কলকাতায় বস্তিবাসীদের জন্য পাকা বাড়ি তৈরির কাজে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া ১২০ কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত কলকাতা পুরসভা ওই টাকা খরচের কোনও পরিকল্পনাই করতে পারেনি।
চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে রাজ্য কোনও পরিকল্পনা জমা দিতে না পারলে ফেরত চলে যেতে পারে ওই টাকা। এ দিকে, এখন টাকার অভাবে এমনিই কলকাতা পুরসভায় উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তার মধ্যে বস্তি উন্নয়নে দেওয়া কেন্দ্রের টাকা ফেরত চলে গেলে শহরের কয়েক হাজার গরিব ঝুপড়ি ও বস্তিবাসী স্বল্প মূল্যে বাসস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের যুক্তি, “যখন পরিকল্পনা হয়েছিল, সে সময়ের তুলনায় এখন বাড়ি তৈরির খরচ বেড়ে গিয়েছে। কেন্দ্র অতিরিক্ত টাকা না দিলে বা অন্য ব্যবস্থা না নিলে ঝুপড়িবাসীদের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি সম্ভব নয়।” টাকা যাতে ফেরত না যায়, তার জন্য সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়নমন্ত্রী কুমারী শৈলজার কাছে বিকল্প প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে বলে জানান শোভনবাবু।
রাজ্যের প্রাক্তন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী, সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই টাকা খরচ করতে না পারার দায় তৃণমূল পরিচালিত কলকাতা পুরসভার উপরেই চাপিয়েছেন। তাঁর কথায়, “পুরসভা কোনও পরিকল্পনাই তৈরি করতে পারেনি। তা হলে কী ভাবে খরচ করবে?” তিনি বলেন, “যদি খরচ বেড়েও থাকে, তবে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার জন্য রাজ্য কেন কেন্দ্রকে চাপ দিচ্ছে না? দিল্লিতেও তো তৃণমূলের জোট সরকার রয়েছে। নগরোন্নয়ন মন্ত্রকে তৃণমূলের এক মন্ত্রীও (সৌগত রায়) রয়েছেন।” অশোকবাবুর অভিযোগ, “তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার উন্নয়ন গরিব বস্তি ও ঝুপড়িবাসী অভিমুখী নয়। তাই পরিকল্পনা তৈরির কাজেই হাত দেওয়া হয়নি।”
গোটা দেশেই বড় শহরে বস্তি ও ঝুপড়িবাসীদের জন্য স্বল্প মূল্যের পাকা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার। শহরের গরিব মানুষের জন্য ‘বেসিক সার্ভিস’ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত এই পরিকল্পনাকে বলা হচ্ছে ‘ইন্টিগ্রেটেড হাউজিং অ্যান্ড স্লাম ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’। ২০০৭-’০৮ আর্থিক বছরে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাই-সহ দেশের প্রায় প্রত্যেকটি বড় শহরেই শুরু হয়েছে এই প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে সব চেয়ে দ্রুত কাজ হচ্ছে মুম্বই ও দিল্লিতে।
রাজ্য সরকারের সমীক্ষা অনুযায়ী, কলকাতা পুর-এলাকায় তিন লক্ষ ৩৮ হাজার ঝুপড়ি বা বস্তির কুঁড়েঘর রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ বস্তিতে বসবাস করেন। এঁদের জন্য প্রাথমিক ভাবে ১০ হাজার পাকা ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্র সেই পরিকল্পনা অনুমোদন করে। ঠিক হয়, টাকার সিংহভাগ দেবে কেন্দ্র। বাকি টাকার কিছু অংশ রাজ্য দেবে। যাঁরা ‘বেনিফিশিয়ারি’ অর্থাৎ ঘর পাবেন, তাঁদেরও অল্প কিছু টাকা দিতে হবে। এই প্রকল্পেই কেন্দ্রের দেওয়া ১২০ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। এর সঙ্গে রাজ্য সরকারের দেওয়া ৭৪ কোটি টাকাও রয়েছে। যাঁরা ঘর পাবেন, তাঁরাও ৯ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। বস্তিবাসীদের জন্য ফ্ল্যাট তৈরির প্রয়োজনীয় জমি পুরসভার রয়েছে। সুতরাং জমিরও কোনও অসুবিধা নেই।
কলকাতা পুরসভার বস্তি উন্নয়নের দায়িত্বেও আছেন মেয়র শোভনবাবু। তিনি বলেন, “২০০৭-২০০৮ সালে যখন এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তখন একটি ফ্ল্যাটের জন্য দেড় লক্ষ টাকার মতো খরচ ধরা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই খরচ বেড়ে তিন লক্ষ টাকার বেশি হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। এই অতিরিক্ত টাকা দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই। বাধ্য হয়েই বিকল্প পথের সন্ধান করতে হচ্ছে।” কী সেই বিকল্প পথ?
শোভনবাবু জানান, সম্প্রতি কুমারী শৈলজা কলকাতায় এলে তাঁর কাছে গোটা পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়। বলা হয়, কেন্দ্র হয় অতিরিক্ত টাকা দিক, না-হলে দশ হাজারের বদলে পাঁচ হাজার ফ্ল্যাটের অনুমোদন দিক। সে ক্ষেত্রে পুরসভা দ্রুত পরিকল্পনা করতে পারবে। টাকাও ফেরত যাবে না। |