অবাধ পতন চলছে সূচকের। সেনসেক্স-নিফ্টির উপর নজর রাখতে ভয় পাচ্ছেন সবাই। অনুকূলে যেন কিছুই নেই। খারাপ খবরের প্রবাহ যেন কমছেই না। প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও খারাপ খবর আসছে গ্রিস, ইতালি, স্পেন থেকে। বিশ্ব সূচককে দুর্বল রাখছে মার্কিন অর্থনীতির পরিসংখ্যানও। দেশের ভিতরের খবরও ভাল নয়। মাথা ঝোঁকাতে রাজি নয় মূল্যবৃদ্ধি। ফলে সুদের হার এখন শীর্ষে। শিল্পোৎপাদন একদম তলানিতে। পশ্চিমের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ায় তার প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে ভারতীয় রফতানি বাণিজ্যে। অন্য দিকে, আমদানির খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে ডলারের দাম ৫১ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায়। ফলে ঘাটতি বেড়েই চলেছে বৈদেশিক বাণিজ্যে। চাপ বাড়ছে সরকারের উপর। লোকসান বাড়ছে তেল আমদানিকারী সংস্থাগুলির। এক দিক সামলাতে গিয়ে অন্য দিকে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। কোনও অর্থমন্ত্রীকে এত জটিল অবস্থা সম্ভবত এর আগে সামলাতে হয়নি।
ভারত এবং চিনের মতো দেশের ভাল দিক হল তার বিপুল জনসংখ্যা, যাকে এক সময় অভিশাপ বলে ভাবা হত। জনসংখ্যা বিশাল হওয়ায়, দেশের মধ্যে পণ্যের চাহিদাও বিরাট। মূল্যবৃদ্ধি এবং সুদের হার বাড়া সত্ত্বেও মানুষের হাতে আছে পর্যাপ্ত টাকা। এই কারণে গাড়ি বিক্রি কমলেও, অনেক দৈনিক ভোগ্যপণ্যের চাহিদা তেমন কমেনি। ফলে এই বাজারেও বিক্রি এবং লাভ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে আইটিসি এবং হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের মতো এফএমসিজি কোম্পানি। বিক্রি বেড়েছে বজাজ অটো এবং হিরো মোটোকর্পেরও। তবে এই চারটি শেয়ার শক্তি ধরে রাখতে পারলেও ধরাশায়ী হয়েছে ছোটবড় প্রায় সব শেয়ারই। ফলে অত্যন্ত আশঙ্কা এবং আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন শেয়ারে লগ্নিকারীরা। প্রায় একই রকম অবস্থা ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড এবং ইউলিপ লগ্নিকারীদের। লগ্নিকারীদের মধ্যে ফুরফুরে মেজাজ এখন শুধুমাত্র তাঁদেরই যাঁদের সিংহভাগ লগ্নি করা আছে সোনা এবং ব্যাঙ্ক আমানতে। শেয়ার বাজার কবে শোধরাবে তার কোনও ইঙ্গিত নেই। যাঁদের পক্ষে শেয়ার ধরে রাখা সম্ভব নয়, তাঁদের এখন বড় সমস্যা। ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, ব্যাঙ্কিং-সহ বড় শিল্পের বহু শেয়ার এখন তলানিতে। তুলনামূলক ভাবে ভাল জায়গায় আছে এফএমসিজি, তথ্যপ্রযুক্তি, মোটর বাইক এবং চায়ের মতো গুটিকতক শিল্প। বাজার যে ভাবে নেমেই চলেছে, তাতে নতুন করে এই বাজারে লগ্নি করতে ভরসা পাচ্ছেন না অনেকেই। সবাই এখন মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদ কমার অপেক্ষায়। সুদের হার আবার কমতে শুরু করলে বাজারে প্রাণ ফিরবে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে সেটা কবে হবে, তার কোনও ইঙ্গিত এখনও কোথাও নেই।
আর্থিক বছরের দুই-তৃতীয়াংশ প্রায় উত্তীর্ণ, কর সাশ্রয়ের কথা ভাবতে শুরু করতে হবে এখন থেকেই। ৮০সি ধারার অধীনে ৫ বছর মেয়াদি ব্যাঙ্ক আমানতে মিলবে করছাড়। এই আমানতে এখন সুদ পাওয়া যাচ্ছে ৯ শতাংশ। লগ্নির ১০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর সাশ্রয় ধরলে এই হারকে বেশ আকর্ষণীয় বলেই মনে হবে।
এনএসসি যাঁরা কিনতে চান, তাঁরা কিছু দিন অপেক্ষা করতে পারেন সুদ বৃদ্ধির জন্য। ৮০সি ধারায় ১ লক্ষ টাকা লগ্নির পরেও যাঁরা আরও কর বাঁচাতে চান, তাঁরা ঝুঁকতে পারেন ৮০সিসিএফ-এর অধীনে ইস্যু করা দীর্ঘমেয়াদি পরিকাঠামো বন্ডের দিকে। এই বন্ডে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত লগ্নি কর ছাড়ের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
বাজারে এখন চালু আছে আইডিএফসি-র পরিকাঠামো বন্ড। প্রতিটি বন্ডের দাম ৫,০০০ টাকা। মেয়াদ ১০ বছর। তবে আগে ভাঙানোর (বাই ব্যাক) সুযোগ পাওয়া যাবে অ্যালটমেন্টের ৫ বছর পর। সুদের হার ৯ শতাংশ। সুদ না নিলে ৫,০০০ টাকার প্রতিটি বন্ড পিছু ৫ বছর বাদে পাওয়া যাবে ৭,৬৯৫ টাকা, অথবা ১০ বছর বাদে ১১,৮৪০ টাকা। ইস্যুটি খোলা থাকবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর পরও বিভিন্ন সংস্থা থেকে আসবে এই ধরনের আরও বন্ড। যাঁদের ৮০সি ধারায় লগ্নি করা এক রকম হয়ে গিয়েছে, তাঁরা এখন থেকেই পরিকাঠামো বন্ডে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত লগ্নির কথা ভাবতে পারেন। |