দিল্লিতে বিজেপির মঞ্চে নিজের প্রতিনিধি পাঠিয়ে ভবিষ্যতে এনডিএ-র সঙ্গে থাকার বার্তা দিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। কিন্তু এখনও সরাসরি এনডিএ-তে যোগ না দেওয়ায় বিজেপির সকলেই যে তাঁকে খোলামনে গ্রহণ করতে পারছেন, তা নয়।
দিল্লির রামলীলা ময়দানে আজ আডবাণীর রথযাত্রার শেষ জন সমাবেশে সাংসদ থাম্বিদুরাইকে পাঠালেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতা। এর আগে গত সেপ্টেম্বরেও নরেন্দ্র মোদীর অনশন মঞ্চে নিজের দুই প্রতিনিধিকে পাঠিয়েছিলেন জয়ললিতা। কিন্তু সেটি ছিল অন্য এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান। আর এ বারে রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র দিল্লিতে আডবাণী, নিতিন গডকড়ী, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজের মতো বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও এনডিএ-র সব শরিকদের সঙ্গে সামিল হল জয়ললিতার দল। এই মঞ্চে দলের কোনও প্রতিনিধিকে পাঠানোর জন্য টেলিফোনে জয়ললিতাকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন আডবাণী। জয়ললিতাও তৎক্ষণাৎ দলের প্রতিনিধি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এ ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে বিজেপি নেতৃত্বের সকলেই যে জয়ললিতার উপরে ভরসা করছেন তা নয়। দলের এক নেতার আশঙ্কা, “হতে পারে কংগ্রেসের উপর চাপ বাড়াতেই জয়ললিতা এই ঘনিষ্ঠতার নাটক করছেন। তাই খোলাখুলি এনডিএ-তে আসছেন না। জয়ললিতা জানেন, শত দুর্নীতি সত্ত্বেও এই মুহূর্তে তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-কংগ্রেস জোট ভাঙ্গছে না। তাই তিনি সব পথ খোলা রাখছেন। প্রকাশ কারাটদের সঙ্গে আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন, আবার বিজেপির সঙ্গেও থাকছেন।”
বিজেপির রাজনৈতিক মঞ্চে জয়ললিতার দল উপস্থিত থাকলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে এনডিএ-তে সামিল হওয়ার বিষয়ে কোনও পক্ষ থেকেই কোনও শব্দ খরচ করা হয়নি। কিন্তু থাম্বিদুরাই জয়ললিতার ‘বিশেষ বার্তা’ পড়ে শোনান। দুর্নীতি মোকাবিলায় আডবাণী যে ‘লড়াই’ শুরু করেছেন, তাকে অভিনন্দন জানান জয়ললিতা, যাঁর বিরুদ্ধেই রয়েছে দুর্নীতির বহু অভিযোগ। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বন্ধু দলগুলিকে এক সঙ্গে কাজ করার বার্তাও দেন তিনি। আডবাণী থেকে গডকড়ী, সুষমা, জেটলি সকলেই থাম্বিদুরাইয়ের উপস্থিতিকে স্বাগত জানান। যাত্রাপথে তামিলনাড়ুতে যে জনসমর্থন পাওয়া গিয়েছে, তার কৃতিত্ব অনেকটাই জয়ললিতাকে দেন আডবাণী। তিনি বলেন, “তামিলনাড়ুতে আমাদের এক জন সাংসদ বা বিধায়কও নেই। তার পরেও এত জনসমর্থনে আমি অভিভূত। প্রবল বর্ষণ উপেক্ষা করেও সেখানে মানুষের ঢল নেমেছিল।”
বিহারে গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিজেপি নেতৃত্ব এনডিএ-র শরিক বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। মহারাষ্ট্রে আরপিআই(এ)-র পর হরিয়ানায় কুলদীপ বিশনোইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বিজেপি। বিজেপির সমর্থন নিয়ে কুলদীপ হিসার কেন্দ্রে জয়লাভ করেছেন। আর আরপিআই(এ)-র আটাওয়ালে আজ রামলীলা ময়দানেই প্রধানমন্ত্রিত্বের বিষয়টি উস্কে দেন। আডবাণীকে তিনি বলেন, “আপনিই ঠিক করুন, এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।”
জেডি(ইউ), শিবসেনা, শিরোমণি অকালি দলের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র থেকে এনডিএ-তে সদ্য আসা আরপিআই(এ)-র রামদাস আটাওয়ালেও আজ উপস্থিত ছিলেন দিল্লির মঞ্চে। অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় এনডিএ-তে কুড়িটির বেশি দল ছিল। ক্ষমতা হারানোর পরেই তারা ছিটকে যায়। আজ নতুন দল বিজেপির মঞ্চে আসায় উল্লসিত দলের নেতৃত্ব। আডবাণী আজ যাত্রার শেষ জন সমাবেশে বাজপেয়ীর প্রসঙ্গও টেনে আনেন। বলেন, “যাত্রা শুরুর ঠিক এক দিন আগে আমি বাজপেয়ীর কাছে গিয়ে গোটা বিষয়টি জানাই। তাঁর আশীর্বাদও নিই। কিন্তু অসুস্থতার কারণেই আগের বারের মতো এ বার বাজপেয়ী সক্রিয় হতে পারেননি। আমার যাত্রার এ’টি সব থেকে বড় দুর্বলতা।” |