জয়োল্লাসের মধ্যে সিদ্ধার্থ মাল্যকে সঙ্গে নিয়ে তখন ক্লাবের বড় কর্তারা মোহনবাগান ড্রেসিংরুমে ঢুকছেন। অন্য প্রান্তের ড্রেসিংরুমের সামনে দাঁড়িয়ে তখন বিস্ফোরণ ঘটালেন ওপারা ও পেন। লাল-হলুদের প্রধান স্টপারের সরাসরি অভিযোগ, “আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এই ভাবে ম্যাচ জিততে হলে মাঠে নামার কী দরকার?” একটু দুরেই দাঁড়ানো পেন আরও আক্রমণাত্মক, “মোহনবাগান রেফারিকে সামনে রেখে ডাকাতি করল।” তাঁদের ক্ষোভ ওডাফার পেনাল্টি গোল নিয়ে। |
ম্যাচের পর উত্তেজিত ওপারা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
মোহন-ড্রেসিংরুমে ততক্ষণে পুরস্কার ঘোষণার কাজ শেষ করে ফেলেছেন সিদ্ধার্থ মাল্য। পুরো দলকে নিয়ে সোমবার দুপুরে পাঁচতারা হোটেলে জমকালো পার্টি। ঘামে ভেজা জার্সি খুলতে খুলতে তার আগেই নতুন অস্ট্রেলীয় ডিফেন্ডার ড্যানিয়েল জানালেন তাঁর অবাক হওয়ার কথা। “এত লোকের সামনে জীবনে কখনও খেলিনি। স্মরণীয় ম্যাচ।” আর দলের অধিনায়ক ব্যারেটো জেতার কৃতিত্ব ভাগ করে নিলেন পুরো দলের সঙ্গে। পরের ম্যাচে প্রয়াগের বিরুদ্ধে ব্যারেটো ও জুয়েল রাজা নেই। ও সব নিয়ে কে ভাববে জয়ের আনন্দে?
অন্য ড্রেসিংরুমে তখন অন্য দৃশ্য। ক্ষোভ আর হারের জ্বালার মধ্যেও নিজেদের উজ্জীবিত করতে ড্রেসিংরুমে গণ হাততালি দিলেন লাল-হলুদ কর্তা থেকে ফুটবলাররা। লম্বা আই লিগের জন্য সবাইকে চাঙ্গা রাখতেই হয়তো! কোচ ট্রেভর মর্গ্যান দাঁড়ালেন তাঁর ফুটবলারদেরই পাশে, “হারলেও হতাশ নই। আমরা অসাধারণ খেলেছি। ফুটবলারদের দায়বদ্ধতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। ভাগ্যবান কোচই জিতল আজকের ম্যাচ।” তবে মর্গ্যানের কথা কী আদৌ মলম লাগাতে পারবে বেলেঘাটার রাণা সাহার মতো কট্টর লাল-হলুদ সমর্থকদের হৃদয়ে? |
ক’দিন আগেই মাকে হারিয়েছেন। তবুও প্রিয় দলের জন্য চেঁচাতে ছুটে এসেছেন যুবভারতীতে। লাল-হলুদ জার্সিতে নয়। কাছা গায়েই।
জয়ের নায়ক ওডাফা বেরনোর সময় জয় উৎসর্গ করলেন মোহন-সমর্থকদের উদ্দেশেই। তাঁর পিছনেই দাঁড়িয়ে নবির প্রথম প্রতিক্রিয়া, “লাল-হলুদ জার্সি ছেড়ে মোহনবাগানে এসেই বড় ম্যাচ জিতলাম। অসাধারণ লাগছে।” বিরতিতে যাঁকে সুব্রত বলেছিলেন, “তোকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে।” ভারত অধিনায়ক হয়েছেন ক’দিন আগে। এ বার ক্লাবের হয়ে বড় জয়। নবির আনন্দের শেষ নেই।
রবিবাসরীয় বিকালের টিকিট ব্ল্যাক। লাখের বেশি দর্শক। সন্ধ্যার ব্ল্যাক-আউট। মরসুমের প্রথম বড় ম্যাচের রং অনেক। যেখানে মোহনবাগানের ঘরের ছেলের কাছেই হারতে হল ডার্বিতে না-হারা মর্গ্যানকে।
যুবভারতীর পেনাল্টি বিতর্ক
বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য: মোহনবাগানকে পেনাল্টি দেওয়ার যুক্তি নেই। ওপারার পা বলের উপর ছিল। সুনীলের পায়ে মারতে যায়নি। রেফারি লাইনের পিছনে ছিলেন। ইস্টবেঙ্গল বরং নিশ্চিত পেনাল্টি পেত। গাও-কে ট্রিপ করে ফেলা হল।
শিশির ঘোষ: মোহনবাগানের পেনাল্টিটা হতেও পারত, না-ও হতে পারত। তবে রেফারি ঘটনার খুব কাছে ছিলেন বলেই হয়তো পরিষ্কার ব্যাপারটা দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গাওয়ের ক্ষেত্রে পেনাল্টির প্রশ্ন নেই। বরং ওকে কার্ড দেখিয়ে রেফারি ঠিক করেছেন।
শ্যাম থাপা: মোহনবাগানের পেনাল্টিটা হয় না। ওপারা বলের উপর ট্যাকল করেছে। মোহনবাগানকে যদি ওই পেনাল্টিটা দেওয়া হয়, তা হলে ইস্টবেঙ্গলও পেনাল্টি পায়। বক্সে ধাক্কা দিয়ে ফেলা হল গাও-কে। |