দুষ্কৃতীদের টানা বোমাবাজিতে আতঙ্কিত হয়ে মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা বন্ধ করে দিলেন স্কুলের শিক্ষকেরা।
ঘটনাটি ঘটেছে উলুবেড়িয়ার রামচন্দ্রপুর হাইস্কুলে। শনিবার ছিল ইংরেজি পরীক্ষা। কিন্তু ওই দিন সকাল থেকে দুষ্কৃতীরা স্কুলের সামনে বোমাবাজি শুরু করে। ভয়ে ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকেরা স্কুলের কাছে ঘেঁষতেই পারেননি। সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষক অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে উলুবেড়িয়ার এসডিপিও-র কাছে এসে নিরাপত্তার দাবি জানান। আজ, সোমবারও স্কুলে টেস্ট পরীক্ষা রয়েছে। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা না হলে আজও পরীক্ষা নেওয়া যাবে না বলে শিক্ষকেরা জানান। পরীক্ষা সুনিশ্চিত করতে আজ শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কড়া নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে জেলা পুলিশের এক কর্তা দাবি করেছেন।
হীরাপুর পঞ্চায়েত এলাকায় রামচন্দ্রপুর হাইস্কুল। এই এলাকার দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর, মদাই প্রভৃতি গ্রামে বেশ কয়েক বছর ধরে দুষ্কৃতীদের মধ্যে ঝামেলা চলছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর, মদাই প্রভৃতি গ্রামের কিছু এলাকায় রমরম করে চলে চোলাই মদের ব্যবসা। এ ছাড়াও, এই এলাকায় গঙ্গার ধার থেকে মাটি চুরি করে তা পাচার করা হয়। এই সব চোলাই মদের কারবারী এবং মাটি পাচারকারীদের কাছ থেকে মোটা টাকা তোলা আদায় করে কিছু দুষ্কৃতী। তাদের একাধিক দল রয়েছে। তোলা আদায়কে কেন্দ্র করেই তাদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়।
মদাই গ্রামে পুলিশ ফাঁড়ি আছে। দুষ্কৃতীদের মধ্যে যখন বোমাবাজি ও সংঘর্ষ হয় তখন পুলিশ ফাঁড়ির ভিতরে ঢুকে বসে থাকে বলে অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, দুষ্কৃতীদের বেশিরভাগ স্থানীয় বাসিন্দা। তাদের মধ্যে যখন সংঘর্ষ বাধে তখন গ্রামবাসীদের একাংশও দুষ্কৃতীদের বিভিন্ন দলের পক্ষ নিয়ে বোমাবাজি ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ফাঁড়িতে পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় তাঁরা বহু ক্ষেত্রে অসহায় হয়ে পড়েন।
গত শুক্রবার রাত থেকে ফের মদাই, দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর প্রভৃতি গ্রামে দুষ্কৃতীদের মধ্যে বোমাবাজি শুরু হয়। বোমাবাজি চলে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত। সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বোমাবাজি চলতে থাকায় পরীক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারেনি। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শিক্ষকেরাও।
প্রধান শিক্ষক বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ধুলাসিমলার কাছে বাস থেকে নেমে দেখি সব বাকি শিক্ষকেরা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। দূর থেকে শোনা যাচ্ছে বোমার শব্দ। অভিভাবকেরা আমাকে ফোন করে জানান, তাঁরা ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এই অবস্থায় কী করবেন, আমাদের কাছে জানতে চান তাঁরা।”
অভিভাবকদের কাছ এ সব কথা শুনে অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে প্রধান শিক্ষক জানান। তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” এ বার ৭১ জন ছাত্রছাত্রী টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছে।
স্থগিত হয়ে যাওয়া ইংরেজি পরীক্ষা কবে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমি জেলার অতিরিক্ত স্কুল পরিদর্শককে বিষয়টি জানিয়েছি। সব বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গেলে ইংরেজি পরীক্ষা ফের নেওয়া যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।”
পুলিশের এক কর্তা জানান, আবগারি দফতর পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে চোলাই মদের ঠেকগুলি তুলে দিলেও ফের তারা বসে পড়ে। অন্য দিকে, বেআইনি ভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব তাঁদের নয় বলে জেলা পুলিশের ওই কর্তার দাবি। তাঁর বক্তব্য, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরই একমাত্র মাটি চোরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগে পেলে পুলিশ ওই দফতরকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালাতে পারে মাত্র। |