২০ অক্টোবর থেকে ২০ নভেম্বর। ঠিক এক মাস পর জঙ্গি কবল থেকে মুক্তি পেলেন অপহৃত ট্রেনচালক তরুণকুমার ভট্টাচার্য। হাইলাকান্দির পুলিশ সুপার হেমন্তকুমার ভট্টাচার্য জানান, অপহরণের পর থেকেই তরুণবাবুকে নিয়ে ঘন ঘন ঠাঁই বদল করছিল জঙ্গিরা। কারণ প্রথম থেকেই সিআরপি ও সেনা জওয়ানদের নিয়ে জেলার মিজোরাম সংলগ্ন পাহাড়ি অঞ্চলে যৌথ তল্লাশি চালানো হচ্ছিল। মাসভর অভিযানের চাপে অপহরণকারী দলটি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। আজ ভোরে অপহৃতকে নিয়ে জঙ্গিরা রামনাথপুর থানা এলাকার কাঞ্চিয়ালায় গিয়েছে খবর পেয়ে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে যৌথ বাহিনী। তখন তরুণবাবুকে পাহারা দিচ্ছিল তিন জঙ্গি। তারা ট্রেনচালককে ফেলেই পালায়। পুলিশ বাহিনী তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে রামনাথপুর থানায়। সেখান থেকে হাইলাকান্দি সার্কিট হাউস। ট্রেনচালক উদ্ধারের খবর পেয়ে সার্কিট হাউসে ছুটে যান তরুণবাবুর স্ত্রী-সন্তানেরা। গিয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক, জনস্বাস্থ্য কারিগরী মন্ত্রী গৌতম রায়, সাংসদ ললিতমোহন শুক্লবৈদ্য এবং তরুণবাবুর বহু পরিচিতজন। তরুণবাবুর স্ত্রী বিউটি দেবী প্রথমে কিছু সময় কথাই বলতে পারছিলেন না। পরে সাংবাদিকদের বলেন, “ঈশ্বর স্বামীকে বাঁচিয়েছেন।”
জোরদার তল্লাশির ফলেই ট্রেনচালককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হলেও বিভিন্ন সূত্রের দাবি , মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের বিনিময়েই ছাড়া পেয়েছেন তরুণবাবু। তিনি নিজে অবশ্য টাকা লেনদেনের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমার বাড়ি নেই, কোনও সম্পত্তি নেই, চাকরিটিই সম্বল। জঙ্গিদের টাকা দেব কোথা থেকে!’’
তরুণবাবু জানান, গত এক মাস ধরে তাঁকে নিয়ে পঁচিশ বার জায়গা বদলেছে জঙ্গিরা। হাঁটতে হাঁটতে পায়ে ফোস্কা পড়ে যায়। কিছুটা অসুবিধা হচ্ছিল খাওয়াদাওয়ায়। নিরামিষ খান জেনে জঙ্গিরা সিদ্ধ ভাত দিত। তবু খেতে চাইত না মন। পরে বাধ্য হয়েই খেতে হয়। অপহরণের দিন জোরে হাঁটানোর জন্য দু’চার বার বেত মারলেও এক মাসে আর কোনও দিন গায়ে হাত তোলেনি জঙ্গিরা। সহকর্মী উদ্ধারের খবরে রেলকর্মীদের মধ্যে সন্তোষ দেখা দিয়েছে। ২০ অক্টোবর রামনাথপুর ও মিজোরামের ভৈরবীর মধ্যবর্তী স্থান থেকে বদরপুর-ভৈরবী ট্রেন থামিয়ে রিয়াং জঙ্গিরা তুলে নিয়ে যায় চালক ও সহকারী চালককে। সহকারীর সে দিনই মুক্তি মিললেও তরুণবাবুকে আটকে রাখা হয় টানা এক মাস! |