এখানে-ওখানে ফুটবল খেলার আয়োজন করছে পুলিশ। পুজো থেকে টেস্ট ম্যাচ, সব কিছুতেই পুলিশকে দরকার।
আমজনতার ‘বন্ধু’ হয়ে ওঠার কথা বারবার বলা হচ্ছে পুলিশকে।
কিন্তু বাস্তবে পুলিশের সেই জনতার বন্ধু হয়ে ওঠাটা এখনও ‘দূর অস্ত্’ বলেই মনে করেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। প্রধানমন্ত্রীর এক সময়ের নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা দেশের প্রাক্তন গোয়েন্দা-প্রধান নারায়ণন রবিবার কলকাতা পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন। পুলিশের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আজকের পুলিশকে একসঙ্গে অনেক নৌকায় পা রাখতে হচ্ছে। চুরি-ডাকাতির সমস্যা মেটানোর সঙ্গে উগ্রপন্থা ও প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে। বিশেষ জ্ঞানের চর্চা করতে হচ্ছে আবার মাটির সঙ্গে যোগাযোগটাও রাখতে হচ্ছে।”
ব্রিটিশ আমলে কলকাতার প্রথম পুলিশ কমিশনার স্যামুয়েল ওয়াশপের স্মরণে এ বছর থেকেই এই বক্তৃতা-সভার আয়োজন করছেন লালবাজারের কর্তারা। আলিপুরে বডিগার্ড লাইন্সের অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা-সহ পুলিশকর্তাদের উপস্থিতিতে রাজ্যপাল পুলিশকে ব্রিটিশ আমলের ‘দমনমূলক ভাবমূর্তি’ ঝেড়ে ফেলার কথাই মনে করিয়ে দিলেন। রাজ্যপালের কথায়, “পুলিশকে বহু বছর ধরে সাধারণ নাগরিকের ‘বন্ধু’ হয়ে ওঠার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এই প্রত্যাশা পূরণে পুলিশ অনেকটাই পিছিয়ে।” |
অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনারের হাতে স্মারক তুলে দিচ্ছেন রাজ্যপাল। —নিজস্ব চিত্র |
রাজ্যপালের মন্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ মার খেলেও সহানুভূতি পায় না। সবাই ভাবে পুলিশের আরও ভাল কাজ করা উচিত ছিল। কেউ ভাবে না, পুলিশ ভাল কাজ করেছে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতীরা। প্রশ্নোত্তর পর্বে রাজ্যপালের উদ্দেশে প্রশ্ন ছিল, আমজনতার ‘মসৃণ’ জীবনযাত্রা অটুট রেখে কী ভাবে পুলিশের পক্ষে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা সুনিশ্চিত রাখা সম্ভব? আমজনতার অসুবিধা না-করা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দু’টোরই গুরুত্ব স্বীকার করে রাজ্যপাল মন্তব্য করেন, যে-কোনও কাজেই আমজনতার সমর্থন থাকলে পুলিশের কাজ সোজা হয়ে যায়।
আমজনতার কাছে এই ‘বন্ধুসুলভ’ ভাবমূর্তি গড়ে তোলার পাশাপাশি এ যুগের পুলিশের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল। তার মধ্যে ‘বিপজ্জনক’ সব ভাবাদর্শ আশ্রিত জঙ্গিপনা, প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনৈতিক অপরাধ এবং নানা ধরনের সাইবার অপরাধের সঙ্গে লড়াইয়ের কথা তোলেন তিনি। নারায়ণনের বক্তব্য, এ-সব সমস্যার মোকাবিলায় কলকাতা পুলিশের বিশেষ তালিম থাকা জরুরি। শহরও মাওবাদের ‘বিপদসীমা’র বাইরে নয় বলেই মনে করেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ন্যাশনাল পুলিশ মিশনে পুলিশের তালিমের ব্যবস্থা ঢেলে সাজার কথা বললেও এখনও কাঙ্ক্ষিত ‘উন্নতি’ হয়নি। |