটে বেড়িয়েছিলেন। কখনও তাঁর চোখে জল। কখনও তিনি সতীর্থদের কাঁধে। সাড়ে ন’মাস পরে ওয়াংখেড়েতে তিনি ফিরছেন শততম সেঞ্চুরি নিয়ে সারা দেশের প্রার্থনা আর প্রত্যাশাকে সঙ্গী করে। মুম্বইতে এসে আরওই মনে হবে তিনি সূর্য। আর বাকিরা হচ্ছেন অন্যান্য গ্রহ। তাঁকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করছে। তিনি সচিন তেন্ডুলকর প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার-কে।

প্রশ্ন: এই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ বাইশ বছর কাটিয়ে ফেললেন, সেটা নিয়ে আপনার অনুভূতিটা ঠিক কী রকম?
সচিন: খুবই তৃপ্ত একটা অনুভূতি রয়েছে। আমার মনে হচ্ছে এত কাল ধরে ক্রিকেটের প্রতি পরিশ্রম, সাধনা আর দায়বদ্ধতা যে দেখিয়ে এসেছি, বাইশ বছর ধরে খেলতে পারাটা সেটার প্রতিফলন। বলতে পারেন এটা আমার ক্রিকেটের প্রতি সৎ, নিষ্ঠাবান থাকার একটা সার্টিফিকেট।

প্র: বাইশ বছরের এই যাত্রার দিকে পিছন ফিরে তাকালে আপনার চোখে কী বিশ্লেষণ উঠে আসে?
সচিন: মনোরম একটা যাত্রা। কিন্তু তার চেয়েও বেশি চ্যালেঞ্জিং। আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ যে, দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি আর চ্যালেঞ্জগুলো নিতে পেরেছি।

প্র: সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জটা কী?
সচিন: এত বছর ধরে ফিট থাকা। অনেক রকম চ্যালেঞ্জই তো একটা ক্রিকেটারকে মোকাবিলা করতে হয়। মাঠে, মাঠের বাইরে। কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ে একটা ধারাবাহিকতা রেখে খেলে যেতে গেলে সবচেয়ে জরুরি খুব উচ্চ মানের ফিটনেস ধরে রাখা।

প্র: এখন যেখানেই যাচ্ছেন সকলের তো একই প্রশ্ন। হান্ড্রেড্থ সেঞ্চুরিটা কবে হবে? কী করে সে সব থেকে নিজেকে আগলে রাখছেন?
সচিন: রাখতে হবে। দু’রকম হয়। প্রত্যাশার চাপে আপনি তলিয়ে গেলেন। আর প্রত্যাশার এনার্জিতে আপনি আরও ভাল খেললেন। আমি পরেরটাই চেষ্টা করি। নিজেকে বলার চেষ্টা করি, লোকে তোমার থেকে এত আশা করছে। আরও পরিশ্রম করো। নিজেকে আরও নিঃশেষ করে দাও। সেই লোকগুলোর কথা ভাবো, যারা তোমার ভাল কিছু দেখার আশা নিয়ে দুর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে। এটা ঠিক যে, সব সময় আমি মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি না। সব সময় আমি রান করতে পারি না। কিন্তু আমি আমার চেষ্টাটার ব্যাপারে সৎ থাকার চেষ্টা করতে পারি। আন্তরিক থাকার চেষ্টা করতে পারি। নিজেকে বলতে পারি, এমন একটা দিনও যেন না যায়, যখন তুমি মাঠে গিয়ে সেরাটা দিয়ে আসোনি।

প্র: শততম সেঞ্চুরি নিয়ে গবেষণা তো সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। রোজ কাগজে লেখালেখি হচ্ছে, টিভি চ্যানেলে শো হচ্ছে। হোটেলে রুম সার্ভিস দিতে এসে হোটেল-কর্মীরা একই কথা বলছেন। যেখানে যে অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, সবার এক আবদার। এর প্রভাবটাও নিশ্চয়ই সাংঘাতিক!
সচিন: আমি কাগজ পড়ছি না। নিউজ চ্যানেল দেখছি না। তবে আমিও বুঝতে পারছি, মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। খুব আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে এই মুহূর্তটার দিকে। সেই সিগন্যালগুলো আমিও যে পাচ্ছি না, তা নয়।

প্র: ঘরের মাঠে জনতার দাবি, চাপ তো আরও বেড়ে যাবে। প্রার্থনায় বসা গোটা দেশকে কী বলবেন?
সচিন: বলব যে, আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করতে পারি। আমি সেটা করছি। বলব, যখনই আমি ব্যাট হাতে বাইশ গজের দিকে যাই, আমি চাই একশো করে ফিরি। কিন্তু আমিও জানি সেটা রোজ সম্ভব নয়। তাই বলব, শততম সেঞ্চুরির লগ্নটা ঈশ্বরের হাতে ছাড়া থাক। যখন সময় আসবে, ঠিক হবে।

