সাত বছরেও শৌচাগার বসেনি পাঁচপুকুরে
গ্রামে প্রায় ৬০-৬২টি পরিবারের বাস। সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮০ শতাংশ ঘরে শৌচাগার নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে গিয়েছিল ৬-৭ বছর আগেই। কিন্তু একটি বাড়িতেও শৌচাগার নির্মিত হয়নি। সমস্যাটি দুবরাজপুর ব্লকের বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের পাঁচপুকুর গ্রামের বাগদিপাড়া সংলগ্ন এলাকার।
বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের জন্য ২৫০ টাকা এবং এপিএলভুক্ত পরিবার পিছু ৪৪০ টাকা দিয়েও পঞ্চায়েত থেকে শৌচাগারের জন্য প্লাটফর্মগুলি পড়ে রয়েছে। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের উত্তর না উপভোক্তা না পঞ্চায়েত বা ব্লক প্রশাসন কারও কাছেই তার সদুত্তর মেলেনি। তবে প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, শুধু ওই গ্রামে নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবস্থা একই। অবস্থাটা কী রকম? পাঁচপুকুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল প্লাটফর্মগুলি উপভোক্তাদেরক বাড়ির দেওয়া ঠেক দিয়ে দাঁড় করানো রয়েছে। কিংবা সেগুলির উপরে দাঁড়িয়ে চলছে মুখ ধোওয়া বা বাসন মাজা। কেউ কেউ আবার হাঁসমুরগি রাখা ঘরের ছাদ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু শৌচাগার হিসেবে সেগুলি একজনও ব্যবহার করেননি।
ওই গ্রামের বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবার সাধন বাগদি, জয়ন্ত বাগদি, সীমা বাগদি বা রাধারানি বাগদিদের স্পষ্ট জবাব, “যে সময় পঞ্চায়েত জোর করে আমাদের দিয়েছিল সেই সময় দিন প্রতি এক জন শ্রমিক ৭০ টাকা আয় করতেন। এমনিতেই চার দিনের আয়ের টাকায় ইচ্ছে না থাকলেও শৌচাগারগুলি নিতে হয়েছে। তার পরে কেউ একটি বারের জন্য আমাদের বাড়িতে আসেননি। আমরা গরিব মানুষ শৌচাগার নির্মাণের জন্য টাকা পাব কোথায়! তাই এভাবেই পড়ে আছে। শুনেছিলাম বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের জন্য গত খুঁড়ে সেগুলি বসিয়ে দেবে ঠিকাদার।”
শৌচাগারের উপরে চলছে বাসন মাজা। দুবরাজপুর। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
তবে শুধু বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারগুলি উপেক্ষার তালিকায় পড়ে আছে তা নয়। এপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারেও গিয়ে দেখা গেল একই ভাবে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে শৌচাগারগুলি। ওই পরিবারের জ্যোৎস্না ধীবর বলেন, “বছর আটেক আগে সাপের ছোবলে আমার স্বামী মারা গিয়েছেন। টাকা আনতে পঞ্চায়েতে গেলে ৫০০ টাকা কেটে সাড়ে ৯ হাজার টাকা আমাকে দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে সংসার চালাব না শৌচাগার তৈরি করব!” উদয় ধীবরের কথায়, “ঋণের আবেদন করায় পঞ্চায়েতের কাছ থেকে ৪৪০টাকায় ওটা আমাকে নিতে হয়েছে। যেখানে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি সেখানে আবার নতুন করে টাকা খরচ করার সঙ্গতি আমাদের নেই।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬-০৭ সালে সার্বিক স্বাস্থ্যবিধান সর্মসূচির আওতায় ওই শৌচাগার নির্মাণের জন্য প্লাটফর্মগুলি দেওয়া হচ্ছিল তখন সরকারি নির্দেশ ছিল যে ঠিকাদার সেগুলি তৈরি করবেন তিনিই গর্ত খুঁড়ে সেগুলি বসিয়ে দেবেন। কিন্তু এতে অসুবিধার সৃষ্টি হওয়ায় ঠিক হয় বিপিএল পরিবারের যে ব্যক্তির নামে শৌচাগার নেওয়া হবে তিনি ৩০০ টাকা দেবেন। বাকি ২২০০ টাকা সরকার দেবে। তবে বসানোর দায়িত্ব পালন করবেন ওই ঠিকাদার। শৌচাগারের দেওয়াল হবে বাঁশের। তার উপরে থাকবে অ্যাসবেসটস। কিন্তু সেক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় সম্প্রতি বিপিএল উপভোক্তাদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা ও সরকারের কাছ থেকে ৩২০০ টাকা নিয়ে ওই ঠিকাদারই টিন দিয়ে শৌচাগার নির্মাণ করে দেবেন। কিন্তু সেই নির্দেশ কতটা পালন হয়েছে তা নিয়ে সন্দিহান প্রশাসনের কর্তারাই। প্রশাসনের সূত্র অনুযায়ী শুধু দুবরাজপুর ব্লকেই ১৯ হাজার ৫০টি বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের জন্য শৌচাগার নির্মাণের কথা থাকলেও কাগজে কলমে ৬৬৭৪টি শৌচাগার এখনও পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে। দুবরাজপুর ব্লকের এক আধিকারিক জানান, তার মধ্যে কতগুলির অবস্থা পাঁচপুকুর গ্রামের মতো মতো সেটা বলা সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে ওই কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারকে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা নতুন নিয়ম শুরু হয়েছে। সেটা হলনির্মিত শৌচাগারের পাশে উপভোক্তাকে দাঁড় করিয়ে ছবি ও টিপ সই-সহ বিল পেশ করার পরেই টাকা পাবেন ঠিকাদার। দুবরাজপুরের বিডিও গোবিন্দ দত্ত বলেন, “কোনও সময়ই শুধু শৌচাগারের প্লাটফর্মগুলি উপভোক্তাদের বাড়িতে রেখে আসার কথা ছিল না। এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে তৎকালীন যে ব্যবস্থা ছিল সেটা কার্যকর করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.