অবৈধ লেনদেনের ক্ষেত্রে স্থানীয় কিছু লোকের পথের কাঁটা হয়ে ওঠাতেই সিস্টার ওয়ালসাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। সিস্টার খুনের তদন্তের পঞ্চম দিনে এমনই তথ্য হাতে এসেছে বলে পুলিশের দাবি। পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি না-হলেও পরোক্ষে মাওবাদীদেরও মদত ছিল বলে আজ দাবি করেছেন রাজ্য পুলিশের আইজি রাজকুমার মল্লিক। সেই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সাফল্য দাবি করে পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যেই খুনের কিনারা হয়ে যাবে। সিস্টার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এমন সাতজনকে এ দিন গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে সিস্টারের দক্ষিণহস্ত বলে পরিচিত এক ব্যক্তিও।
টানা পাঁচ দিনের তদন্তে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে এ দিন রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র রাজকুমার মল্লিক বলেন, “আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা সাঁওতল পরগনার পাকুড় জেলার গরিব মানুষের মধ্যে সিস্টার ওয়ালসার প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডের আকর্ষণ ছিল প্রচণ্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিস্টারের জনপ্রিয়তাই তাঁর কাল হয়ে ওঠে।” পুলিশ জানায়, সিস্টারের উপস্থিতি ওখানকার কিছু স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠীর কাছে ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেরই অবৈধ আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায় সিস্টারের প্রতিবাদী কাজে।
পাকুড় জেলার পুলিশ সুপার অমরনাথ খান্না জানিয়েছেন, সিস্টার খুনের ঘটনায় জড়িত প্রমাণ মেলার পরই এ দিন সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম: (১) পাইসিল হেমব্রম (এই যুবক একদা সিস্টারের দক্ষিণ হস্ত হিসেবে এলাকায় পরিচিত) (২) এডভিন মর্মু (৩) প্রেম টুরি (৪) টালা হেমব্রম (৫) রাকেশ টুরি (৬) রঞ্জন মরান্ডি (৭) প্রধান মুমুর্র্ূ। এর মধ্যে সিস্টারের ঘনিষ্ঠ এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে এডভিন মুর্মুর বিরুদ্ধে। ওই ধর্ষণের মামলার তদন্তে নেমেই পুলিশ হদিশ পেয়েছে সিস্টারের খুনিদের।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, কেরলার এর্নাকুলাম থেকে প্রায় দেড় দশক আগে ওয়ালসা এখানে এসেছিলেন মূলত সমাজসেবার টানে। এখানে বেসরকারি উদ্যোগে একটি কয়লাখনির জন্য তখন জমি অধিগ্রহণ চলছে। সিস্টার গ্রামবাসীদের নিয়ে উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন। দীর্ঘ আন্দোলন এবং অনেক টানাপোড়েনের পর সিস্টারের মধ্যস্থতায় জমিহারা পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয় খনি-কর্তৃপক্ষ। সিস্টারের ওই ভূমিকাকে গোড়া থেকেই সুনজরে নেয়নি এলাকার কিছু স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী। সিস্টারের অনুগামী গ্রামবাসীদের মধ্যে তলে তলে অপ্রচার শুরু হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ওয়ালসাকে খনি-কর্তৃপক্ষের কাছের লোক বলে রটিয়ে দেওয়া হয়।
ওই প্রচারে কাজও হয়। শেষ পর্যন্ত সিস্টারকে গ্রামছাড়া করার দাবিতে পথে নামেন ওই গ্রামের বেশ কিছু আদিবাসী এবং গরিব মানুষ। যারা কিছু দিন আগেও সিস্টার অন্তঃপ্রাণ ছিল। ওই একই দাবিতে গত ৮ নভেম্বর রাস্তা পর্যন্ত অবরোধ করে সিস্টার বিরোধী গোষ্ঠী।
পুলিশ জানায়, পথের কাঁটা সরাতে পাচুয়ারা আলুবেরা এবং টালিটোলা এই তিনটি গ্রামের স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জোট বাঁধে সিস্টারের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার রাতে ওই তিনটি গ্রামের বেশ কিছু মানুষ জোট বেঁধে সিস্টারকে দুনিয়া থেকে সরাতে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রায় ৪৫ জন মানুষ লাঠি, টাঙ্গি, কুড়াল নিয়ে চড়াও হয় সিস্টারের ঘরে। তাঁকে ঘর থেকে লাঠি পেটা করে টেনে বার করে এলোপাথাড়ি কোপায়। গলাও কেটে দেয়। |