প্র: ঊননব্বইতে যখন পাকিস্তান গেলেন, তখনই তো আপনি তারকা। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ওয়ান্ডার কিড’। অত অল্প বয়সেই যে আপনাকে নিয়ে চার দিকে এত কথা হচ্ছিল, কিশোর মনে তার কী প্রভাব পড়েছিল?
সচিন: আমি জানতাম যে, লোকে আমাকে নিয়ে কথা বলছে। পাকিস্তান যাওয়ার আগে আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করেছিলাম। স্কুল ক্রিকেটে রেকর্ড করেছিলাম। সে সব দেখেই আমাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। আমার একটা আশ্চর্য রকম অনুভূতি হচ্ছিল (হাসি)। ভীষণ ছটফট করছিলাম। ভাবলাম হয়তো, এ বার একটু শান্ত হয়ে বসি। বসতে পারলাম না। আবার উঠে পায়চারি করতে শুরু করে দিলাম। শোওয়ার চেষ্টা করছি। পারছি না। আসলে এটা এমন একটা মুহূর্ত ছিল যার জন্য আমি ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখে এসেছি। সেই স্বপ্ন সফল হওয়ার মুহূর্তটা এসে পড়েছে দেখে আমি খুব উত্তেজিত ছিলাম। আর প্রচণ্ড নার্ভাস ছিলাম।

প্র: সাংঘাতিক চাপও থাকার কথা। বিশেষ করে অত ছোট বয়সে।
সচিন: উল্টোটা। সবাই যে আমাকে নিয়ে কথা বলছে, সেটা বরং আমার এনার্জি আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। জেদ বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমি নিজেকে বলতে পারছিলাম, এত লোক আমার থেকে ভাল কিছু আশা করছে। আমাকেও ভাল কিছু করে দেখাতেই হবে।

প্র: বাইশ বছর পরেও মানুষের প্রত্যাশা তো একই থেকে গিয়েছে। বরং আরও বেড়ে গিয়েছে। এখনও কি এটা বাড়তি এনার্জি না কি বিরাট চাপ?
সচিন: বাড়তি এনার্জি। এখনও। পজিটিভ এনার্জি।

প্র: কিন্তু সারাক্ষণ যে আপনার কাছ থেকে শুধু সেঞ্চুরিই আশা করা হয়, আপনি চল্লিশ করলে বলা হয় সচিন তেন্ডুলকর রান পাননি, এ সবের সঙ্গে কী করে মানিয়ে নেন?
সচিন: আমি এগুলো নিয়েই তো খেলছি। বাইশ বছর ধরে খেলার পর কী ভাবে এগুলো সামলাতে হবে সেটা জেনে যাওয়া উচিত। কিন্তু আমি আবার বলছি, এটা অত্যন্ত ইতিবাচক একটা ব্যাপার যে, মানুষ আমার থেকে প্রত্যাশা করে। আমার ওপর মানুষের এই আস্থা, বিশ্বাসটা থাকছে দেখলে ভীষণ অনুপ্রাণিত লাগে।

প্র: ২ এপ্রিলের সেই মায়াবী রাতের পর আবার ওয়াংখেড়েতে ফিরছেন। মাঝে ওয়ান ডে-টা তো আপনি খেলেননি। সেই ড্রেসিংরুম। সেই ব্যালকনি। আলাদা কোনও আবেগও কি থাকছে না?
সচিন: অবশ্যই থাকবে। ছেলেবেলা থেকে অনেক স্মৃতিই জড়িয়ে আছে ওয়াংখেড়ের সঙ্গে। কিন্তু সবার সেরা হচ্ছে, বিশ্বকাপ জয়ের মাঠ। সেই রাতে আমরা যা পেয়েছিলাম, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। আজও ওই রাতটার দিকে ফিরে থাকাই আর গায়ের রোম খাড়া হয়ে যায়। সারা জীবন তা-ই হবে।

প্র: বাইশ বছরের ক্রিকেটজীবনে কি ২ এপ্রিল-ই সেরা প্রাপ্তি?
সচিন: ব্যক্তিগত স্বপ্নের কথা যদি বলেন তা হলে অবশ্যই তাই। কিন্তু কেরিয়ারের দিক থেকে দেখতে গেলে, আমার সেরা প্রাপ্তি বাইশ বছর ফিট থেকে খেলে যেতে পারা।

একজন ক্রিকেটারের কাছ থেকে এইমাত্র জানতে পারলাম, শেষ টেস্টের জন্য ওয়াংখেড়েতে খুব ভাল ব্যাটিং পিচ তৈরি করা হয়েছে। বুঝতে পারছেন তো কেন?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.