আটত্রিশ দিনের রথযাত্রার শেষে রাজধানীতে পৌঁছে আজ এক ঐক্যবদ্ধ বিজেপি-কে পাশে পেলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। দলও তাঁর এই রথযাত্রাকে সম্বল করেই কেন্দ্রে সরকার বদলের জন্য ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করল এনডিএ শরিকদের পাশে নিয়ে। আর এনডিএ-শরিক না হয়েও যুদ্ধ ঘোষণার সেই মঞ্চে নিজের প্রতিনিধিকে পাঠিয়ে জয়ললিতা শক্ত করলেন তাদের হাত।
সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আডবাণীর রথ যখন আজ দিল্লির রামলীলা ময়দানে পৌঁছোয়, সামনে তখন বড়সড় জনসমুদ্র। আর মঞ্চে উপস্থিত সভাপতি গডকড়ী, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ থেকে শুরু করে জেডি(ইউ)-এর শরদ যাদব, শিবসেনার অনন্ত গীতে-সহ এনডিএ-র সব শরিকরাই। অথচ আডবাণী রথযাত্রার ঘোষণা করা করার পর থেকেই তার সাফল্য নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন দলেরই অনেক নেতা। এখন কিন্তু আডবাণীর যাত্রা-পর্বে গড়ে ওঠা ঐক্যকে সামনে রেখেই বিজেপি তথা এনডিএ সর্বাত্মক আক্রমণে যেতে চায় মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে। সংসদের অধিবেশন শুরুর মুখে দুর্নীতির প্রশ্নে কংগ্রেসকে প্রবল চাপে ফেলারও কৌশল নিয়েছেন এনডিএ নেতৃত্ব। গডকড়ীর হাতে লেখা খসড়া পড়ে আডবাণী আজ ঘোষণা করেছেন, সংসদ শুরু হতেই এনডিএ-র সব সাংসদ লোকসভার স্পিকার ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে জানাবেন, বিদেশি ব্যাঙ্কে তাঁদের কোনও অবৈধ সম্পত্তি নেই। |
আডবাণীকে ‘লড়াইয়ের সেনাপতি’ অ্যাখ্যা দিয়ে গডকড়ী বলেন, “বিদেশের ব্যাঙ্কে রাখা পুরো কালো টাকা উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আডবাণীর নেতৃত্বে লড়াই চালিয়ে যাবেন। দুর্নীতি মোকাবিলার প্রশ্নে সনিয়া গাঁধী ও মনমোহন সিংহ যে অবস্থান নিয়েছেন, তার জন্য দেশবাসীর কাছে তাঁদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা যদি জেলের ভিতরে থাকেন, তা হলে একই দোষে দুষ্ট চিদম্বরম বাইরে কেন?” গডকড়ি মতে, আডবাণীজির রথযাত্রা শুধু ঝলক মাত্র। গোটা সিনেমাটা এখনও দেখা বাকি। জেটলি-সুষমারাও একই সুরে বলেন, “নেতৃত্বের সঙ্কটে ভুগছে এই সরকার। প্রধানমন্ত্রী দুর্বল ও অসহায়। এই সরকার বিশ্বাসযোগ্যতাও খুইয়ে ফেলেছে।” সুষমারা জানিয়ে দিয়েছেন, দু’দিন পর থেকে সংসদে শুরু হবে তাঁদের ‘লড়াই’, সেখানে কংগ্রেসকে চার দিক থেকে আক্রমণ করা হবে। অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে ফের রাস্তায় নেমে তাঁরা এই সরকারে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চালাবেন।
ভোট-ঘুষ কাণ্ডে বিজেপি সদস্যদের গ্রেফতারের পরেই আডবাণী এই যাত্রা শুরু করেছিলেন। যাত্রা শেষ হওয়ার আগেই তাঁরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গত কাল গডকড়ী তাঁদের সংবর্ধনা দিয়েছেন। আজ রামলীলাতেও উপস্থিত ছিলেন তাঁরা। তবে এখন আবার নতুন এক অস্বস্তির মুখে বিজেপি। স্পেকট্রাম বণ্টনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রমোদ মহাজনের আমলের তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, হতাশা থেকেই কংগ্রেস এত পুরনো বিষয় খুঁচিয়ে ঘা করার চেষ্টা করছে। দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকরের অবশ্য বক্তব্য, “কংগ্রেসের যা করার করে নিক। যদি এই অভিযোগের বিন্দুমাত্র কোনও ভিত্তি থাকত, তা হলে ইউপিএ সরকার গত সাত বছর চুপ করে বসে থাকত না!”
কিন্তু বিজেপি-র এই প্রবল আত্মবিশ্বাসের কারণ কী? |
দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আডবাণীর যাত্রাই বিজেপি-র মনোবল বাড়াতে অনুঘটকের কাজ করেছে। আরএসএস তাঁকে আর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে চাইছে না, এমন একটা অবস্থায়ও পঁচাশি বছর বয়সী এই নেতা এত পরিশ্রম করার হিম্মত দেখিয়েছেন। কালো টাকা, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জন-আক্রোশকে সংগঠিত করতে পেরেছেন রাজ্যে রাজ্যে। ফলে যাত্রার গোড়ার দিকে যখন তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যাত্রা শেষ হতে হতে সেই সব বিষয় অনেকটা উধাও হয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতা পরিবর্তনের লক্ষ্যেই সকলে একজোট হয়েছে। যে রামলীলা ময়দানে সাম্প্রতিক অতীতে অণ্ণা হজারের সমর্থনে মানুুষের ভিড় দেখা গিয়েছে, আজ ঐক্যবদ্ধ বিজেপি-র সামনে এত লোক জড়ো হয়েছে।”
সংসদীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্ল আজও আডবাণীর যাত্রাকে তাঁর ‘ব্যক্তিগত উচ্চাশা’র কারণে বলে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “যে কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে আডবাণী এখন এত সরব, ছ’বছর ক্ষমতায় থেকে কেন সে বিষয়ে তিনি পদক্ষেপ করেননি? আজ ইউপিএ সরকার এই বিষয়ে তৎপর হলেও অহেতুক অভিযোগ করা হচ্ছে।”
আডবাণীর জবাব, “এনডিএ জমানায় বিদেশি ব্যাঙ্কগুলি তথ্য দিত না। কিন্তু এখন দিচ্ছে। তা-ও সরকার তা প্রকাশ করতে এত ইতস্তত বোধ করছে কেন?”
|